অথবা, রাষ্ট্র ও সংঘের মধ্যে কোন পার্থক্য আছে কী?
ভূমিকাঃ বর্তমান সভ্য জগতে রাষ্ট্র একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সংগঠন। রাষ্ট্র নামক এ রাজনৈতিক সংগঠনটি সভ্যতার বহু পর্যায় অতিক্রম করে আধুনিক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। এ সংগঠনের মধ্যেই আমরা বসবাস করি, লালিত-পালিত হই এবং মৃত্যুবরণ করি।
রাষ্ট্র ও সংঘের পার্থক্যঃ মানুষ রাষ্ট্রে বসবাস করে। রাষ্ট্র মানুষের একটি সংঘও বটে। তথাপিও রাষ্ট্র ও সংঘের মধ্যে বেশ পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। নিম্নে পার্থক্যসমূহ আলােচনা করা হলাে-
(১) ভৌগােলিক দিক দিয়েঃ একটি নির্দিষ্ট ভূ-খন্ড ও নির্দিষ্ট সীমারেখা নিয়ে রাষ্ট্র গঠিত। কিন্তু অন্যান্য সংঘের এ ধরনের নির্দিষ্ট কোনাে ভূ-খন্ড বা ভৌগােলিক সীমারেখা থাকে না। সংঘ রাষ্ট্রাভ্যন্তরে ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্র অপেক্ষা ব্যাপক তথা বিশ্বব্যাপীও হতে পারে।
(২) আইন প্রণয়নের দিক দিয়েঃ রাষ্ট্রাভ্যন্তরীণ জনগণের ওপর রাষ্ট্র চরম শক্তি অনুযায়ী আইন প্রণয়ন ও প্রয়ােগ করতে পারে। তবে সে আইন সংবিধান অনুযায়ী। পক্ষান্তরে, অন্যান্য সংঘ কোনাে আইন প্রণয়ন বা আইন প্রয়ােগ বা চরম শক্তি কিছুই প্রয়ােগ করতে পারে না। রাষ্ট্রের প্রণীত আইন অনুযায়ীই সংঘ চলতে হয়।
(৩) ক্ষমতার দিক দিয়েঃ রাষ্ট্র সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। সুতরাং অধিবাসীদের ওপর রাষ্ট্র যে কোনাে আইন, সিদ্ধান্ত বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে সক্ষম। অপরদিকে সংঘ সার্বভৌম নয়। তাই অন্যায়ের কারণে সংঘ কোনাে সদস্যের সদস্যপদ বাতিল ব্যতীত অন্যকোনাে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে না।
(৪) স্থায়িত্বের দিক দিয়েঃ রাষ্ট্র সব সময়ই স্থায়ী। রাষ্ট্রের পরিবর্তন হতে পারে কিন্তু পতন বা রিলােপ সম্ভবপর নয়। অপরদিকে সংঘ একটি অস্থায়ী প্রতিষ্ঠান। উদ্দেশ্য সফল হলে অথবা উদ্দেশ্য বিফল হয়ে গেলেসংঘের বিলুপ্তি ঘটতে পারে।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, রাষ্ট্র ও সংঘের মধ্যে কোনাে সম্পর্ক বা মিল নেই তা একেবারে নিশ্চিত বলা যায় না। এদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। রাষ্ট্র সার্বভৌম ক্ষমতাসম্পন্ন একটি প্রতিষ্ঠান বলে সংঘের ওপর কর্তৃত্ব রাখে। আবার সংঘও রাষ্ট্রের ওপর বিভিন্ন প্রভাব খাটিয়ে থাকে। এরা পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত।