আন্তর্জাতিক মহলে অবগতির জন্য জগদীশচন্দ্র বসু তাঁর মৌলিক প্রবন্ধগুলি ইংরেজিতে লিখলেও বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদান অত্যন্ত উল্লেখযােগ্য। তার অব্যক্ত বইটি সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ তাকে চিঠিতে লেখেন—“যদিও বিজ্ঞানবাণীকেই তুমি তােমার সুয়ােরাণী করিয়াছ, তবু সাহিত্য সরস্বতী সে পদের দাবী করিতে পারিতকেবল তােমার অনবধানেই সে অনাদৃত হইয়া আছে (৮ অগ্রহায়ণ, ১৩২৮)”। অব্যক্ত গ্রন্থটি ১৩২৮ (১৯২১ খ্রিস্টাব্দে) বঙ্গাব্দে প্রকাশিত হয়। আজীবন একনিষ্ঠ বিজ্ঞানসেবী জগদীশচন্দ্র মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চার প্রচার ও প্রসারে আজীবন সচেষ্ট ছিলেন। বিজ্ঞান সাধনা বিষয়কে কাব্যিক ভাষায়, গভীর দর্শন সহযােগে তিনি সাহিত্যে প্রকাশ করেছেন। তার স্মরণীয় প্রবন্ধের মধ্যে রয়েছে মায়ুসুত্রে উত্তেজনা প্রবাহ, ভাগীরথীর উৎস সন্ধানে প্রভৃতি।
শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়ের প্রথম সর্বাধ্যক্ষ শ্রী জগদানন্দ রায় ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১৮ সেপ্টেম্বর নদিয়া জেলার কৃয়নগরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন অভয়ানন্দ রায়। স্থানীয় স্কুল কলেজেই জগদানন্দ লেখাপড়া করেন। কিছুদিন গড়াই-এর একটি মিশনারি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। বিজ্ঞানবিষয়ক প্রাবন্ধিক হিসেবে তিনি সাহিত্যক্ষেত্রে সুপরিচিত। ‘সাধনা পত্রিকায় তাঁর রচনা মুদ্রণের সুবাদে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তার পরিচিতি ঘটে। কবিরই আগ্রহে জগদানন্দ প্রথমে শিলাইদহ জমিদারির কর্মচারীর পদে যােগ দেন। ক্রমে তিনি কবির ছেলেমেয়েদের বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ের গৃহশিক্ষক ও ব্রম্মচর্যাশ্রমের শিক্ষক নিযুক্ত হন। তিনি ব্রহ্মচর্য বিদ্যালয় ও বিশ্বভারতীর গ্রন্থনবিভাগে অদম্য উৎসাহে অপরিমেয় কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে জগদানন্দ বাংলায় বিজ্ঞানের সত্য প্রচারের বিপুল দায়িত্ব পালন করেন। ১৩৩০ বঙ্গাব্দে নৈহাটিতে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলনে বিজ্ঞান শাখার সভাপতি ছিলেন তিনি। তাঁর লেখা উল্লেখযােগ্য বইপত্রের মধ্যে রয়েছে গ্রহনক্ষত্র, প্রাকৃতিকী, বৈজ্ঞানিকী, পােকামাকড়, জগদীশচন্দ্রের আবিষ্কার, বাংলার পাখী, শব্দ ইত্যাদি। ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জুন শান্তিনিকেতনে তাঁর দেহাবসান হয়।