অথবা, লিখিত সংবিধানের উপযােগিতা উল্লেখ কর।
ভূমিকাঃ একটি রাষ্ট্রের শাসনকার্য পরিচালনার মৌলিক নিয়মকানুনগুলাে যখন এক বা একাধিক দলিলে লিপিবদ্ধ থাকে, তখন তাকে লিখিত সংবিধান বলে। লিখিত সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার অত্যাবশ্যক মূলনীতিগুলাে। স্পষ্টভাবে লিখিত থাকে। অধ্যাপক গেটেল বলেছেন, যখন কোন দলিলে সরকারি প্রশাসন ব্যবস্থার সকল মৌলিক নীতিগুলাে অন্তর্ভুক্ত থাকে, তখন তাকে লিখিত সংবিধান বলে।
লিখিত সংবিধানের শ্রেষ্ঠত্বঃ সংবিধান লিখিত হলে সাথে সাথে কয়েকটি সংশ্লিষ্ট বিষয় জড়িত হয়ে থাকে, ফলে সংবিধান অধিকতর কার্যকরী হয়ে উঠে।
প্রথমত, লিখিত সংবিধানের সাথে এক প্রকার আনুষ্ঠানিকতা জড়িত থাকে এবং সাধারণ আইন কানুন থেকে তার পার্থক্য দৃষ্ট হয়। সাংবিধানিক আইন সাধারণ আইনের মতাে আইন প্রণয়নের সাধারণ উপায়ে প্রণীত হয় না অথবা পরিবর্তীতও হয় না।
দ্বিতীয়ত, লিখিত সংবিধানের মৌলিক আইনগুলাে ভবিষ্যতের জন্য নির্দিষ্ট পন্থা অনুসরণে সহায়ক হয়। আইন পরিষদ যদি কোন সংবিধানে সন্নিবেশিত মৌলিক আইনের সাথে সামঞ্জস্যহীন কোন আইন প্রণয়ন করে, তাহলে উক্ত আইন কষ্টিপাথরে যাচাই করার পর প্রয়ােজন হলে বিচারালয় তা বাতিল বলে ঘােষণা করতে পারে। ফলে শাসনতান্ত্রিক পন্থায় শাসনকার্য পরিচালনার পথ রচনা হয়ে থাকে লিখিত সংবিধানের মাধ্যমে।
তৃতীয়ত, সংবিধান লিপিবদ্ধ করা হলে তা সাধারণত দুষ্পরিবর্তনীয় হয়ে উঠে এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের খেয়াল খুশির ঊর্ধ্বে থাকে তা জনগণের অধিকার রক্ষায় সহায়ক হয়। সংবিধান বিশারদ বিচারক জেমসন বলে, লিখিত এবং অলিখিত সংবিধানের মধ্যে কোনটি শ্রেষ্ঠ তা বলা মুশকিল। তবে বর্তমানে একমাত্র ইংল্যান্ড ছাড়া অন্য কোন রাষ্ট্রে অলিখিত সংবিধান দেখা যায় না। সুতরাং ঐতিহাসিক বিবর্তনের ধারা থেকে আমরা লিখিত সংবিধানকেই শ্রেষ্ঠ বলব।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, লিখিত সংবিধানের কিছু দোষত্রুটি থাকলেও সার্বিকভাবে দেশের শাসন পরিচালনায় লিখিত সংবিধান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। লিখিত সংবিধানের যেসব গুণাবলি লক্ষ্য করা যায় তা থেকে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, একটি রাষ্ট্রের জন্য লিখিত সংবিধান অত্যাবশ্যক।