একই ধরনের জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত একটি জনসমষ্টি বা জনসমাজ কি কি শক্তি বা উপাদানের প্রভাবে কালক্রমে জাতীয় জনসমাজে পরিণত হয় তা একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন উপাদানের কথা বলেছেন। উপাদানগুলির আপেক্ষিক গুরুত্ব নিয়ে তাঁদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তবে আধুনিক লেখকদের মতানুসারে কোন নির্দিষ্ট উপাদানকে প্রধান স্থান দেওয়ার ব্যাপারে ঐতিহাসিক বা সামাজিক যুক্তি নেই। ল্যাস্কির মতানুসারে জাতীয় জনসমাজের উৎস বিশেষ কোন উপাদানের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই সবরকম উপাদানের সমাবেশকেই জাতীয় জনসমাজ গঠনে কার্যকরী বলে মনে করা হয়। তবে এই সব উপাদানের একটি এমনকি সবকটির অনুপস্থিতিতেও জাতীয় জনসমাজ গড়ে উঠতে পারে।
জাতীয় জনসমাজের বাহ্যিক ও ভাবগত উপাদান:
রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের দ্বারা নির্দেশিত পরিচিত উপাদানগুলির আলোচনা করা দরকার। জাতীয় জনসমাজের উপাদানগুলিকে দু’ভাগে বিভক্ত করা হয় :
ভৌগোলিক সান্নিধ্য, অভিন্ন বংশ-ধর্ম-ভাষা-ইতিহাস প্রভৃতি উপাদান বাহ্যিক দিক দিয়ে জনসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে জাতীয় জনসমাজ গঠনে সহায়তা করে। আর সুখ-দুঃখ, অভাব-অভিযোগ সম্পর্কে অভিন্ন ধারণা ও সম-রাষ্ট্রনীতিক চেতনাকে জাতীয় জনসমাজের ভাবগত উপাদান হিসাবে গণ্য করা হয়ে থাকে। বাহ্যিক উপাদানসমূহের ঐক্যভিত্তিক সমচেতনাও মানসিক ঐক্যানুভূতি সৃষ্টি ও সঞ্চারে সাহায্য করে থাকে।
(ক) জাতীয় জনসমাজের বাহ্যিক উপাদানসমূহ
(১) ভৌগোলিক সান্নিধ্য –ভৌগোলিক ঐক্য: জাতীয় জনসমাজের একটি অপরিহার্য উপাদান হিসাবে ভৌগোলিক সান্নিধ্যের কথা বলা হয়। সাধারণভাবে এ কথা সত্য যে একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমার মধ্যেই জাতীর সত্তার বিকাশ ঘটে থাকে। একই ভৌগোলিক সীমার মধ্যে বহুদিন ধরে বেশ কিছু সংখ্যক মানুষ বসবাস করতে থাকলে, অধিবাসীদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই এক গভীর একাত্মবোধের সৃষ্টি হয়। একে স্বাদেশিকতা বা স্বাদেশিকতাবোধও বলা যেতে পারে। এইভাবে মাতৃভূমির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা-ভক্তির সৃষ্টি হয়। আবার একই অঞ্চলে পাশাপাশি বসবাসের ফলে নানাক্ষেত্রে যোগাযোগ ও আদান-প্রদান সহজতর হয়। তারফলে অধিবাসীদের মধ্যে ঐক্যবোধ জাগ্রত হয়। এই কারণে মানুষ আপন দেশকে মাতৃভূমি জ্ঞানে শ্রদ্ধা-ভক্তি করে এবং মাতৃভূমি রক্ষার জন্য মরণপণ সংগ্রামে সামিল হয়।
