অথবা, মানবীয় ভূগােল (Human Geography) কাকে বলে?
অথবা, মানবীয় ভূগালের সংজ্ঞা দাও।
ভূমিকাঃ ভূগােল শাস্ত্রের সুদীর্ঘ ইতিহাসের আদি পর্ব থেকে মানবিক ভূগােলের সূচনা লক্ষ করা যায়। প্রাচীন যুগ, মধ্যযুগ, এবং আধুনিক যুগের ভূগােলবিদগণ রাজনীতি, সমাজ, জাতি, স্থান জনসংখ্যা, শহর, জনপদ ও সামাজিক বিবর্তন প্রভৃতি সম্পর্কে অবদান রাখতে গিয়ে মানবীয় ভূগােলের উৎপত্তি ঘটে। মূলত মানবীয় ভূগােল শব্দটি যথেষ্ট পুরাতন। প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের যথেষ্ট পার্থক্য দেখা যায়। তাদের চেহারা, আকৃতি, বেশভূষা, আচার-আচরণ, খাদ্য, বাসস্থান, ভাষা-শিক্ষা, ধর্ম, শাসন ব্যবস্থা, জীবিকা এবং মননশীলতা ভিন্ন ভিন্ন। মােট কথা, জীবন যাপন প্রণালীর মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ ভূগােলকে মানবীয় ভূগােল হিসাবে প্রকাশ করার জন্য যে সব ভূগােলবিদ প্রচেষ্টা চালিয়েছেন তাদের উল্লেখযোগ্য সংজ্ঞাসমূহ নিচে দেওয়া হলঃ
(১) ভূগােলের যে শাখা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের সমাজের রূপ, রীতিনীতি, ধর্মীয় অবস্থান প্রভৃতি নিয়ে আলােচনা করে তাকে মানবীয় ভূগােল বলে।
(২) মানুষের উৎপত্তি ও বিকাশ সম্বন্ধে আলােচনা করে মানবীয় ভূগােল।
(৩) অধ্যাপক হান্টিংটন বলেন, মাটি, পানি ও বায়ুর প্রভাবে উদ্ভিদ, প্রাণী ও মানুষের জীবনে যে পরিবর্তন আসে তা এক স্থানের জীবনযাত্রা থেকে অন্য স্থানের জীবনযাত্রার পার্থক্য নির্দেশ করে তারই ব্যাখ্যা ও আলােচনা মানবীয় ভূগােলের মূল আলােচ্য বিষয়।
(৪) জার্মান ভূগােলবিদ রিটার বলেন, যে শাস্ত্র পৃথিবী ও মানব জাতির পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ণয় করে তা-ই মানবীয় ভূগােল।
(৫) অধ্যাপক ডাডলি ষ্ট্যাম্প বলেন, মানবীয় ভূগােল হচ্ছে পৃথিবীর আর তার অধিবাসীদের সমাজীয় বর্ণনা।
(৬) অধ্যাপক ফেয়ার গ্রিভ বলেন, মানবীয় ভূগােলের কাজ হল, ভাবীনাগরিক বিশ্ব রঙ্গমঞ্জের অবস্থা সম্পর্কে সঠিক ধারণা অর্জনের জন্য শিক্ষা দেয়া, যা পৃথিবীর সব স্থানে যে সব সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যাদি রয়েছে সে সম্পর্কে সুস্থ চিন্তা করতে সাহায্য করা।
(৭) অধ্যাপক ই. এ. ম্যাকী বলেন, প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা মানবীয় ভূগােলের কাজ।
(৮) অধ্যাপক আনস্টিভ বলেন, পৃথিবী ও মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে যে শাস্ত্রে আলােচনা করা হয় তার নাম মানবীয় ভূগােল।
(৯) প্রতিবেশের দিক দিয়ে বিবেচনা করে যে শাস্ত্রে মানবজাতির বিষয়ে আলােচনা থাকে তার নাম মানবীয় ভূগােল।
শেষকথাঃ এক কথায় ভূগােলের যে শাখায় মানুষের ঐতিহাসিক বন্টন ও মিশ্রণ, কৃষ্টি ও সংস্কৃতিক, শরীর বৃত্তীয় নৃতত্ত্ব, জাতিগত বৈশিষ্ট্য, সভ্যতা, রাজনৈতিক এবং পরিসরিক কাঠামাে প্রভৃতি বিষয়বস্তু নিয়ে আলােচনা করে তা হল মানবীয় ভূগােল।