প্রশ্নঃ মিল ও বেন্থামের উপযােগবাদ ব্যাখ্যা কর।

ভূমিকাঃ নৈতিকতার মাপকাঠি হিসেবে সুখবাদের গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষ সর্বদা সুখ কামনা করে এবং দুঃখকে পরিহার করতে চায়। সুখের বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে বেন্থাম, মিল ও সিজউইক তাদের নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে সুখবাদকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন যেগুলাে উপযােগবাদ নামে পরিচিত।

মিলের উপযােগবাদঃ মিল মনস্তাত্ত্বিক সুখবাদ থেকে তার উপযােগবাদের কথা বলেন। তার মতে, “কোন বস্তুকে কামনা করা এবং তাকে সুখদায়ক হিসেবে পাওয়া, কোনাে বস্তুকে অপছন্দ করা ও তাকে দুঃখদায়ক হিসেবে পাওয়া এগুলাে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং এগুলাে একই মনস্তাত্ত্বিক ঘটনার দুটি অংশ। অন্যভাবে বলা যায়, তারা একই মনস্তাত্ত্বিক ঘটনার দুটি ভিন্ন নামকরণ মাত্র। তার মতানুসারে, মানুষ সব সময় সুখ কামনা করে এবং সুখই মানব কামনার একমাত্র উৎস। সুখ বা শান্তি হলাে মানব ক্রিয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য। তিনি সুখও শান্তিকে একই অর্থে ব্যবহার করেছেন। তিনি শান্তি বলতে সুখের উপস্থিতি ও দুঃখের অনুপস্থিতিকে বুঝিয়েছেন। তিনি নৈতিক সুখবাদকে সমর্থন করে বলেন যে, “আমরা সুখ কামনা করি এবং এতেই প্রমাণিত হয় যে, সুখ কামনার যােগ্য”।

বেন্থামের উপযােগবাদঃ অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক বেন্থাম ও মনস্তাত্ত্বিক সুখবাদ থেকে তার উপযােগবাদকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। তিনি মানব প্রেষণার উপর নির্ভর করে বলেছেন যে, সুখের অন্বেষণ এবং দুঃখকে পরিহার করাই মানব প্রকৃতির একমাত্র উদ্দেশ্য, এই সিদ্ধান্ত থেকে পরে তিনি কতকগুলাে নিয়ন্ত্রণের সাহায্যে আত্মসুখ থেকে পরসুখের কথা বলেছেন। যথা- (১) প্রাকৃতিক বা জাগতিক, (২) রাষ্ট্রীয় যা কখনাে কখনাে বিধিসম্মত বলে বর্ণিত হয়ে থাকে (৩) নৈতিক বা লৌকিক যা প্রায়শ সামাজিক বলে বর্ণিত হয়ে থাকে এবং (৪) ধর্মীয়। তিনি মনে করেন যে, এসকল নিয়ন্ত্রণই মানুষকে তার নিজের সুখ বা স্বার্থ বর্জন করে সমাজের সর্বসাধারণের সুখ বা মঙ্গল চিন্তা করতে বাধ্য করে।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, বেন্থাম ও মিল উভয়ই সংকীর্ণ সুখের কথা বর্জন করে সার্বিক সুখের কথা প্রচার করেছেন। মিল সুখের গুণগত পার্থক্যের কথা স্বীকার করেছেন এবং বেন্থাম সুখের পরিমাণগত পার্থক্যের কথা। স্বীকার করেছেন।

Rate this post