অথবা, মেকিয়াভেলিবাদ কী?
ভূমিকাঃ ম্যাকিয়াভেলিবাদ শব্দের নির্গলিত অর্থ হচ্ছে শঠতা, কপটতা, প্রতারণা, ধােকাবাজী ও দ্বিমুখী নীতি। ম্যাকিয়াভেলি তার শাসককে ভালােবাসা, প্রেম-প্রীতি, দয়া-দাক্ষিণ্য সব কিছু জুলাঞ্জলি দিয়ে প্রতারণা, কপটতা ও নিষ্ঠুরতার মাধ্যমে মানুষের অন্তরে ভীতির উদ্রেক করার যে নীতি শিক্ষা দিয়েছেন তাই ইতিহাসে ম্যাকিয়াভেলিবাদ নামে পরিচিত।
মূল বক্তব্যঃ তিনি নৈতিকতার ব্যাপারে দু’রকম মানের কথা বলেছেন। ধর্ম ও নৈতিকতার প্রতি তার এই মনােভাবের কারণ ছিল নিম্নরূপঃ
প্রথমতঃ প্রথম কারণ হলাে এই যে, তিনি রাজনীতিকে ধর্ম ও নীতি শাস্ত্রের বহিঃগ্রাস থেকে মুক্ত করে তাকে একটি স্বাধীন ও স্বনির্ভর বিজ্ঞানে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। তার এই ভঙ্গি ছিল বাস্তবধর্মী। তার কাছে অবাস্তব আদর্শ বা কল্পনার কোনাে মূল্য ছিল না। একজন বাস্তবচিন্তাবিদ হিসেবে রাষ্ট্রকে তিনি বাস্তব প্রেক্ষিতে চিহ্নিত করতে চেয়েছেন। ধর্ম ও নৈতিকতা সম্পর্কে এরূপ মনােভাব তারই আবশ্যিক ফলশ্রুতি।
দ্বিতীয়তঃ একজন সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষক হিসেবে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, মানুষ যেহেতু স্বভাবতই স্বার্থপর ও প্রতারক সুতরাং তাকে নৈতিক বা ধর্মীয় অনুশাসনের মাধ্যমে শাসন করা অরণ্য রােদনের শামিল। চোরে না শােনে ধর্মের কাহিনী। চোরকে যদি কাবু করতে হয় তবে, জেল-জুলুম নীতির ওপর ভিত্তি করেই তা করতে হয়। ধর্ম বা নীতিবাক্যের ওপর ভিত্তি করে নয়।
তৃতীয়তঃ ম্যাকিয়াভেলির ইতালিতে নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবােধের আদৌ কোনাে স্থান ছিল না। মূল্যবােধের রাজ্যে তখন চলছিল এক চরম সংকট। একজন বাস্তব চিন্তাবিদ হিসাবে তিনি ইতালির সে অবস্থাকে তার চিন্তাধারায় প্রতিফলিত করতে চেয়েছিলেন। এরূপ পরিস্থিতিতে একজন রাষ্ট্র নায়কের পক্ষে যথার্থ করণীয় কি সে কথাটিই তিনি রংতুলি না ছড়িয়ে অত্যন্ত সাদাসিদেভাবে বলতে চেয়েছেন।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, ম্যাকিয়াভেলিবাদ ছিল মধ্যযুগের একটি গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ। তার এই মতবাদের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলাে ধর্ম ও নৈতিকতা। তার এই ধর্ম ও নৈতিকতাকে রাজনীতি থেকে পৃথক করা ম্যাকিয়াভেলির পূর্বে অপর কোন দার্শনিকের পক্ষে সম্ভব হয়নি।