মাটি সৃষ্টি এক জটিল ও সংশ্লেষকারী প্রক্রিয়া। মাটি সৃষ্টির প্রথম পর্বে আবহবিকারের ফলে শিলা চুর্ণবিচুর্ণ হয়ে রেগােলিথে পরিণত হয়। পরবর্তী পর্বে এই অসংবদ্ধ শিলাচূর্ণ বা রেগােলিথ বহুকাল ধরে কতকগুলি জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়ে মাটিতে পরিণত হয়। কার্যকর এইসব প্রক্রিয়াকে একত্রে মৎউৎপাদী প্রক্রিয়া বা মৌলিক প্রক্রিয়া বলে। সাইমনসন (Simonson, 1959) মৃত্তিকা-গঠনকারী প্রাথমিক বা মৌলিক প্রক্রিয়াগুলিকে চারটি প্রধান ভাগে ভাগ করেছেন।
(১) সংযােজন : বৃষ্টিপাত ও তুষারপাতের ফলে রেগােলিথের মধ্যে জল জমা হয়। এ ছাড়া, উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহাবশেষ জৈব পদার্থরূপে সঞ্চিত হয়। রাসায়নিক আবহবিকারে শিলা বিয়ােজিত হয়ে বিভিন্ন খনিজের সংযােজনও ঘটায়।
(২) অপসারণ : বাষ্পীভবনের ফলে জল ও ভূমিক্ষয়ের মাধ্যমে আলগা পদার্থসমূহ অপসারিত হয়। এ ছাড়া রেগােলিথে উপস্থিত জৈব পদার্থ জারিত হলে জল ও কার্বন ডাইঅক্সাইড সৃষ্টি হয় এবং ওই কার্বন ডাইঅক্সাইড বায়ুতে মিশে যায়।
(৩) রূপান্তর : রেগােলিথে উপস্থিত প্রাথমিক খনিজ পদার্থগুলি বিয়ােজিত হয়ে গৌণ খনিজে রূপান্তরিত হয় এবং ভূপৃষ্ঠে সঞ্চিত জৈব পদার্থ- হিউমিফিকেশন ও খনিজকরণ পদ্ধতির মাধ্যমে রূপান্তরিত হয়।
-
হিউমিফিকেশন : উদ্ভিদ বা প্রাণীর দেহাবশেষ ভূপৃষ্ঠে অপরিণত জৈব পদার্থ (Raw Organic Matter) হিসেবে সঞ্চিত হয়। ওইসব পদার্থ আণুবীক্ষণিক জীব দ্বারা বিয়ােজিত হয় এবং তা ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে এক কালাে রঙের জটিল পদার্থ সৃষ্টি করে। একে হিউমাস বলে। হিউমাস সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে হিউমিফিকেশন বলে। এই প্রক্রিয়া পরিবেশের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। এ কারণে জলাভূমিতে অবায়ুজীবী হিউমিফিকেশন এবং মাটিতে চুনজাতীয় পদার্থের অভাব থাকলে অম্ন হিউমিফিকেশন ঘটে থাকে। এ ছাড়া, আর্দ্র ক্রান্তীয় অঞ্চল ও মরুপ্রায় অঞ্চলেও বিশেষ ধরনের হিউমিফিকেশন ঘটে থাকে।
-
খনিজকরণ : হিউমিফিকেশনের ফলে সৃষ্ট হিউমাস বায়ুর অক্সিজেন দ্বারা জারিত হয়ে জল, কার্বন ডাইঅক্সাইড ও হিউমাস গঠনকারী খনিজ পদার্থে রূপান্তরিত হয়। হিউমাস গঠনকারী খনিজগুলি এই প্রক্রিয়ায় পুনরায় মাটিতে ফিরে আসে। মৃত্তিকা গঠনকারী এই প্রক্রিয়াকে খনিজকরণ বলে।
(৪) স্থানান্তর: মৃত্তিকা পরিলেখে (Profile) মৃত্তিকার উপাদানগুলির স্থানান্তর ঘটে দুটি পদ্ধতিতে— এলুভিয়েশন এবং ইলুভিয়েশন।
-
এলুভিয়েশন বা পরিবহণ প্রক্রিয়া : মৃত্তিকার ঊধ্বস্তরের কিছু কিছু খনিজ বৃষ্টির জলে দ্রবীভূত হয়ে অথবা ভাসমান অবস্থায় নীচের স্তরে নামতে থাকে, একে এলুভিয়েশন বলে। এর ফলে মৃত্তিকার উর্ধ্বস্তরে ওইসব খনিজের অভাব ঘটে। এইরূপ ওপরের স্তরটিকে এলুভিয়েটেড স্তর বা এলুভিয়েটেড হােরাইজন (A) বলে। যান্ত্রিক ও রাসায়নিক উভয় পদ্ধতিতে এলুভিয়েশন হয়। ধৌত প্রক্রিয়ায় পদার্থের অধােগমন ঘটে। এই প্রক্রিয়ায় মাটির A স্তর সৃষ্টি হয়।
-
ইলুভিয়েশন বা সঞ্চয় প্রক্রিয়া : মৃত্তিকার উধ্বস্তর থেকে যান্ত্রিক ও রাসায়নিক পদ্ধতিতে দ্রবীভূত এবং ভাসমান খনিজগুলি মৃত্তিকার নিম্নস্তরে সঞ্চিত হতে থাকে। এই পদ্ধতিকে ইলুভিয়েশন বা অভিবাসন বা সঞ্চয় প্রক্রিয়া বলে। ওই স্তরটিকে ইলুভিয়েটেড হােরাইজন বলা হয়। এই স্তরটি B হােরাইজন নামে পরিচিত।