ভৌগোলিক নৈকট্য কিন্তু জাতীয় জনসমাজ সৃষ্টির জন্য অপরিহার্য উপাদান নয়। ভৌগোলিক নৈকট্য ছাড়াও জাতীয় জনসমাজ গড়ে ওঠা সম্ভব। উদাহরণ হিসাবে ইহুদীদের কথা বলা যায়। তাদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র প্যালেস্টাইন সৃষ্টি হওয়ার আগেই ইহুদীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিল। কিন্তু এই ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতা সত্ত্বেও জাতীয়তাবোধের ভিত্তিতে তারা জাতীয় জনসমাজে পরিণত হয়েছিল। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের মতানুসারে নেশনের অন্তঃকরণটুকু ভূখণ্ডে গড়ে ওঠে না।
(২) বংশগত ঐক্য: বংশগত বা কুলগত ঐক্য জাতীয় জনসমাজ গঠনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসাবে বিবেচিত হয়। কোন জনসমষ্টি যখন বিশ্বাস করে যে, তাদের শিরা উপশিরায় একই রক্ত প্রবাহিত হয় এবং তাদের আকৃতিগত বৈশিষ্ট্য অভিন্ন, তখন স্বভাবতই তাদের মধ্যে স্বজনপ্রীতি দেখা দেয়। বংশগত ঐক্য গভীর জাতীয়তাবোধের সৃষ্টি করে। প্রসঙ্গক্রমে হিটলারের সময়কার জার্মান জাতির জাতীয়তাবোধ এবং আর্যজাতি হিসাবে তাদের শ্রেষ্ঠত্বের দাবি উল্লেখযোগ্য।
বংশগত ঐক্যবোধ জাতীয়তা সৃষ্টির অন্যতম সহায়ক উপাদান হলেও, অত্যাবশ্যক নয়। পৃথিবীর প্রায় সকল সভ্যজাতিই বর্ণসংকর। এখন কোন জাতিই কুলগত বিশুদ্ধতা দাবি করতে পারে না। বর্তমান দুনিয়ার জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নত মার্কিন জাতি বিভিন্ন জাতির সংমিশ্রণে উদ্ভূত। এই প্রসঙ্গে ভারত, ব্রিটেন, গণ-প্রজাতন্ত্রী চীন প্রভৃতি দেশের কথা দৃষ্টান্ত হিসাবে উল্লেখযোগ্য। সুপ্রাচীনকাল থেকে আর্য-অনার্য, শক-যুণ, দ্রাবিড়, পাঠান-মোগল প্রভৃতি বহু জাতির সংমিশ্রণে ভারতের এই মহাজাতির সৃষ্টি। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ বলেছেন: ‘জাতি-মিশ্রণ হয় নাই য়ুরোপে এমন দেশ নাই।” বস্তুত বিশ্বের কোন জাতিই বর্তমানে অবিমিশ্র কুলগৌরবের অধিকারী নয়। বরং বর্তমানে এই ধারণাই প্রবল যে বিভিন্ন বংশের গুণগত বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়ে জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের সৃষ্টি হয়।
(৩) ভাষাগত ঐক্য: মানুষের মনোজগতের ভাবসমূহ ভাষার মাধ্যমেই প্রকাশিত হয়। একই ভাষাভাষী জনগণের মধ্যে ভাবের আদান-প্রদান সহজেই হয়। এতে স্বাভাবিক একাত্মবোধের সৃষ্টি হয়। ভাষাগত ঐক্যের ভিত্তিতে তাদের সাহিত্য, রঙ্গ-রসিকতা হয় একই ধরনের। সেই জন্য এক ভাষাভাষীরা খুব সহজেই পরস্পরের মনোরাজ্যের পরিচয় পেয়ে একাত্ম হতে পারে। ভাষাগত ঐক্য জাতীয়তার এক গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। রামসে ম্যুর (Ramsay Muir)-এর মতানুসারে জাতীয় জনসমাজ সংগঠনের ক্ষেত্রে ভাষাগত ঐক্য বংশগত ঐক্য অপেক্ষা অধিক সহায়ক। ভাষাই হল জাতির সাহিত্য সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। আদর্শবাদী জার্মান দার্শনিক ফিক্টে (Fichte)-র মতানুসারে জাতীয় ঐক্য উদ্ভবের অন্যতম প্রধান উপাদান হল ভাষা।
