সংবেদনের ধর্ম বা লক্ষণকে ভিত্তি করে সংবেদনের মধ্যে পার্থক্য করা হয়। এই ধর্ম দুটি দিক থেকে বিচার করা হয়— [1] গুণগত ধর্ম এবং [2] পরিমাণগত ধর্ম।
[১] গুণগত ধর্ম: মানবদেহে যে বস্তুটির সংবেদন হচ্ছে তাকে গুণ বলে। যেমন—স্বাদজ সংবেদনের গুণ হল যে স্বাদ আমরা পাচ্ছি। শ্রবণ সংবেদনের গুণ হল যে শব্দটি আমরা শুনতে পাচ্ছি।
গুণের দিক দিয়ে সংবেদনকে দু-ভাগে ভাগ করা যায়—
চোখ ও কানের সংবেদন বিভিন্ন জাতিগত সংবেদন, আবার লাল রঙের সংবেদন ও হলুদ রঙের সংবেদন একই জাতির উপজাতিগত সংবেদন।
[২] পরিমাণগত ধর্ম: পরিমাণগত দিক থেকে সংবেদনের পার্থক্য চার প্রকারের হতে পারে। যেমন, তীব্রতা, স্পষ্টতা, স্থিতি ও ব্যাপ্তি।
-
তীব্রতা: সংবেদনের পরিমাণগত ধর্ম হল তীব্রতা। বাস্তবে দেখা যায় সংবেদনের তীব্রতা উদ্দীপকের শক্তির ওপর নির্ভর করে, মেঘগর্জনের প্রবল শব্দ এবং বাড়িতে সাধারণভাবে কথা বলার শব্দের মধ্যে যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় তা হল তীব্রতার পার্থক্য।
-
স্পষ্টতা: সংবেদনের আর-একটি ধর্ম হল স্পষ্টতা। বাস্তবে দেখা যায়, কোনাে কোনাে সংবেদন বেশ স্পষ্ট, আবার কোনাে কোনাে সংবেদন তত স্পষ্ট নয়।
-
স্থিতি: একটি সংবেদন যতক্ষণ পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছে তাকে ওই সংবেদনের স্থিতি বা স্থায়িত্ব বলে। কোনাে সংবেদন ক্ষণিকের জন্য স্থায়ী হয়, আবার কোনাে সংবেদন কিছুকালের জন্য স্থায়ী থাকে।
-
ব্যাপ্তি: সংবেদন যতটা স্থান জুড়ে হয় তাকেই সংবেদনের ব্যাপ্তি বলে। ইন্দ্রিয়ের কতটা অংশ উদ্দীপকের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে তার ওপর। সংবেদনের ব্যাপ্তি নির্ভর করে।
আধুনিক শিক্ষায় সংবেদনের গুরুত্বকে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। জ্ঞান অর্জনের প্রথম দ্বার হল ইন্দ্রিয় এবং প্রথম স্তর হল সংবেদন| এখানে সংবেদনের সঙ্গে শিক্ষার সম্পর্ক ব্যাখ্যা করা হল—
(১) শিক্ষার উপকরণ ও সংবেদন: আধুনিককালে শিক্ষাক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাসহায়ক উপকরণ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর মূল কারণ হল ইন্দ্রিয়গুলিকে বেশি করে কাজে লাগিয়ে সংবেদনকে শক্তিশালী করা।
(২) সক্রিয়তা ও সংবেদন: ‘সব্রিয়তার নীতি শিক্ষাবিজ্ঞানে একটি পরীক্ষিত সত্য। সংবেদন গ্রহণে শিক্ষার্থীদের সক্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষাপরিকল্পনা করলে, শিক্ষা অনেক বেশি ফলপ্রসূ হয়।
(৩) শিক্ষার মাধ্যম ও সংবেদন: কোনো বস্তুকে বিভিন্ন ইন্দ্রিয়জাত সংবেদনের মাধ্যমে উপস্থাপিত করলে সেই বস্তু সম্পর্কে জ্ঞান আরও স্থায়ী ও সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেই কারণে আধুনিক শিক্ষাবিদরা Teach through the senses’ এর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। শিক্ষা ক্ষেত্রে বহুমাধ্যমের (মাল্টি মিডিয়া) ব্যবহারের উদ্দেশ্য হল শিক্ষাদানে একাধিক সংবেদনের ব্যবহার।
(৪) শিক্ষার্থীর পরিপূর্ণ বিকাশ ও সংবেদন: আধুনিক শিক্ষাবিদদের মতে, শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশসাধনই শিক্ষার লক্ষ্য। সঠিক এবং শক্তিশালী সংবেদন শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশে সাহায্য করে।
(৫) শিক্ষাসঞ্চালন ও সংবেদন: শিক্ষক শ্রেণিশিখনের সময় অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সালিত করার চেষ্টা করেন। এই সঞ্চালনে সংবেদনের তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা সম্পর্কে শিক্ষক বিশেষভাবে অবহিত হবেন।
ওপরের আলােচনা থেকে বলা যায়, সংবেদন ইন্দ্রিয়নির্ভর জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।