রবীন্দ্রনাথ এই কবিতায় তাঁর মর্ত্যপ্রীতিকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছেন। বলতে চেয়েছেন রাধাকৃষ্ণের স্বর্গীয় প্রেমের শিকর বিস্তৃত রয়েছে এই ধরণীতে— ‘কৃষ্ণের যতেক লীলা সর্বোত্তম নরলীলা নর বপু তাহার স্বরূপ (চৈতন্যচরিতামৃত ১১ পরিঃ)।
ডেভিড ওফ ওইলিয়াম একটি কবিতার মূলরসে এই একই অভিব্যক্তি আছে—“Come with me to the birch tree church, to slase in piety of the culkoo amid the leaves, where we with none to intrude on us shall attain heaven in the green grove.”
রবীন্দ্রনাথও বলতে চেয়েছেন রাধাকৃষ্ণের পূর্বরাগ, মান, অভিসার, বিরহ, মিলন এই ধরণীর নরনারীর প্রেমের অবস্থাভেদ মাত্র। শুধু তাই নয় এই ধরণীর মানুষের সম্পর্কের মাঝে যেখানেই নিঃস্বার্থ ভালোবাসার প্রকাশ ঘটে সেখানেই স্বর্গীয় সুষমা প্রকাশিত হয়। অসামান্য চিত্রকল্প নির্মাণের মাধ্যমে কবি তার সমর্থন জানিয়েছেন—
আমাদের কুটীর কাননে
ফুটে পুষ্প, কেহ দেয় দেবতাচরণে,
কেহ রাখে প্রিয়জন তরে
…দেবতারে যাহা দিতে পারি, দিই তাই প্রিয়জনে-প্রিয়জনে যাহা দিতে পাই
তাই দিই দেবতারে, আর পাব কোথা!
দেবতারে প্রিয় করি, প্রিয়রে দেবতা।”
১২৯৯ বঙ্গাব্দের ১৮ আষাঢ় শাহজাদপুপরে বসে কবিতাটি লেখেন। ছটি স্তবকে সন্নিহিত সমিল প্রবাহমান পয়ারে লেখা এই কবিতায় অলংকার গীতিরস চিত্রকল্পের অভাব ঘটেনি। সমগ্র কবিতায় মর্ত্য ভূমিকে সত্যরূপে গ্রহণ করার কথা ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয়েছে।
কবিতার প্রথম স্তবকে কবির শব্দালঙ্কার প্রয়োগের নৈপুণ্য বারে বারে প্রমাণিত হয়েছে। অনুপ্রাস, যমক, কাকুবক্রোক্তির দ্বারা কাব্যিক সৌন্দয সৃষ্টি করেছেন। কাকু বক্রোক্তির নিদর্শন আছে কবিতার প্রথম চরণেই—
“শুধু বৈকুণ্ঠের তরে বৈবের গান!
কবিতার দ্বিতীয় স্তবক শুরু হয়েছে অনুপ্রাস দিয়েই—
‘এ গীত-উৎসব মাঝে
শুধু তিনি আর ভক্ত নির্জনে বিরাজে,
পরপর স্তবকে স্মরণোপমা, সমাসোস্তি অলংকার কবিতার অবয়বে বর্ণাঢ্য চিত্রকল্প রচনা করেছে।