জল বায়ুমণ্ডল থেকে পৃথিবীপৃষ্ঠে, পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে পুনরায় বায়ুমণ্ডলে আবর্তিত হয়। জলের এই বিরামহীন চক্রাকার আবর্তনকে জলচক্র বলে। অন্যভাবে জলচক্রের সংজ্ঞায় বলা যেতে পারে, জলের ভৌত পরিবর্তন ও বিনিময়ের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডল, শিলামণ্ডল ও বারিমণ্ডলের মধ্যে জলের যে-সমতা রক্ষিত হয় তাকে জলচক্র বলে।
জলচক্রের পর্যায় : বাষ্পীভবন, ঘনীভবন ও অধঃক্ষেপণের মাধ্যমে জলচক্র সম্পাদিত হয়। এই তিনটি প্রক্রিয়ার যে-কোনাে একটি প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হলে জলচক্রের ভারসাম্য নষ্ট হয়। সূর্যের কিরণে জল বাষ্পে পরিণত হয়। বায়ুমণ্ডলের ওই বাষ্প অনুকূল পরিবেশে ঘনীভূত হয়ে জলভাগ ও স্থলভাগে বৃষ্টিপাত বা তুষাররূপে পতিত হয়। অধঃক্ষেপণের এক অংশ মৃত্তিকা শােষণ করে ভৌমজলের ভাণ্ডার গড়ে তােলে, এক অংশ পুকুর, হ্রদ, নদীতে সঞ্চিত হয় এবং বাকি অংশ পৃষ্ঠপ্রবাহরূপে সমুদ্রে ফিরে যায়। পুনরায় ওই জল বাষ্পীভূত হয়ে বায়ুমণ্ডলে ফিরে যায়। প্রকৃতিতে জল এইভাবে আবর্তিত হয়।
মানবজীবনে কাস্ট ভূমিরূপের প্রভাব
[1] খনিজ সম্পদের জোগান হিসেবে: কাস্ট অঞ্চল চুনাপাথর, ডলােমাইট, ক্যালসাইট প্রভৃতি খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। লােহা ইস্পাত ও বিভিন্ন রাসায়নিক শিল্পে এসব খনিজ দ্রব্যের চাহিদাকে কেন্দ্র করে কর্মসংস্থানের সুযােগ ঘটে।
[2] আশ্রয়স্থল হিসেবে: চুনাপাথর অঞ্চলের গুহা মানুষের আশ্রয়স্থল, পবিত্র স্থান ও উপাসনার স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
[3] জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে: গুহার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদী ও প্রস্রবণের জল বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হয়।
[4] পর্যটন শিল্পে: চুনাপাথর অঞ্চলের গুহাকে ঘিরে পর্যটন শিল্প ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করেছে।
[5] পশুপালনে: কাস্ট অঞ্চলের মাটি অগভীর ও পাথুরে হওয়ায় মৃত্তিকার ক্ষয় বেশি হয়। এই অঞ্চলের মাটি আলগা হওয়ায় জল সহজেই গভীরে চলে যায়। জলের সঙ্গে মাটির পুষ্টিমৌলও ধৌত প্রক্রিয়ায় মাটির নীচে চলে যায়। তাই মাটি অনুর্বর হয়ে পড়ে। এই কারণে স্বাভাবিক উদ্ভিদ তেমন জন্মাতে পারে না। তৃণই এই অঞ্চলের প্রধান উদ্ভিদ। ফলে তৃণের ওপর নির্ভর করে এই অঞ্চলের মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে।
[6] শিল্পে: প্রস্রবণের জলের ওপর নির্ভর করে পিক ক্যাভার্ন (ডার্বিশায়ার), কেন্টাকিতে পাতন কারখানা (Distillery) গড়ে উঠেছে।
[7] যোগাযোগ ব্যবস্থায়: বন্ধুর ভূপ্রকৃতি, দ্রবণজনিত ধস প্রভৃতি প্রতিকূল পরিবেশের জন্য যােগাযােগ ব্যবস্থা তেমন উন্নত নয়। ফলে, সামগ্রিকভাবে এই অঞ্যলের উন্নয়ন সম্ভব হয়নি।