অথবা, বাংলাদেশে নৃবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব বর্ণনা কর।
ভূমিকাঃ সামাজিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার মধ্যে নৃবিজ্ঞান অন্যতম। নৃবিজ্ঞানকে মানুষের সামগ্রিক বা পূর্ণাঙ্গ অধ্যয়ন বলা হয়। এজন্য নৃবিজ্ঞান মানুষকে একদিকে যেমন জীব হিসেবে অধ্যয়ন করে, অন্যদিকে তেমনি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীব হিসেবে তার সমাজ ও সংস্কৃতিকে অধ্যয়ন করে।
বাংলাদেশে নৃবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্বঃ আধুনিক বিশ্বে বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বে নৃবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নৃবিজ্ঞান পাঠের প্রয়ােজনীয়তা তুলে ধরা হলাে-
(১) মানুষ সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান দান করেঃ নৃবিজ্ঞান পাঠের অন্যতম সুবিধা হল এই যে, এটা মানুষ সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান দান করে। অন্যান্য বিজ্ঞান মানুষের এক একটি বিশেষ দিকের ওপর জোর দেয় মাত্র। অথচ নৃবিজ্ঞান মানুষের সামগ্রিক পাঠ পর্যালােচনা করে।
(২) সমাজ বিশ্লেষণ ও সমাজের সমস্যাঃ আমাদের সমাজ বিশ্লেষণ ও সমাজের সমস্যাসমূহ যেমন জনসংখ্যা বিস্ফোরণ, খাদ্য উৎপাদন, কৃষিকার্যে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়ােগ, বিভিন্ন রােগ নির্মূলকরণ, নিরক্ষরতা দূরীকরণ ইত্যাদিতে সাফল্য লাভ করতে হলে নৃবিজ্ঞান পাঠ ও গবেষণা অপরিহার্য।
(৩) প্রশাসনিক কাজকর্মে নৃবিজ্ঞানের অবদানঃ নৃবিজ্ঞানী কোনাে সমাজ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে যে জ্ঞানার্জন করেন তাতে তার পক্ষে গবেষণাধীন সমাজের প্রশাসনিক ব্যবস্থার উন্নতি আনার জন্য কার্যকরী সুপারিশ করা সহজ হয়।
(৪) সমাজকাঠামাে অধ্যয়নে নৃবিজ্ঞানঃ সামাজিক নৃবিজ্ঞানের আলােচ্য বিষয় হচ্ছে সমাজ কাঠামাে। কি আদিম, কি আধুনিক সব সমাজের বাস্তব কাঠামাে বিশ্লেষণে নৃবিজ্ঞানী অধিক যত্নশীল।
(৫) দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা জানতে নৃবিজ্ঞানের ভূমিকাঃ নৃবিজ্ঞান উৎপাদন, বণ্টন, ভােগ, সঞ্চয় এবং লগ্নি প্রভৃতি সম্পর্কে গবেষণা করে। মানুষ কিভাবে খাদ্য সংগ্রহ করে, কিভাবে খাদ্য গ্রহণ করে, কিভাবে চাষাবাদ করে তা সম্পর্কে নৃবিজ্ঞান আলােচনা করে।
(৬) সংস্কৃতি ও ব্যক্তিত্ব জানতে নৃবিজ্ঞানঃ সমাজের সংস্কৃতি কিভাবে ব্যক্তিকে প্রভাবিত করে তা নিয়ে নৃবিজ্ঞান আলােচনা করে থাকে।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, নৃবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে বাংলাদেশ তথা বাঙালিদের বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা, সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকলাপ, উপজাতীয় সমস্যা, বাংলা ভাষার উৎপত্তি ইত্যাদি সম্পর্কে জানা সম্ভব। একথা বলা যায় যে, বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে জানতে হলে প্রত্যেকের নৃবিজ্ঞান পাঠের প্রয়ােজনীয়তা রয়েছে।