বাহ্যিক অন্যান্য উপাদানের ন্যায় ভাষাগত ঐক্যও জাতীয় জনসমাজের অপরিহার্য উপাদান নয়। বিভিন্ন ভাষাভাষী জনসমষ্টি নিয়েও গভীর ঐক্যবোধের ভিত্তিতে জাতি গঠিত হয়েছে এমন অসংখ্য নজির আছে। বহু ভাষাভাষীদের নিয়েও ভারতবাসীরা একটি জাতি। আবার চারটি ভাষাভাষী (জার্মান, ফরাসী, ইতালীয়ান এবং রোমানস্) মানুষ নিয়েও সুইস জাতি গঠনের অসুবিধা হয়নি। আবার ভাষাগত ঐক্য থাকলেই রাষ্ট্রের মধ্যে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠবে এমন কোন নিশ্চয়তা নেই।
(8) ধর্মগত ঐক্য: জাতীয় জনসমাজ গঠনের ক্ষেত্রে ধর্মীয় ঐক্যের অবদানকে অস্বীকার করা যায় না। ঈশ্বরের একই প্রকার আরাধনা জনগণকে সমধর্মবিশ্বাসের বন্ধনে আবদ্ধ করে। একই উপাসনা পদ্ধতি এই ঐক্যের বন্ধনকে দৃঢ় করে। এর ফলে গভীর জাতীয়তাবোধের সৃষ্টি হয়। প্রাচীন ও মধ্যযুগের ইতিহাসে এর দৃষ্টান্ত ছড়িয়ে আছে। আধুনিক ইতিহাসেও এমন নজির বিরল নয়। ধর্মগত ঐক্যের ভিত্তিতেই ভারতীয় মুসলমানগণ প্রথমে ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন চলাকালীন নিজেরা স্বতন্ত্র জাতীয় জনসমাজ হিসাবে সংঘবদ্ধ হয়েছেন এবং পরে পাকিস্তানে নতুন জাতির সৃষ্টি করেছেন। মূলত ধর্মের উপর জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠিত বলে মনে করা হয়। লয়েড (C. Lloyd) মন্তব্য করেছেন: “The possession of common religion has been extremely important in creating nation-states.” গিলক্রিস্ট- এর মতানুসারে ধর্মবিশ্বাসের ক্ষেত্রে পার্থক্য প্রবল হলে জাতিগত ঐক্য ক্ষণস্থায়ী হতে বাধ্য।
তবুও জাতীয়তাবোধ সৃষ্টির ক্ষেত্রে ধর্মগত ঐক্য অত্যাবশ্যক নয়। আধুনিক অধিকাংশ রাষ্ট্রই ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি গ্রহণ করেছে। এই নীতির ভিত্তিতে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষ পাশাপাশি বসবাস করে একাত্মবোধের মাধ্যমে এক জাতি হিসাবে পরিচিত হতে পারে। ধর্মগত বিভিন্নতা জাতীয়তাবোধকে ক্ষুণ্ণ করতে পারে না। এ প্রসঙ্গে আবার ভারতের দৃষ্টান্ত উল্লেখযোগ্য। সারা দেশ জুড়ে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সহাবস্থানের ভিত্তিতেই এই মহাজাতির উদ্ভব হয়েছে। ধর্মীয় বৈরিতা জাতীয় ঐক্যকে বিপন্ন করতে পারে। এমন অনেক নজির মানবজাতির ইতিহাসে বর্তমান। আয়ারল্যাণ্ডের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ঐক্যে ফাটল ধরেছে, ক্যাথলিক ও প্রোটেস্টান্টদের মধ্যে বিরোধের ফলে। অনুরূপ ঘটনা ব্রিটেন, জার্মান, সুইজারল্যাণ্ড প্রভৃতি দেশেও ঘটেছে।
