অথবা, নবপােলীয় যুগের উন্নয়নসহ বিশ্লেষণ কর।
ভূমিকাঃ নবােপলীয় যুগের বা Neolithic age > Neo> নব> নতুন, Lithas> উপল> পাথরকে সরল অর্থে বলা যায় নতুন পাথরের যুগ। জীবনধারণের প্রয়ােজনে এ সময় হাতিয়ারের ব্যাপক বিবর্তন ঘটে। পাশাপাশি নতুন, নতুন উদ্ভাবন ঘটতে থাকে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়। নবােপলীয় সংস্কৃতিকে সাধারণভাবে চিহ্নিত করা যায় কৃষির উদ্ভাবন, জীবজন্তুকে গৃহপালিত করে তােলা, মৃৎপাত্র তৈরি এবং অধিক কার্যকর মসৃণ অস্ত্র তৈরির মধ্য দিয়ে।
নবপােলীয় যুগের উন্নয়নসমূহঃ নবােপলীয় যুগের উন্নয়নসমূহ নিম্নে আলােচনা করা হলাে-
(১) কৃষিঃ নবােপলীয় যুগের গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন হলাে কৃষি। কৃষি আবিষ্কারকে বলা চলে মানবসভ্যতার অগ্রগতির ধারাবাহিকতায় একটি বৈপ্লবিক পদক্ষেপ। জীবনধারণের জন্য খাদ্য সংগ্রহকারী মানবসমাজ রূপান্তরিত হলাে, খাদ্য উৎপাদনকারী সমাজে ফসলের জন্য নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতাে বলে ধীরে ধীরে মানুষের যাযাবরবৃত্তির অবসান ঘটতে থাকে।
(২) স্থায়ী আবাস নির্মাণঃ কৃষির আবিষ্কারের পর নবােপলীয় মানুষের মধ্যে বন্য পশুর ভীতি অনেকটা কমে যায়। তারা এ যুগের শেষদিকে আবাসগৃহ তৈরিতে মনােযােগ দেয়। এ সময় গুহার গুরুত্ব কমে আসে। মানুষ তাদের আবাদি জমির পাশে ঘাস, পাতা, গাছ, কাঠ ইত্যাদি দিয়ে কুটির বানিয়ে স্থায়ী জীবন শুরু করে দেয়।
(৩) পশুপালনঃ কৃষির পাশাপাশি নবােপলীয় যুগের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন ছিল পশুপালন পদ্ধতির উদ্ভাবন। পশুপালন সম্পর্কে আদি মানুষের ধারণা কিভাবে সৃষ্টি হয়েছিল সে বিষয়ে কিছু বক্তব্য পাওয়া যায়। যেমনঃ শিকারি মানুষ পর্যাপ্ত শিকার পেলে অনেক সময় উদ্বৃত্ত পশু হত্যা না করে পরবর্তী সময়ের জন্য রেখে দিত। দিনে দিনে এ পশুগুলাে গৃহপালিত হয়ে পড়তাে।
(৪) হাতিয়ারের উন্নয়নঃ নবােপলীয় যুগে মানুষের দক্ষতার গুরুত্বপূর্ণ বিকাশ ঘটেছিল তার হাতিয়ারের উন্নয়নে। হাতিয়ারের পরিবর্তনকে সামনে রেখেই এ যুগের নামভূমিকা চিহ্নিত হয়েছে। এ যুগের মানুষ তাদের হাতিয়ারকে অধিকতর কার্যকর ও ফলপ্রসূ করার জন্য বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটিয়েছে।
(৫) আগুনের ব্যবহারঃ পুরােপলীয় যুগে মানুষ আগুন সম্পর্কে ধারণা পেয়েছিল। আগুন সংগ্রহ করে কখনাে কখনাে কাজেও লাগিয়েছিল। কিন্তু নিজের বুদ্ধিমত্তাকে প্রয়ােগ করে আগুন জ্বালানাের পদ্ধতি এবং আগুনের বিস্তৃত ব্যবহার নবােপলীয় যুগেরই ঘটনা। এ যুগের মানুষ অস্ত্র তৈরি করতে গিয়ে পাথর ভাঙার মধ্য দিয়ে প্রথম আগুন জ্বালানাের কায়দা আবিষ্কার করে।
(৬) চাকার আবিষ্কারঃ সভ্যতার অগ্রগতিতে আধুনিককাল পর্যন্ত চাকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। নবােপলীয় মানুষের জীবনে চলার আবিষ্কার বিরাট পরিবর্তনের সূচনা করে।
পরিশেষঃ পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, মানবসভ্যতা বিকাশে নব্য প্রস্তর বা নবােপলীয় যুগের মানুষ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এ যুগের বেশ গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার মানবসভ্যতাকে অনেকখানি এগিয়ে দেয়। বিশেষ করে কৃষিতে উদ্বৃত্ত ফসল ফলায় মানুষ হস্তশিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের দিকে এগিয়ে যায়। নব্যপ্রস্তর যুগের এসব অবদানের পরিপ্রেক্ষিতে গর্ডন চাইল্ড এ যুগকে ‘নবপােলীয় বিপ্লব’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।