অথবা, দর্শন পাঠের উপযোগিতা আলােচনা কর।
ভূমিকাঃ মানুষ বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন প্রাণী। তাই সে এসব রহস্য ছিন্ন করেই ক্ষান্ত হয়নি, জীবনের ক্ষেত্রে এর তাৎপর্যকেও আবিষ্কার করেছে। আর এজন্যই দর্শন একটি সর্বাত্মক বিষয়। দর্শন শব্দটি এসেছে সংস্কৃত দৃশ ধাতু থেকে। বাংলা ভাষায় দৃশ ধাতুর অর্থ হলাে দেখা। দৈনন্দিন জীবনে দেখা বলতে আমরা চাক্ষুষ প্রত্যক্ষণকে বুঝি। কিন্তু এখানে দেখা মানে চাক্ষুষ দেখা নয়। দর্শন হচ্ছে জীব ও জগতের স্বরূপ উপলব্ধি।
দর্শনের উপযােগিতা/প্রয়ােজনীয়তা/উপকারিতা/গুরুত্বঃ নিম্নে আমরা এ সম্পর্কে আলােচনা করবঃ
(১) ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে দর্শনঃ মানবসভ্যতার ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, মানুষের স্বাধীন চিন্তার ঊষালগ্ন থেকেই দর্শন তার নিজের ভূমিকা পালন করে আসছে। প্রতিষ্ঠিত কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসকে অস্বীকার করে আইয়ােনায়রাহ প্রথম মানুষের ইচ্ছার স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেন, যদিও আজকের দিনে এর বাস্তব মূল্য কম।
(২) জীবনের জন্য দর্শনঃ যেহেতু জীবন ও জগতের দর্শনের প্রধান কাজ সে কারণে প্রতিটি মানুষই কোনাে না কোনাে অর্থে দার্শনিক। কারণ প্রতিটি মানুষই জীবন ও জগতের কোনাে না কোনাে দিকের পর্যালােচনা করে, মূল্যায়ন করে। তাই মানব জীবনের প্রয়ােজনেই দর্শন চর্চা করতে হয়।
(৩) বিজ্ঞানে দর্শনঃ দর্শন বিজ্ঞানের মৌলিক ধারণাগুলাের মূল্যায়ন করে। এজন্যই বলা হয় যে, বিজ্ঞান আবিষ্কার করে, আর দর্শন তার মূল্যায়ন করে। এটম বােমা আবিষ্কার করা বিজ্ঞানের কাজ। কিন্তু এই এটম বােমা মানব জাতির জন্য আশীর্বাদ না-কি অভিশাপ তার মূল্যায়ন বিজ্ঞান করে না, করে দর্শন।
(৪) আদর্শ রূপায়ণে দর্শনঃ দর্শন কেবল জীবন ও জগতের মূল্যায়নই করে না, সাথে সাথে জীবন পরিচালনার সার্থক আদর্শের সন্ধানও আমাদের প্রদান করে। সত্য, মঙ্গল এবং সুন্দর-মানব জীবনের এই তিনটি পরমাদর্শের সন্ধান আমরা – দর্শন পাঠে জানতে পারি। দর্শনের মূল্যকে অস্বীকার করা পরমাদর্শকে অস্বীকার করারই নামান্তর।
(৫) মনন চর্চার ক্ষেত্রে দর্শনঃ দর্শন মানেই জীবন-জিজ্ঞাসা। জীবন ও জগৎকে ঘিরে যেসব মৌলিক সমস্যা আমাদের সামনে উদিত হয়, কোনােরূপ অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার ছাড়াই যুক্তির কষ্টিপাথরের দর্শন সে সবের সমাধান দেয়ার চেষ্টা করে। এর যৌক্তিক ফলশ্রুতিতে আমাদের বুদ্ধিবৃত্তি শাণিত হয়।
(৬) মানবতাবাদ প্রতিষ্ঠায় দর্শনঃ দর্শন মানুষকে যন্ত্র হিসেবে না দেখে মানুষ হিসেবে দেখার শিক্ষা দান করে। দর্শনের সার্থক চর্চা ও অনুশীলন মানুষকে মানবতাবােধে উদ্বুদ্ধ করতে সরাসরি সাহায্য করে থাকে। দর্শনের শিক্ষা মানুষকে জগতের স্বার্থে না দেখে জগতের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দেখতে অনুপ্রাণিত করে।
পরিশেষঃ পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, দর্শন এমন একটা বিষয় যেটা আমাদের কুসংস্কারমুক্ত হয়ে উদার ও দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে জগৎ-জীবনসহ ব্যবহারিক জীবনের যাবতীয় মৌলিক সমস্যার সমাধান আমাদের সামনে তুলে ধরে।