প্রশ্নঃ শুকদেবপুরের বর্ণনা দাও।
অথবা, শুকদেবপুরের মানুষগুলাের পরিচয় দাও।
অথবা, “এখানে ঘরে ঘরে জাল যেমন আছে তেমনি হালও আছে।”- কোন স্থান সম্পর্কে এবং কেন এমন বলা হয়েছে?
উত্তরঃ অদ্বৈত মল্লবর্মণের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ উপন্যাসের তথ্যমতে কিশাের, সুবল ও তিলকচাঁদ উজানিনগরের শুকদেবপুর গ্রামের খলায় মাছ ধরার জন্য উপস্থিত হয়। কিশােরদের সে শুকদেবপুরে মাছ ধরার বর্ণনাসূত্রে গ্রামের এবং মানুষের বর্ণনা উপস্থাপিত হয়েছে।
বাশিরাম মােড়লের ঘাটে যখন নৌকা পৌছায় তখন প্রায় সন্ধ্যা। মােড়ল খুব প্রতাপশালী লােক। নদীতে পাঁচ মাইলের মধ্যে তার শাসন চলে। এখানে মাছ ধরতে গেলে তার অনুমতির প্রয়ােজন হয়। পরদিন সকালে মােড়লের বাড়ি হতে নিমন্ত্রণ আসে দুপুরের খাবারের জন্য। কিশাের লক্ষ করে শুকদেবপুরের লােকগুলাে স্বাস্থ্যবান- নারী, পুরুষ, ছেলে বুড়ি- সকলেই গায়ের জোরের জোয়ারে বয়ে চলে। সকলেরই গায়ের রং কালাে। তবে হালকা রংচটা কালাে নয়। তেলতেলে পাথরের সুগঠিত মূর্তির মতাে কালাে। কিশাের আরেকটি বিষয়ও লক্ষ করে এখানে ঘরে ঘরে জাল যেমন আছে তেমনি হালও আছে- অর্থাৎ তারা কৃষিকাজও করে আবার.মাছও ধরে। একদিকে গাবের মটকি, জালের পুঁটলি, দড়াদড়ি, কডি-ডােলা আরেকদিকে লাঙল-জোয়াল, কাচি-নিড়ানি, মই। তাদের বাড়িঘর একদিকে যেমন জালের সরঞ্জামের ভরে যায়। অন্যদিকে আবার গরু-বাছুরেও ভরে যায়। একহাতে তারা খেতে হাল চালায়। অন্যদিকে নদীতে মাছ ধরার জাল চালায়। তাছাড়া শুকদেবপুরে অনেক গাছপালা-ফুল-ফলাদি আছে। অনেক বাড়িতে তুলসীতলার পাশে ফুলের গাছের সমারােহ দেখা যায়। এই গ্রামেই এক কুমারী মেয়ের প্রেমে পড়ে কিশাের।
সুতরাং সার্বিক বিচারে বলা যায়- শুকদেবপুরের মানুষেরা একই সাথে মালাে এবং কৃষক। তাই এ গ্রামবাসী সহজেই অভাবের মুখােমুখি হয় না। কারণ মৌসুমে তারা মাছও ধরে- আবার খেতে ফসলও ফলায়।