(৫) রাষ্ট্রনীতিক ঐক্য: আবার দীর্ঘদিন ধরে কোন জনসমষ্টি একই সরকারের শাসনাধীনে থাকলে তাদের মধ্যে ঐক্যবোধ সৃষ্টি হওয়ার স্বাভাবিক সম্ভাবনা থাকে। এই ধরনের রাষ্ট্রনীতিক ঐক্য অধিবাসীদের মধ্যে একাত্মবোধের সৃষ্টি করে। কোন জনসমাজ দীর্ঘকাল যাবৎ অভিন্ন আশা-আকাঙ্ক্ষার দ্বারা অনুপ্রাণিত হতে থাকলে সংশ্লিষ্ট মানবগোষ্ঠী জাতীয় জনসমাজ গঠনের উপযোগী অবস্থায় উপনীত হয়। দীর্ঘদিনের ব্রিটিশ শাসন ভারতবাসীদের মধ্যে জাতীয়তাবোধ সৃষ্টির ক্ষেত্রে সহায়তা করেছে। ডুখেইম (E. Durkheim) বলেছেন: “A nationality is a group of which the members… wish to live under the same Laws and form of a state.”
এই রাষ্ট্রনীতিক ঐক্যও জাতীয় জনসমাজ সৃষ্টির অপরিহার্য উপাদান নয়। বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের বিভিন্ন সরকারের অধীনে বসবাস করা সত্ত্বেও ইহুদী জনসমাজ সৃষ্টি বাধাপ্রাপ্ত হয়নি।
(৬) আর্থনীতিক সমস্বার্থ: আর্থনীতিক সমস্বার্থ জনগণকে ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ করে জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। নির্দিষ্ট কোন অঞ্চলের অধিবাসীদের মধ্যে সমজাতীয় আর্থনীতিক স্বার্থ বর্তমান থাকলে এক গভীর ঐক্যের পরিবেশ গড়ে উঠে। অভিন্ন আর্থনীতিক স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে জনগণ বিপ্লবের সামিল হয়েছে এমন উদাহরণ ইতিহাসে বিরল নয়।
তবুও জাতীয়তা গঠনের ব্যাপারে এই উপাদানও এককভাবে যথেষ্ট নয়। তা যদি হত, তাহলে পরস্পর বিরোধী আর্থনীতিক স্বার্থযুক্ত শ্রমিকশ্রেণী ও পুঁজিপতিদের একই রাষ্ট্রে বসবাস করা সম্ভব হত না।
(খ) জাতীয় জনসমাজের ভাবগত উপাদান
বস্তুতপক্ষে, জাতীয় জনসমাজ গঠনের ক্ষেত্রে উল্লিখিত বাহ্যিক উপাদানগুলির কোনটিই এককভাবে অপরিহার্য নয়। এদের যে-কোন একটি বা কয়েকটি বাদ দিয়েও জাতীয় জনসমাজের সৃষ্টি হতে পারে। বস্তুত, জাতীয় জনসমাজ গঠনে ভাবগত উপাদানই হল প্রধান। ফরাসী অধ্যাপক রেঁনা (Renan) যথার্থই বলেছেন যে, “জাতীয় জনসমাজ সম্পর্কে ধারণা মূলত ভাবগত’ (“The idea of nationality is essentially spiritual in character.”)। বার্নস (C. D. Burns )-এর মতানুসারে, তুলনামূলক বিচারে কূলগত ঐক্যের থেকে অভিন্ন স্মৃতি ও ধ্যান-ধারণার উত্তরাধিকারের ভূমিকা জাতীয় জনসমাজ গঠনের ক্ষেত্রে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। বস্তুত আত্মিক ঐক্য এক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে।
