অথবা, দাস প্রথার উদ্ভব ও কারণগুলাে বর্ণনা কর।
ভূমিকাঃ মানব সমাজের ক্রমবিকাশের সাথে সাথে সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে ও ব্যাপক পরিবর্তন হলাে। সমাজে প্রতিষ্ঠিত হল আইন, প্রভুত্ব ও দাসত্বের ব্যবস্থা । মূলত সামন্ত সমাজ থেকেই দাস প্রথার উৎপত্তি। সমাজের গরিব ও দুর্বল লােকদের তারা দাস হিসেবে ব্যবহার করত। গরিব ও দূর্বলকে শক্তিমান ব্যক্তির আদেশের পাত্র হিসিবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকতে হত।
দাসপ্রথাঃ দাসপ্রথা বলতে আমরা বুঝি, সমাজে কোন সম্পদশালী পুরুষের কাছে গরীব ও দূর্বল পক্ষ তার স্বাধীনতা, সন্ত্রম, বিবেক, মানুষ্যত্ব হিতাহিত জ্ঞান বিকিয়ে দেয়া। প্রাচীনকালে এর অর্থ ছিল আট্ট ও কাঠিল। দাস বলতে প্রকৃত অর্থে নিজের জীবনকে অন্যের কাছে বিক্রি করা। সেখানে নিজের ব্যক্তি স্বাধীনতা ছিল না।
দাসপ্রথার উদ্ভবঃ সমাজে দাস প্রথার প্রচলন কে বা কারা করেছিল তার ইতিহাস খুঁজে পাওয়া কষ্টসাধ্য। তবে খ্রীষ্টপূর্ব সপ্তম শতকের এথেনীয় সভ্যতার বিকাশ ঘটে, এখন থেকেই দাসপ্রথা চরম রূপ নেয়।
(১) গ্রীক সভ্যতাঃ মূলত গ্রীক সভ্যতার বিকাশ ঘটে খ্রীষ্টপূর্ব সপ্তম শতকে আর তখন থেকেই দাসপ্রথার সূচনা হয়। তারা সমাজের নিম্ন শ্রেণীর লােকদের দিয়ে গৃহকর্ম, পশুচারণ, কৃষি কাজ করাত।
(২) সামন্ত সমাজঃ সামন্ত সমাজে যখন জমিদারদের মাঝে যুদ্ধ বিগ্রহ হতাে তখন জমিদারগণ দাসদের দিয়ে যুদ্ধ পরিচালনা করতাে। এমনকি সমাজের অপরাধী ব্যক্তিদের দাস হিসেবে বিক্রি করতাে।
(৩) আমেরিকা, এশিয়া ও আফ্রিকাঃ আমেরিকা, এশিয়া ও আফ্রিকা ছিল দাস প্রথার কেন্দ্রস্থল। দাসদের দিয়ে তারা পাথর ব্যবহার করিয়ে নগর পত্তন করত। সমাজের একশ্রেণীর লােক দাস ব্যবসা করত।
(৪) রোম সমাজঃ খ্রীষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে রােমানরা গ্রীস সাম্রাজ্য দখল করে, তখন থেকেই রােমান সমাজে দাস প্রথার উদ্ভব ঘটে। তারাও গ্রীকদের মত দাস বেচাকেনা করত।
ভারতবর্ষে দাস প্রথাঃ ব্রিটিশ শাসনামলে ভারতবর্ষেও দাসপ্রথার উদ্ভব ঘটে। সমাজে নীচু স্তরের মানুষ এই দাসত্বের শৃঙ্খলে বাধা পড়ল। জমিদারগণ দাসদের দিয়ে কঠোর পরিশ্রম করাতাে। তাদের দিয়ে এক স্থান হতে অন্য স্থানে বােঝা বহন করাতাে।
দাসপ্রথার কারণঃ নিম্নে দাসপ্রথার কারণ আলােচনা করা হলাে-
(১) অর্থনৈতিক অসচ্ছলতাঃ প্রাচীন গ্রীক ও রােম সমাজে এমন এক শ্রেণীর মানুষ ছিল তারা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ছিল অসচ্ছল। মূলত তাদের এই অর্থনৈতিক দূর্বলতার সুযােগেই সমাজের উচ্চশ্রেণীর লােকেরা তাদেরকে দাস হিসেবে ব্যবহার করত।
(২) প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠাঃ প্রাচীন গ্রীক সমাজে এক শ্রেণীর লােকেরা তাদের প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠায় দাসপ্রথার উদ্ভব ঘটায়।
(৩) অসচেতনতাঃ সামাজিক অসচেতনতা ও দাসপ্রথার অন্যতম কারণ। প্রাচীন সমাজের অধিকাংশ মানুষই ছিল অসচেতন, তাদের এ অসচেতনাতার সুযােগে সমাজের উচ্চ শ্রেণীর লােক তাদের ওপর প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠা করে।
(৪) শিক্ষার অভাবঃ প্রয়ােজনীয় শিক্ষার অভাবেই প্রাচীন গ্রীকে দাস প্রথার উদ্ভব ঘটে। সমাজের উচ্চবর্ণের লােকেরা শিক্ষা বঞ্চিত লােকদের দাস হিসেবে ব্যবহার করত।
(৫) দারিদ্রতাঃ দারিদ্রতাই দাস প্রথার মূল কারণ। সমাজের দরিদ্র মানুষ তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য নিজের শ্রমকে অন্যের কাছে বিক্রি করত আর এভাবেই প্রাচীন সমাজে দাসপ্রথার উদ্ভব ঘটে।
পরিশেষঃ উপরিউক্ত আলােচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়,প্রাচীন গ্রীসের ইতিহাসে দাসপ্রথা ছিল একটি কলঙ্কজন অধ্যায়। সে সময়ে দাসদের কোনাে সামাজিক মূল্যায়ন ছিল না। তারা প্রভুদের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করত। তাদের কোনাে। ব্যক্তি স্বাধীনতা ছিল না। প্রাচীন গ্রীক সভ্যতার বিকাশে এই দাসপ্রথার বিকাশ ঘটে।