রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য-শিল্প চর্চার অঙ্গনে ঠাকুরবাড়ির যে ক’জন উত্তরপুরুষ অসাধারণ শিল্প প্রতিভার পরিচয় রেখেছিলেন, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁদের অন্যতম। রবীন্দ্রনাথ, গগনেন্দ্রনাথ, অবনীন্দ্রনাথ প্রমুখ প্রতিভাবর্গের মধ্যে অবনীন্দ্রনাথের শ্রেষ্ঠত্ব তার অসাধারণ স্বকীয়তায়, রবীন্দ্র বলয়ের মধ্যে থেকেও রবীন্দ্রনাথকে অনুসরণ না করার দুঃসাহসী আত্মবিশ্বাসে, শিল্পের বিচিত্র শাখায় স্বচ্ছন্দ-চারণায় এবং অনুভূতি ও বৈদগ্ধ্যের অসাধারণ সমন্বয়ে।
অবনীন্দ্রনাথ মূলত শিল্পী। তার এই শিল্পীসত্তার প্রধানতম প্রকাশমুখ অবশ্যই চিত্রকলা। পাশ্চাত্ত্য শিল্পীর অধীনে পাশ্চাত্ত্য চিত্রাঙ্কণ-পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত হয়েও অবনীন্দ্রনাথ ভারতীয় শিল্পধারার মধ্যেই খুঁজে পেয়েছিলেন তার নিজস্ব জগৎ। ভারতীয় পুরাণ কাহিনী এবং মুঘল চিত্রকলাকে ঘিরে তার সেই স্বীয় চিত্রশিল্পের জগৎ স্ফুরিত হয়েছিল অপূর্ব দ্যুতিতে।
কিন্তু রং-তুলির ক্ষেত্র থেকে ভাষাশিল্পের জগতে অবনীন্দ্রনাথের আবির্ভাব একান্ত আকস্মিক। ১৩০২ বঙ্গাব্দ নাগাদ যখন রবীন্দ্রনাথ ‘বাল্য গ্রন্থাবলী’ প্রকাশের পরিকল্পনা করছেন, তখন ছােটোদের উপযােগী গ্রন্থ রচনার জন্য রবীন্দ্রনাথই তাঁকে আহ্বান করেন। অবনীন্দ্রনাথের মুখে মুখে গল্প জমাবার কুশলতা ছিল। সেজন্যই রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন—‘তুমি লৈখ না, যেমন করে তুমি মুখে মুখে গল্প কর। তেমনি করেই লেখ।’ [জোড়াসাঁকোর ধারে] রবীন্দ্রনাথের এই আহ্বানের সূত্রেই দ্বিধা-সংকোচের সঙ্গে অবনীন্দ্রনাথ এলেন লেখার জগতে; জন্ম নিল ‘শকুন্তলা’ ও ‘ক্ষীরের পুতুল’ নামে দুটি অসাধারণ বই ১৩০২ তে। সংস্কৃত সাহিত্যের অনুসরণে ছােটোদের জন্য লেখা এই ‘শকুন্তলা’ থেকেই এক নরম অনুভবের ছোঁয়া তার লেখায় জড়িয়ে যায়। যদিও এই বইয়ের বাক্ৰীতিতে প্রথম গদ্যচর্চার দ্বিধা চিহ্ন স্পষ্ট। রবীন্দ্রনাথ শকুন্তলা-র প্রশংসা করায় সেই দ্বিধা অনেকটাই কেটে গিয়েছিল।
‘ক্ষীরের পুতুল’-এর বিষয় বাংলার পরিচিত বুদ্ধ-ভূতুমের রূপকথা থেকে গৃহীত, কিন্তু সে শুধুমাত্র কাঠামােটুকু। অবনীন্দ্রনাথের বলার ধরনের স্বকীয়তায় ‘ক্ষীরের পুতুল’ হয়ে ওঠে বাংলা শিশু-সাহিত্যের এক অনন্য মাষ্টারপীসক্ষীরের পুতুল-এ বাংলার ছড়াগুলিকে অসাধারণ কৌশলে সংযােজন করা ছাড়াও এখানে তার গদ্যভঙ্গিও যেন ছড়াধর্মী- ‘পূবপশ্চিমে/ মেঘ উঠল/ আকাশ ভেঙে/বৃষ্টি এল/রাজ্য জুড়ে/ঘুম এল/তুই আমার/ঘুমাে।’
