কোনাে অঞ্চলে স্থানীয়ভাবে মাটি সৃষ্টির উপাদানগুলির তারতম্য দেখা দিলে উপাদানগুলি পুনরায় মাটি গঠন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয় এবং নতুন ধরনের মাটি সৃষ্টি করে। অঞ্চলের মধ্যে স্থানীয়ভাবে এ ধরনের মাটি গড়ে ওঠায় একে আন্তঃআঞ্জুলিক মাটি (Intrazonal Soil) বলা হয়।
জলাভূমির মৃত্তিকা : বিভিন্ন প্রকার জলাভূমিতে অবায়ুজীবী ব্যাকটেরিয়া দ্বারা জৈব পদার্থ বিয়ােজিত হয়ে যে কালচে রঙের মৃত্তিকা সৃষ্টি হয়, তাকে জলাভূমির মৃত্তিকা বলে। উদাহরণ পিট বা বগ মৃত্তিকা।
চুনময় মৃত্তিকা : শিলাতে চুন বা চুনজাতীয় পদার্থের প্রাধান্য থাকলে চুনময় মৃত্তিকা গড়ে ওঠে। যেমন— চুনাপাথর বা চক শিলা থেকে উৎপন্ন রেনজিনা (Rendzina) মৃত্তিকা। এই মৃত্তিকা সাদা, ধূসর ও বাদামি বর্ণের হয়।
লবণাক্ত মৃত্তিকা : মাটির উপরিভাগে লবণের সঞ্চয় ঘটলে লবণাক্ত মৃত্তিকা গড়ে উঠে। শুষ্ক ও শুষ্কপ্রায় অঞ্চলে কম বৃষ্টিপাতের জন্য ধৌত প্রক্রিয়া কম হয়। এর ফলে লবণের সঞয় ঘটে। আবার বাষ্পীভবন বেশি হওয়ায় কৈশিক প্রক্রিয়ায় দ্রবীভূত লবণ ওপরে উঠে আসে। এভাবে লবণাক্ত মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়। এই প্রকার মাটি ক্ষারধর্মী হয়। সােলানচাক ও সােলনেতজ-এই মাটির উদাহরণ।
আঞ্চলিক বা বলয়িত মাটি : (১) মাটি গঠনে জলবায়ু ও স্বাভাবিক উদ্ভিদের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। অন্যান্য উপাদানের প্রভাব প্রায় থাকে না। (২) একই প্রকার জলবায়ু অঞ্চলে মাত্র এক ধরনের মাটির উৎপত্তি ঘটে। (৩) এই শ্রেণির মাটি পরিণত ও একাধিক সুস্পষ্ট স্তরবিশিষ্ট। (৪) মাটি গঠন প্রক্রিয়াসমূহের কাজের শেষ পর্যায়ে এই মাটি সৃষ্টি হয়। (৫) মাটির নীচের দিকে আবহবিকারের বিস্তারলাভের ওপর। এই মাটির গভীরতা নির্ভর করে। তবে, সাধারণত এটি বেশ পুরু হয়। (৬) এই মাটি আদি শিলার ওপর স্বস্থানিক হলেও জনক শিলার কোনাে চিহ্নই মাটিতে থাকে না।
অনাঞ্চলিক বা অ-বলয়িত মাটি : (১) মাটি গঠনে নিষ্ক্রিয় ও সক্রিয় – কোনাে উপাদানের প্রভাব থাকে না। (২) উপাদানগুলির সঙ্গে কোনাে সম্পর্ক না থাকায় একই প্রকার মাটি সব জলবায়ুতে দেখা যেতে পারে। (৩) এই শ্রেণির মাটি অপরিণত ও স্তরবিহীন। (৪) মাটি গঠনের কাজ সবসময় চলতে থাকে। প্রক্রিয়াসমূহ সবসময় ক্রিয়াশীল থাকে। (৫) পরিবাহিত দ্রব্যের জোগান ও ভূমিঢালের প্রকৃতির ওপর মাটির গভীরতা নির্ভর করে। তাই এই মাটি কয়েক সেমি থেকে কয়েক মিটার পর্যন্ত পুরু হয়। (৬) আদি শিলা থেকে অনেক দূরে পরিবাহিত হয় এই মাটি। তাই এটি অস্বস্থানিক।