স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রের গতিপ্রকৃতি প্রধানত তিনটি নিয়ন্ত্রক দ্বারা নির্ধারিত হয়- [1] ভূতাত্ত্বিক গঠন, [2] ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া এবং [3] সময় বা পর্যায়।
[1] ভূতাত্নিক গঠন : ভূতাত্বিক গঠন বলতে উইলিয়াম মরিস ডেভিস শিলার কাঠিন্য, সংযুতি, চ্যুতি, ভাজ, নতি, প্রবেশ্যতা প্রভৃতির সম্মিলিত অবস্থাকে বুঝিয়েছেন।
[2] প্রক্রিয়া : প্রক্রিয়া বলতে ডেভিস ভূপৃষ্ঠের ওপর ক্রিয়াশীল ভূমিরূপ গঠনকারী সমস্ত প্রাকৃতিক শক্তিকে বুঝিয়েছেন। প্রাকৃতিক শক্তিগুলিকে প্রধানত দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়一
-
অন্তর্জাত প্রক্রিয়া : ভূ-আলােড়ন ও অগ্ন্যুৎপাত প্রভৃতি।
-
বহির্জাত প্রক্রিয়া : আবহবিকার, পুঞ্জিত স্থলন এবং সমুদ্রতরঙ্গ, নদী, বায়ু, হিমবাহ, সমুদ্রস্রোত প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তিসমূহ।
[3] সময় বা পর্যায় : সময় বা পর্যায় বলতে ডেভিস ভূমিরূপ ক্রমবিকাশের সময় বা ব্যাপ্তিকালকে বুঝিয়েছেন। তিনি ভূমিরূপ পর্যায়কে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করেছেন- যৌবন পর্যায়, পরিণত পর্যায় ও বার্ধক্য পর্যায়।
সমপ্রায় ভূমি (পেনিপ্লেন) : (১) Pene একটি ল্যাটিন শব্দ, এর অর্থ প্রায় এবং Plain শব্দের অর্থ সমভূমি অর্থাৎ প্রায় সমভূমি বা সমপ্রায় সমভূমি। (২) স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রের বার্ধক্য পর্যায়ে নদীর কার্যের ফলে যে বৈচিত্র্যহীন সমভূমির সৃষ্টি হয় তাকে পেনিপ্লেন বলে। (৩) আর্দ্র জলবায়ু অঞ্চলে পেনিপ্লেন সৃষ্টি হয়। (৪) পেনিপ্লেন সৃষ্টিতে আবহবিকার ও পুঞ্জিত স্খলন অংশগ্রহণ করলেও নদীর কাজই প্রাধান। (৫) পেনিপ্লেন মৃদু উত্তল প্রকৃতির। (৬) প্রায় বৈচিত্র্যহীন সমপ্রায় সমভূমি সৃষ্টি হয়। ক্ষয় প্রতিরােধী শিলায় গঠিত অনুচ্চ টিলাগুলিকে মােনডনক বলে। মােনাড়নকই সমপ্রায় ভূমির মাঝে কিছুটা বৈচিত্র্য আনে।
পাদ সমভূমি (পেডিপ্লেন) : (১) জার্মান শব্দ পেডির অর্থ পাদদেশ এবং প্লেন শব্দের অর্থ সমভূমি। অতএব পেডিপ্লেন শব্দের অর্থ হল পাদদেশের সমভূমি। (২) মরু অঞ্চলে উচ্চভূমির সম্মুখভাগে আবহবিকার, জলধারা ও বায়ুর মিলিত কার্যের ফলে শিলাখণ্ড সঞ্জিত হয়ে যে বিস্তীর্ণ সমভূমি সৃষ্টি হয়, তাকে পেডিপ্লেন বলে। (৩) শুষ্ক মরু বা মরুপ্রায় জলবায়ুতে পেডিপ্লেন সৃষ্টি হয়। (৪) আবহবিকার, পুঞ্জিত স্বলন, জলধারা ও বায়ুপ্রবাহ একযােগে পেডিপ্লেন সৃষ্টির সহায়ক। (৫) পেডিপ্লেন কিছুটা অবতল প্রকৃতির। (৬) মরু অঞ্চলে ক্ষয়ের শেষ পর্যায়ে অসংখ্য পলল ব্যজনী সংযুক্ত হয়ে বিস্তীর্ণ পেডিপ্লেন গঠন করে। এরই মাঝে ক্ষয় প্রতিরােধী জলবিভাজিকার শেষ চিহ্ন হিসেবে ইনসেলবার্জ অবস্থান করে।