রবীন্দ্রনাথেরই উৎসাহ ও তাগাদায় ১৩০৫ সালে অবনীন্দ্রনাথ লিখলেন ‘দেবী-প্রতিমা’ নামক গল্প। এটি পড়া হয়েছিল বড়দের খেয়াল-খেলার পীঠস্থান ‘খামখেয়ালী সভা’য়। এই গল্প সাধুভাষায় লেখা বড়দের গল্প। ১৩১১-তে ‘ভারতী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় অবনীদ্দ্রনাথের আরাে কয়েকটি গল্প— ‘শিলাদিত্য’, ‘গােহ’, ‘পদ্মিনী’, ‘বাপ্পাদিত্য’, ‘আলেখ্য’।
অবনীন্দ্রনাথের গদ্য রচনার ইতিহাসকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়। ১৮৯৫ থেকে ১৯০৫ খ্রীষ্টাব্দকে বলা চলে প্রস্তুতির কাল। উপরােক্ত গল্পগুলি ছাড়াও ‘স্বর্গীয় রবিবর্মা’, ‘মানসচর্চা’ প্রভৃতি প্রবন্ধে কখনাে সাধু, কখনাে চলিত রীতিতে দ্বিধাগ্রস্তভাবে ভাষাসাধনা করেছেন অবনীন্দ্রনাথ।
অবনীন্দ্রনাথের গদ্যরচনার দ্বিতীয় পর্যায় ১৯০৫ থেকে ১৯১৬ খ্রীষ্টাব্দ। ‘রাজকাহিনী’ গল্পে চলিত রীতি প্রয়ােগের নিজস্ব ভঙ্গিটি শিল্পীর আয়ত্ত হয়েছে। এই ভাষা কথ্য ভাষার মতাে সরল, অথচ লিখ্য ভাষার পারিপাট্যে স্নিগ্ধ। যদিও ১৯১৬-তে প্রবাসী পত্রিকায় ‘ফাল্গুনী’র সমালােচনা লেখার আগে অবনীন্দ্রনাথের অধিকাংশ প্রবন্ধ বা আলােচনাই লেখা হয়েছে সাধু গদ্যে। তবে ১৩২২-এ ‘ভারতী’ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘পথে বিপথে’ রচনাটিও লেখা হয়েছে চলিত ভাষায় ১৩২২-এই উত্তরা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল অবনীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন ‘উত্তরা’ নামক রচনাটি। যার ভাষারীতিকে রবীন্দ্রনাথ প্রশংসা করে বলেছিলেন—’গদ্যছন্দ’। এই ‘গদ্যছন্দে ‘র লেখা অবনীন্দ্রনাথ লিখতে শুরু করেন ১৯৩৪-এ বিচিত্রা পত্রিকায়; যার মধ্যে উল্লেখযােগ্য ‘পাহাড়িয়া’, রংমহল’ ইত্যাদি।
অবনীন্দ্রনাথের গদ্য রচনার তৃতীয় স্তরটিই সর্বাপেক্ষা উল্লেখযােগ্য। বাংলা সাহিত্যের সৃজনলৈকে এই পর্বের লেখাগুলিই তাঁকে অনন্য মর্যাদায় স্মরণীয় আসন দান করেছে। এর মধ্যে একদিকে রয়েছে ‘চাইবুড়াের পুঁথি’, ‘মারুতির পুঁথি’ প্রভৃতি অনবদ্য রচনাগুলি, অন্যদিকে রয়েছে তাঁর প্রবন্ধাবলী। সাময়িক পত্রে প্রকাশিত তার প্রবন্ধ ও শিল্পপ্রবন্ধের