যখন সংবিধান কোনাে সংবিধান সভা বা কনভেনশন দ্বারা বিধিবদ্ধ না হয়ে প্রচলিত প্রথা, রীতিনীতি, আচার ব্যবহার, আইনসভা কর্তৃক প্রণীত আইন, বিচারালয়ের রায় ইত্যাদির ভিত্তিতে গড়ে ওঠে, সেই সংবিধানকে অলিখিত সংবিধান বলে। ব্রিটেনের সংবিধান হল অলিখিত সংবিধানের প্রত্যক্ষ উদাহরণ।
অলিখিত সংবিধানের সুবিধা বা গুণ
[1] যুগােপযােগিতা: অলিখিত সংবিধান সুপরিবর্তনীয় বলে সহজেই পরিবর্তন করা যায়। এজন্য উদ্ভূত পরিস্থিতির মােকাবিলায় এই ধরনের সংবিধান যথেষ্ট উপযােগী হয়।
[2] সংকীর্ণতা দোষে দুষ্ট না হওয়া: এরূপ সংবিধানে সাংবিধানিক আইন এবং প্রথা, রীতিনীতি ইত্যাদির মধ্যে কোনােরূপ পার্থক্য থাকে না। অর্থাৎ, সাংবিধানিক আইনের মতােই প্রথা, রীতিনীতি ইত্যাদি সমান গুরুত্ব লাভ করে।
[3] বিরােধিতার সম্ভাবনা না থাকা: প্রয়ােজন অনুযায়ী অলিখিত সংবিধানকে পরিবর্তন করা যায় বলে এরূপ সংবিধানের বিরােধিতার সম্ভাবনা থাকে না।
[4] সহজসরল: অলিখিত সংবিধানে জটিলতা থাকে না বলে এরূপ সংবিধান জনসাধারণের কাছে সহজেই বােধগম্য হয়। ফলে জনসাধারণ এরূপ সংবিধানকে সহজেই নিজের বলে ভাবতে পারে।
[5] জরুরি অবস্থার উপযােগী হওয়া: এরূপ সংবিধানকে সহজে পরিবর্তন করা যায় বলে জরুরি অবস্থায় সংবিধানের দ্রুত পরিবর্তন করে সহজেই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়।
অলিখিত সংবিধানের অসুবিধা বা দোষ
[1] অস্পষ্টতা: অলিখিত সংবিধান নির্দিষ্ট দলিলে লিপিবদ্ধ না থাকায় সংবিধানের অর্থ সকলের কাছে স্পষ্ট হয় না।
[2] সরকারের স্বৈরাচারী হওয়ার সম্ভবনা: এরূপ সংবিধান সুপরিবর্তনীয় হয় বলে সরকার ইচ্ছামতাে সংবিধানের পরিবর্তন করে যথেষ্ট ক্ষমতার অধিকারী হতে পারে।
[3] স্থায়িত্বহীনতা: এরূপ সংবিধান নমনীয় বলে অনেক সময় লক্ষ করা যায় যে পরিবর্তন হতে হতে সংবিধানের আসল বৈশিষ্ট্যই লােপ পায়। তাই এরূপ সংবিধানকে অস্থায়ী সংবিধান বলে।
[4] অনুপযােগিতা: যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় দুই ধরনের সরকার থাকে বলে এরূপ শাসনব্যবস্থায় সংবিধান লিখিত ও দুষ্পরিবর্তনীয় হওয়া একান্ত প্রয়ােজন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় এরূপ সংবিধান অচল।
[5] আইনসভার প্রাধান্য: অলিখিত সংবিধান সুপরিবর্তনীয় হওয়ায়, আইনসভা সাধারণ আইন পাসের পদ্ধতি অনুসরণ করে এরূপ সংবিধানকে সংশােধন করতে পারে। একারণে এরূপ সংবিধানে বিচার বিভাগের পরিবর্তে আইন বিভাগের প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়।
মূল্যায়ন: উপরি-উক্ত আলােচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, অলিখিত সংবিধান যুগােপযােগী এবং জরুরি অবস্থার অনুকূল। কিন্তু শাসন বিভাগ এই সংবিধানের নমনীয়তার সুযােগ নিয়ে স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে পারে। সেক্ষেত্রে নাগরিকদের স্বাধীনতা ও অধিকার বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে।