অথবা, বাংলাদেশে পতিতাবৃত্তির জন্য কোন কোন কারণকে তুমি দায়ী করবে?
ভূমিকাঃ বাংলাদেশ অনেকগুলাে সামাজিক সমস্যায় জর্জরিত। পতিতাবৃত্তি তার মধ্যে অন্যতম। মানবসমাজে সবচেয়ে ঘৃণ্য, বর্বর, অমানবিক, জঘন্য ও প্রাচীন বৃত্তি হলাে পতিতাবৃত্তি। পতিতাবৃত্তির পক্ষে ধর্মীয় আদর্শ, সামাজিক মূল্যবােধ ও রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনাে সমর্থন তাে নেই-ই বরং ধর্ম ও সামাজিক মূল্যবােধ তীব্রভাবে এর বিরােধিতা করে থাকে।
বাংলাদেশে পতিতাবৃত্তির কারণঃ বাংলাদেশে পতিতাবৃত্তির উল্লেখযােগ্য কারণগুলাে নিম্নে আলােচনা করা হলাে-
(১) দারিদ্র বা আর্থিক অসচ্ছলতাঃ বাংলাদেশে আর্থিক অসচ্ছলতা বা ব্যাপক দারিদ্র্য পতিতাবৃত্তির অন্যতম কারণ। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে চরম দারিদ্রে জর্জরিত হয়ে ক্ষুধার জ্বালায় অনেক মহিলা ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় পতিতাবৃত্তি গ্রহণ করে। জর্জ বার্নার্ড শ বলেন, এক ধরনের গরীব স্ত্রীলােক আর্থিক কারণে শুধুমাত্র বেঁচে থাকার জৈবিক তাগিদে পতিতাবৃত্তি গ্রহণ করে।
(২) বংশানুক্রমঃ বাংলাদেশে বংশানুক্রমেও পতিতাবৃত্তি সম্প্রসারিত হয়েছে। সাধারণত পতিতার ঘরে জন্ম লাভ করা কোনাে মেয়ে এদেশে স্বাভাবিক জীবনের স্বীকৃতি পায় না, ফলে নিরূপায় হয়ে সে পতিতাবৃত্তির পথ বেছে নেয়।
(৩) বিবাহ বিচ্ছেদঃ আমাদের দেশে অনেক সময় স্বামী-স্ত্রীর কলহের কারণে অথবা অন্য কোনাে কারণে বিবাহ-বিচ্ছেদ হলে সে মহিলার আর্থিক অসচ্ছলতাসহ বিভিন্ন কারণে সহজে অন্য কোথাও বিবাহ হয় না বা হলেও অনেক দেরি হয়। ফলে জৈবিক ও আর্থিক কারণে অনেকে পতিতাবৃত্তি গ্রহণ করে।
(৪) বৈধব্যঃ অনেক মহিলার অল্প বয়সে স্বামী মারা যায়, এরপর অন্য কোথাও বিবাহ হতে তাদের অনেক ঝামেলার সৃষ্টি হয়। যার ফলে আর্থিক সংকট ও জৈবিক তাড়নায় সে পতিতাবৃত্তির দিকে পা বাড়ায়।
(৫) শিল্পায়ণ ও শহরায়ণঃ শিল্পায়ণ ও শহরায়ণ স্বামী-স্ত্রীর এক সাথে বসবাস করার সুযােগ ব্যাহত করে। বহুলােক কর্মসংস্থানের জন্য শহরে স্ত্রী ছাড়া অবস্থান করে। ফলে নিম্ন আয়ের লােকেরা যৌনক্ষুধা মিটাতে পতিতাদের সংস্পর্শে আসে।
(৬) নারী নির্যাতনঃ বাংলাদেশের নারীসমাজ বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। অনেক সময় অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে নিরুপায় মহিলা পতিতালয়ে গমন করে।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, পতিতাবৃত্তি জনস্বাস্থ্য এবং সামাজিক মূল্যবােধের প্রতি চরম হুমকিস্বরূপ। এ বৃত্তি মানুষের নৈতিক চরিত্রকে ধ্বংসের অতল গহ্বরে নিপতিত করে। তাই সমাজের অস্তিত্বের স্বার্থে পতিতাবৃত্তিকে অবশ্যই নিবারণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে যথাযথ কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।