সংখ্যা শতাধিক এর মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযােগ্য অবনীন্দ্রনাথের ‘বাগীশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী’। ১৯২১-এ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘রাণী বাগীশ্বরী’র নামাঙ্কিত শিল্প-অধ্যাপকের পদ সৃষ্টি হয়। স্যার আশুতােষ মুখােপাধ্যায় এই পদে অধ্যাপকরূপে অবনীন্দ্রনাথকেই বরণ করে নেন। ১৯২১ থেকে ১৯২৯ পর্যন্ত এই পদে থেকে তিনি শিল্পবিষয়ক ঊনত্রিশটি বক্তৃতা দিয়েছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বক্তৃতাগুলি ১৯৪১-এ ‘বাগীশরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী’ নামে প্রকাশিত হয়। সাম্প্রতিক সংস্করণে অবশ্য প্রবন্ধের সংখ্যা ত্রিশটি। এ ছাড়া রয়েছে পূর্ববর্তী ‘ভারত শিল্পের ষড়ঙ্গ’, ‘ভারতশিল্প’, ‘ভারত শিল্পে মূর্তি’,—ইত্যাদি অনেকগুলি শিল্পবিষয়ক প্রবন্ধ ও গ্রন্থ।
অবনীন্দ্রনাথের আর এক মূর্তি প্রকাশিত হয়েছে তাঁর’ অনন্যসাধারণ পুঁথি ও পালা সাহিত্য। ‘চাইবুড়াের পুথি’, ‘মারুতির পুথি’ ইত্যাদি পুঁথিতে এবং ‘লম্বকর্ণ পালা’, ‘গােল্ডেন গুজ পালা’ ইত্যাদি পালাতে অবনীন্দ্রনাথের স্বেচ্ছাবিহারী কল্পলােকের ও অঘটনঘটন পটু ভাষাজগতের অপূর্ব দৃষ্টান্ত পাওয়া যাবে।
দেহে-মনে পরিপূর্ণ শিল্পী অবনীন্দ্রনাথের ভাষাশিল্পনির্মিতিও এক অসাধারণ সম্পদ। তার এই গদ্যনির্মিতির বিশেষত্বটি ধরা পড়েছে বিনােদবিহারী মুখােপাধ্যায়ের মন্তব্যে- ‘তার প্রতিভা এমনভাবে এই দুই ধারায় বিভক্ত হয়েছে যে কোনটি তার প্রধান ক্ষেত্র বলা শক্ত। সাহিত্যের অনুভূতি এবং চিত্রকরের সৃষ্টি এই দুইয়ের মিশ্রণে এবং দুইয়ের দ্বন্দ্বে অবনীন্দ্রনাথের প্রতিভা রূপ পেয়েছে।’
যথার্থই অবনীন্দ্রনাথের গদ্যরচনায় যেন অবিশ্রান্তভাবে মিশ্রিত হতে দেখি ছবির রূপময়তা। অবনীন্দ্রনাথ সম্ভবত রেখাবর্ণ মাধ্যম ও ভাষামাধ্যমকে পৃথক করতে চাননি কখনাে। তাই তিনি নিজ ভাষাশিল্পীসত্তা সম্পর্কে বলেছিলেন— ‘অবনঠাকুর ছবি লেখে’। [বুড়াে আঙলা] অর্থাৎ তিনি ভাষার মাধ্যমেও ছবিই এঁকেছেন বলে স্বীকার করেন। আবার ছবি সম্পর্কে আলােচনা করতে গিয়েও তিনি লেখার কথা আনেন, যেমন—’চিত্তির লেখার’ কথা পাবাে ‘চাইবুড়াের পুঁথি’তে এবং ‘চিত্র লিখিবার’ কথা আছে ‘স্বর্গীয় রবিবৰ্মা’ প্রবন্ধে। আর ঐ শব্দকৌশলের মধ্যে যেমন একদিকে অবনীন্দ্রনাথের