অথবা, নাস্তিকবাদ কী?
ভূমিকাঃ জগতে একমাত্র স্রষ্টা হিসাবে ঈশ্বরের ধারণা নিয়ে আলােচনা দর্শনে একটি ব্যাপক অঞ্চল জুড়ে আছে। ঈশ্বর সম্পর্কে ধর্ম ও দর্শন উভয় দিক থেকে মানুষের মনে বিভিন্ন ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। ধর্মের দিক থেকে ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রধানত দু’টি মতবাদ আছে, যথাঃ (১) আস্তিকবাদ বা ঈশ্বরবাদ এবং (২) নাস্তিকবাদ বা নাস্তিকতাবাদ। আস্তিক ও নাস্তিকের ধারণা আবার অনেক রকমের হয়ে থাকে। তবে আস্তিকবাদ ঈশ্বরের অস্তিত্বকে বিশ্বাস ও স্বীকার করে এবং নাস্তিকতাবাদ ঈশ্বরের অস্তিত্বকে অস্বীকার বা অবিশ্বাস করে। নাস্তিকবাদ অনুসারে জড় বা গতি হতে বিশ্বজগত উদ্ভূত হয়েছে। এ জগত লীলার পশ্চাতে কোনাে আধ্যাত্মিক শক্তি নেই।
নাস্তিকতাবাদঃ যে মতবাদ অনুসারে জগতের আদি সত্তা ঈশ্বর বলে কিছু নেই অর্থাৎ যে মতবাদ ঈশ্বরের অস্তিত্বকে অস্বীকার ও অবিশ্বাস করে, তাকে নাস্তিকতাবাদ বলে। এ মতে অনুসারীদেরকে নাস্তিক বলা হয়। নাস্তিকতাবাদের মতে, এ বিশ্বজগৎ জড় বা গতি থেকে উদ্ভূত হয়েছে এবং ক্রম পরিবর্তন বা বিবর্তনের ধারায় বর্তমান রূপলাভ করেছে। তাদের মতে, এ জগতের সৃষ্টি ও পরিচলানাতে বুদ্ধিমান আদি কারণের কোনাে অস্তিত্ব নেই। তাই নাস্তিকতাবাদ জড়বাদেরই একটা রূপ মাত্র। নাস্তিকদের মতে, ঈশ্বরের অস্তিত্বকে আমরা প্রত্যক্ষ করতে বা সুষ্ঠুভাবে প্রমাণ করতে পারি না বলে ঈশ্বরের অস্তিত্বকে স্বীকার করা যায় না। এদিক থেকে নাস্তিকতাবাদ অস্তিকতাবাদের বিরুদ্ধ মতবাদ। দর্শনের ইতিহাস আলােচনা করলে আমরা দেখতে পাই নাস্তিকেরা কয়েকটি যুক্তির সাহায্যে ঈশ্বরের অস্তিত্বকে অস্বীকার করার প্রয়াস পায়। এগুলাে নিম্নরূপ-
(১) সীমাবদ্ধ জ্ঞানঃ নাস্তিকেরা বলে যে, মানুষ প্রমাণ ছাড়া কোনাে কিছুর অস্তিত্ব স্বীকার করে না। ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণের কোনাে উপায় নেই। সুতরাং ঈশ্বর নেই। ঈশ্বরকে অতীন্দ্রিয় সত্তা বলা হয়। আমাদের জ্ঞান ইন্দ্রিয় জগতেই সীমাবদ্ধ। তাই ঈশ্বরকে জানা যায় না। আর আমরা যা জানি না, তার অস্তিত্ব স্বীকার করতে পারি না। অতএব ঈশ্বর নেই।
(২) জড়ের প্রাধান্যঃ নাস্তিকদের মতে, জগত হচ্ছে জড় ও জড় শক্তির খেলা, জগতের কোনাে উদ্দেশ্য। বা আদর্শের অস্তিত্ব নেই। বিশ্ব প্রক্রিয়া যান্ত্রিকভাবেই চলে। সুতরাং বিশ্ব প্রক্রিয়ায় কোনাে উদ্দেশ্য কারণের বা ঈশ্বরের স্থান নেই।
(৩) আধ্যাত্মিকতা অবাস্তবঃ যেহেতু এ জগত জড়শক্তির লীলা। এ জগত পরিকল্পনার পশ্চাতে কোনাে আধ্যাত্মিক পরিকল্পনা নেই। পুরােহিত ও স্বার্থবাদী বুদ্ধিমান লােকেরা স্বার্থসিদ্ধির জন্য খােদা প্রকল্পের প্রচার করেন। বস্তুত ঈশ্বর নামে কোনাে আধ্যাত্মিক সত্তা নেই।
(৪) ঈশ্বরের অস্তিত্ব বিশ্বাস নির্ভরঃ ঈশ্বর বা খােদ ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষণযােগ্য নয়, আবার যুক্তি-প্রমাণে প্রমাণযােগ্য নয়। বরং ঈশ্বর এক অজ্ঞাত ও অজ্ঞেয় সত্তা। এমন সত্তায় বিশ্বাস স্থাপন করা কল্পনা বিলাসমাত্র। এটি প্রতারক আধ্যাত্মবাদী ও ভণ্ড পুরােহিতদের কাল্পনিক সৃষ্টি।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, নাস্তিকতাবাদ ঈশ্বরের অস্তিত্বকে বিশ্বাস করে না ঠিকই কিন্তু ঈশ্বরের অস্তিত যে নেই এর ওপরও কোনাে যথার্থ শক্ত যুক্তিও দিতে পারে না। তা ছাড়া নাস্তিকতাবাদ যেহেতু জড়বাদের একটা রূপমাত্র সেহেতু জড়বাদের মত এ মতবাদও বিভিন্নভাবে ত্রুটিপূর্ণ।