আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ২ আগস্ট দক্ষিণবঙ্গের কপােতাক্ষ নদীতীরবর্তী রাডুলি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। অসুস্থতার জন্য তার প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশােনায় সাময়িক ছেদ ঘটলেও তিনি দেশ-বিদেশের ইতিহাস, ভাষা, পুরাতত্ত্বের পাঠ গ্রহণ করেন। পরে সুস্থ হয়ে এন্ট্রান্স পাস করে মেট্রোপলিটন ইন্সটিটিউশনে পড়ার সময় প্রেসিডেন্সি কলেজের রসায়নের অধ্যাপক আলেকজান্ডার পেডলার ও পদার্থবিদ জন এলিয়টের বক্তৃতা শুনে ক্রমশ তিনি রসায়নের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও প্রাণীবিদ্যার পাঠ গ্রহণ করেন। সেখানে রসায়নের শিক্ষক হিসেবে তিনি পান আলেকজান্ডার ক্রাম ব্রাউন, ড. জন গিবসন, ড. লিওনার্ড ডবিন ও পি জি টেইটকে। ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে বি এসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি Conjugated Sulphates of Copper Magnesium-group: A study of Isomorphous mixtures and Molecular Combinations বিষয়ে গবেষণায় নিয়ােজিত হন। এরপর ডক্টরেট লাভ করে তিনি ইউনিভার্সিটি। কেমিক্যাল সােসাইটির সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।
প্রেসিডেন্সি কলেজে অস্থায়ী সহকারী রসায়নের অধ্যাপকের পদে থাকাকালীন প্রফুল্লচন্দ্র ছাত্রদের চরম অধ্যবসায়ের সঙ্গে পড়িয়ে তাদেরকে তিনি কৌতুহলী করে তােলেন। ক্রমে তিনি তেলজাতীয় খাদ্যে এবং দুধে ভেজাল নির্ধারণের পদ্ধতি আবিষ্কারে সাফল্য অর্জন করেন, বাঙালির ব্যবসা-বিমুখতা দূর করতে তিনি ‘বেঙ্গল কেমিক্যালস’ গড়ে তুললেন। সারা ভারতে এত বড়াে সালফিউরিক অ্যাসিড তৈরির কারখানা আর কোথাও ছিল না। এ ছাড়া তিনি ক্যালকাটা পটারি, বেঙ্গল এনামেল, চক্রবর্তী-চ্যাটার্জি অ্যান্ড কোং ইত্যাদি স্থাপনে পরামর্শ ও উৎসাহ দেন। ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি পারদঘটিত নতুন যৌগ মারকিউরাস নাইট্রেট আবিষ্কার করেন। একদল ছাত্র গবেষকের সাহায্যে প্রফুল্লচন্দ্র ভারতে একটি নব্য রাসায়নিক গােষ্ঠী গড়ে তুলতে সমর্থ হন। সেই দলে ছিলেন বিমানবিহারী দে, নীলরতন ধর, রসিকলাল দত্ত, প্রিয়দারঞ্জন রায়, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাদ সাহা প্রমুখ। ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি বিজ্ঞান কলেজে পালিত অধ্যাপকের পদ গ্রহণ করেন। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের ১৬ জুন তাঁর জীবনাবসান হয়।