শিল্প-ভাবনার বিশেষত্বটি উদ্ভাসিত হয়, তেমনি স্পষ্ট হয়ে যায় তার শব্দ নিয়ে খেলার অসাধারণ বিশেষত্বটিও। ‘আলেখ্য’ সংস্কৃতে ‘চিত্র’ শব্দের সমার্থক এবং ‘লিখ’ ধাতু একাধারে লিপি ও অঙ্কন দুটিকেই বােঝায়। কিন্তু শব্দের ব্যুৎপত্তিকে দক্ষ ভাষাবিদের মতাে আত্মস্থ করে গভীর শিল্পভাবনার বৈদগ্ধ্যকে নিঃশেষে আড়াল করে নিতান্ত মেয়েলি ভাষার ভঙ্গিতে কৌতুকের রশ্মি ছড়াতে পারেন শুধু অবনঠাকুরই। তাই ‘ছবিলেখা’ শব্দটি অবনীন্দ্রনাথের স্টাইলেরই দ্যোতক।
গদ্য আসলে দ্বিজ। তার প্রথম জন্ম প্রয়ােজনের তাগিদে। এই প্রয়ােজনের কথ্য গদ্য যখন লিখ্য রূপ নেয়, তখন তা কথ্যভাষা থেকে স্বভাবতই দূরবর্তী হয়ে পড়ে। লিখ্য গদ্যের দুটি রূপ সাধু ও চলিত। কিন্তু প্রয়ােজনের কথা ছাড়াও মানুষের বলার আরাে কিছু থাকে; যা মননের ভাষা নয়, মনের ভাষা। ফোর্ট উইলিয়াম থেকে রামমােহন-বিদ্যাসাগরের সাধুভাষা ও কেরীর কথােপকথন থেকে বিবেকানন্দ-বীরবলের চলিতভাষা- এই দুটি রীতিই মননের চাহিদা মিটিয়েছে। খেয়ালী মনের কথাকে ভাষা-ভঙ্গিতে বা লিখ্য গদ্যে নিয়ে এলেন প্রথম অবনীন্দ্রনাথ। রূপকথা-ছড়া-ব্রতকথা-কথকতার পুরানাে ঐতিহ্যকে আত্মস্থ করে অবনীন্দ্রনাথের হাতে যে অপরূপ বাক্শৈলী গড়ে উঠল, সেখানে মনের কথা প্রকাশ করার তাগিদেই মিশে গেল ছবি ও গান। বাংলা কথ্য গদ্যে এই ছবি আর সুরের আবহ অবনীন্দ্রনাথের সহজ আবেগের রচনা। সেখানে একদিকে তিনি শিশুর মতাে সরল, অন্যদিকে পারিপাট্যের বৈদগ্ধ্যে প্রবীন। ব্যুৎপত্তিবােধের সঙ্গে শিশুসুলভ প্রাণের স্ফৃর্তি যুক্ত হলে কি তাৎপর্যবহ হয়, তার প্রমাণ নিচের উদ্ধৃতিটি- ‘শিল্পীর কাজকে এইজন্য বলা হয় নির্মিতি, অর্থাৎ রসের দিক থেকে যেটি মিত হলেও অপরিমিত। আর কারিগরের কাজকে বলে নির্মাণ, অর্থাৎ নিঃশেষভাবে পরিমাণের মধ্যে সেটি ধরা।’
বাংলা গদ্যকে ঘরােয়া রসের ভিয়েনে চড়িয়ে তিনি রূপকথা আর কথকতার মিশেল দিয়ে বানিয়েছেন কথ্যগদ্য। চলিত গদ্যের হাত থেকে তার জাত ভিন্ন। অবলীলায় তাই সেখানে ব্যবহৃত হয়েছে অপভ্রষ্ট শব্দাবলী (স্ল্যাং)। কিন্তু কালীপ্রসন্নের রচনায় স্ল্যাং যেমন রুচিগত বিতর্কের কারণ হয়, বা প্রমথ চৌধুরীর স্ল্যাং হয় বুদ্ধিভারে রসহীন, কিংবা বিবেকানন্দের স্ল্যাং কখনাে কখনাে রামকৃষ্ণের প্রভাবে হয়ে ওঠে গ্রাম্য, অবনীন্দ্রনাথের স্ল্যাং রঙে রসে তার থেকে বহু পৃথক। অবনীন্দ্রের স্ল্যাং সেই নির্মিতি, যেখানে ঘরােয়া রসের নির্মল অন্তরঙ্গতা; সেই ফ্ল্যাঙে রজঃ বা তমাের প্রকাশ নেই, সত্ত্বগুণের শুভ্রতায় তা উফল। উদাহরণ—