ভাবগত ঐক্য: জনসমাজের মধ্যে মনোগত একাত্মবোধের অস্তিত্ব জাতীয়তার অপরিহার্য উপাদান। কোন জনসমষ্টি যখন বিশ্বাস করে যে, তাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য অভিন্ন, তারা সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, উত্থান-পতন, গৌরব-গ্লানির সমান অংশীদার তখনই সেই জনসমষ্টির মধ্যে জাতীয়তাবোধ দৃঢ় হয় এবং জাতীয় জনসমাজের সৃষ্টি হয়। সুতরাং জাতীয়তাবোধ প্রকৃতপক্ষে একটি ভাবগত ধারণা, মানসিক অনুভূতি একটি বিশেষ মনোবৃত্তি। কোন জনসমষ্টি জাতীয় চেতনার ভিত্তিতে নিজেদের জাতীয় জনসমাজ হিসাবে মনে করলে জাতীয় জনসমাজ হিসাবে গণ্য হয়। জিমার্ন (A. F. Zimmern) বলেছেন: “If a people feels itself to be a nationality, it is a nationality.” জাতীয় জনসমাজের মানসিক অবস্থা ভাবগত ঐক্যের মধ্যেই প্রতিফলিত হয়। জিমার্নের মতানুসারে জাতীয় জনসমাজের এই মানসিক অবস্থার সৃষ্টি হয় অভিন্ন অনুভূতি, চিন্তা ও জীবনধারণের পদ্ধতিকে নিয়ে। গেটেলের মতে, ‘জাতীয়তা আসলে একটি ভাবগত ব্যাপার, একটি মানসিক অবস্থা, জীবনযাত্রা, চিন্তা এবং অনুভূতির একটি পদ্ধতি। তিনি বলেছেন : “Nationality, therefore, is largely a matter of sentiment; it is a state of mind, a way of living, thinking and feeling.” ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও আচার-ব্যবহারগত সাদৃশ্যের ভিত্তিতে এর সৃষ্টি হয়। তাই কোকার (Coker)-এর মতে ‘জাতীয় জনসমাজ হল প্রধানত ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা ও কৃষ্টিগত ধারার ফল’। তিনি বলেছেন: “Nationality is primarily the product of historical experiences and cultural tradition.” বাহ্যিক উপাদানগত পার্থক্য সত্ত্বেও ভাবগত ঐক্যের মাধ্যমে জাতীয় জনসমাজ গড়ে উঠতে পারে। গেটেল (Gettell)-এর মতানুসারে ‘আধুনিক রাষ্ট্রের ঐক্যের ভিত্তি বাহ্যিক নয়, সম্পূর্ণ মানসিক’। তার কথায়: “The basis of unity is modern state is psychological rather than physical.”
মার্কসীয় ধারণা: মার্কসবাদীরা কিন্তু ভিন্ন মত পোষণ করেন। মার্কসীয় দর্শন অনুসারে বাস্তব উপাদানগুলির অনুপস্থিতিতে জাতীয় ঐক্য গড়ে ওঠা অসম্ভব। এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে জাতীয় চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রে ভাবগত প্রভাবের থেকে কয়েকটি বাস্তব উপাদানের গুরুত্ব বেশী।
উপসংহার: প্রকৃত প্রস্তাবে একাধিক উপাদানের সমন্বয়ে জাতীয় জনসমাজের সৃষ্টি হয়। তবে জাতীয় জনসমাজ গঠনের ক্ষেত্রে এই উপাদানগুলির সীমাবদ্ধতাকে অস্বীকার করা যাবে না। আবার এই উপাদানগুলির কোন একটি নির্দিষ্ট কোন পরিস্থিতিতে মুখ্য নির্ধারক হিসাবে ভূমিকা পালন করতে পারে। এই কারণে তাঁর A Grammar of Politics গ্রন্থে ল্যাস্কি এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে, বিশেষ কোন উপাদানের মধ্যে জাতীয় জনসমাজের উৎসের অনুসন্ধান অর্থহীন।