অথবা, এপিকিউরিয়ানবাদ বলতে কী বুঝ?
ভূমিকাঃ এপিকিউরিয়ানবাদ হলাে প্রাচীন রাষ্ট্রদর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ। Plato ও Aristotle-এর বিভিন্ন মতবাদ পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ হলাে এপিকিউরিয়ানবাদ। Plato ও Aristotle উভয়ের ধারণা ছিল উৎকৃষ্ট ও সমৃদ্ধ জীবন লাভ করতে রাষ্ট্রের সদস্য হওয়া আবশ্যক, ব্যক্তি হলাে রাষ্ট্রের অংশ।
এপিকিউরিয়ানবাদঃ এপিকিউরিয়ান মতবাদের প্রবক্তা হলেন দার্শনিক এপিকিউবিয়ান। তিনি খ্রিস্টপূর্ব ৩৪১ অব্দে গ্রিসে জন্মগ্রহণ করেন। এপিকিউবিয়ানবাদ হলাে এমনই এক দার্শনিক মতবাদ যার উদ্দেশ্য হল ব্যক্তির স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন আর এই লক্ষ্যপর্বে পূর্ণভাবে ব্যক্তির জন্য সর্বোচ্চ সুখ ভােগ করা এবং দুঃখকে সর্বোতভাবে পরিহার করা।
এপিকিউরিয়ানবাদের উৎপত্তিঃ এপিকিউরিয়ানবাদের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন এপিকিউরাস। রাষ্ট্রদর্শনে তার মতবাদকে প্রতিষ্ঠা দিতে গিয়ে তিনি যে স্কুলটির গােড়াপত্তন করেন সেটি এপিকিউরিয়ান স্কুল নামে অভিহিত। এপিকিউরিয়ানবাদের উৎপত্তি ঘটে সাইরিনাইসিজম থেকে যা সক্রেটিসের শিষ্য সাইরেনের এরিস্ট পাস প্রথম প্রচার করেন। এ জন্য এপিকিউরিয়ানবাদকে সাইরিনাইসিজমের উত্তরসূরীও বলা যেতে পারে। সাইরিনাইসিজমের উপর ভিত্তি করে এপিকিউরিয়ানবাদ মানবজীবন, সমাজ ও রাষ্ট্র সম্পর্কে এক নতুন ধারণা প্রদান করে। এপিকিউরিয়ানবাদ ঘােষণা করে যে, সর্বাধিক আনন্দ বা সুখ অর্জন করা মানবজীবনের পরম লক্ষ্য।
এপিকিউবিয়ানবাদ নীতিসমূহঃ অন্যান্য মতবাদের ন্যায় এপিকিউবিয়ানবাদেরও কতিপয় নীতি দেখা যায়। পিকিউরিয়ানবাদ মূলত দুটি নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। এ দুটি নীতি নিম্নরূপ—
(১) সুখ অর্জনঃ এপিকিউবিয়ানবাদের প্রথম ভিত্তি হলাে সুখ। এপিকিউবিয়ানবাদীগণ বিশ্বাস করেন যে ব্যক্তির মঙ্গল রাষ্ট্রের মঙ্গল থেকে ভিন্ন। রাষ্ট্রের মূল দায়িত্ব হলাে ব্যক্তির সুখ নিশ্চিত করা।
(২) দুঃখ পরিহারঃ এপিকিউবিয়ানবাদের দ্বিতীয় ভিত্তি হল দুঃখকে পরিহার করা। এপিকিউবিয়ানবাদীগণ মনে করেন যে, দুঃখকে সর্বোতভাবে পরিহার করাই এই মতবাদের লক্ষ্য।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, এপিকিউবিয়ানবাদ তৎকালীন রাষ্ট্র দর্শনে বিশেষ স্বার্থ দখল করে আছে। যদিও এ মতবাদ একটি প্রাচীন মতবাদ, তথাপিও আধুনিক রাষ্ট্র দর্শনে এর গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না। কেননা, এ মতবাদে ব্যক্তিকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।