‘গােদা চিল সারাদিন বসে ভাবত আর থেকে থেকে
চিললাত—চির আঁচির, পাচির, মাসির।’
তার অসাধারণ কথনরীতি- ‘হনুমান কি কল্প, শুনিবা কল’। তাঁর ভাষায় কথকতা ভঙ্গির এই গদ্যের নাম ‘পরণকথা’ নয়, তা যেহেতু পুঁথি থেকে পড়তে হয়, তাই তার নাম হয় ‘পড়নকথা’। কথকতা শব্দ-সুরের মায়া, রূপকথার কল্পলােক; আর ছবির রূপলােকের সংমিশ্রণে অবনীন্দ্রনাথের রচনাগুলি এই অন্য স্বাদ নিয়ে আসে, যা বাংলা সাহিত্যেই অনন্য। রাজপুত-কাহিনীর বই ‘রাজকাহিনী’ তাে প্রায় মুঘল-রাজপুত মিনিয়েচার পেন্টিং। ‘নালকে’র বর্ণনায় যে বারবার সাদা ধোঁয়ার মতো কুয়াশা সব দৃশ্যকে অস্পষ্ট করে রাখে, তা তাে অবনঠাকুরের ওয়াল পেন্টিংয়ের সমগােত্রীয়।
তবে শুধু রূপকথা ধর্মিতা, চিত্রধর্মিতা বা ঘরােয়া কথ্যভঙ্গি ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যগুলি চিহ্নিত করে অবনীন্দ্রনাথের গদ্যভাষার বহুমাত্রিকতাটিকে ধরা যাবে না। একদিকে ভারতশিল্প’, ‘ভারত শিল্পের ষড়ঙ্গ’, ‘বাগীশ্বরী শিল্প-প্রবন্ধাবলী’, অন্যদিকে ‘ভূতপত্রীর দেশ’, ‘বৃক ও মেষপাল’, ‘চাইবুড়াের পুথি’ ইত্যাদি সালা বা পুথি; একদিকে ‘রাজকাহিনী’ বা ‘নালক’, অন্যদিকে ‘বুড়াে আংলা’ বা ‘খাতাঞ্চির খাতা’; একদিকে ‘ঘরােয়া’, ‘জোড়াসাঁকোর ধারে’ ইত্যাদি রবীন্দ্রস্মৃতি বা ঠাকুরবাড়ির স্মৃতিকথা’ অন্যদিকে ‘চটুজলদি কবিতা’র মতাে পদ্য বা ছড়া; একদিকে রাধাকৃষ্ণ বিষয়ক চিত্রকলা বা মুঘল-রাজপুত মিনিয়েচার; অন্যদিকে মুখােস বা কুটুম-কাটামের অপরূপ জগৎ- এইসব মিলিয়েই তাে অবনীন্দ্রনাথের পরিচয়। অবনীন্দ্রনাথের সাহিত্য-কৃতী সম্পর্কে সুকুমার সেনের শ্রদ্ধার্ঘ্য—
‘বর্তমান শতাব্দের বহু শ্রেষ্ঠ ও কৃতী লেখক ভারতীর আসরে ভর করিয়াই সৃষ্টিসার্থকতা লাভ করিয়া ছিলেন। ইহাদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য হইতেছে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৭১-১৯৫১)। ইনিই ছিলেন ভারতীর আসরে উপাত্ত্যপালার মূল অধিকারী। বর্তমান শতাব্দের দ্বিতীয়-তৃতীয় দশকে ভারতীকে আশ্রয় করিয়া যে সাহিত্যগােষ্ঠী জন্মিয়াছিল তাহার চৈত্ত্যগুরু রবীন্দ্রনাথ এবং দীক্ষাগুরু অবনীন্দ্রনাথ।’ [অবনীন্দ্রনাথ ও আর্টের প্রভাব]