বিভিন্ন কারণে জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ তাপর্যপূর্ণ। তাই জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে একাধিক পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। যে যে কারণে জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ প্রয়ােজন সেগুলি নিম্নরূপ一
(১) জৈব সম্পদের জোগান বজায় রাখতে : বিভিন্ন জৈব সম্পদের (যেমন- খাদ্য ওষুধ, কাঠ) উৎসের ক্ষেত্রই হল জীববৈচিত্র্য। সেইসব জৈব সম্পদগুলির জোগান যাতে প্রকৃতিতে অক্ষুগ্ন থাকে সেজন্য জৈব পদার্থের সংরক্ষণ প্রয়ােজন।
(২) জলচক্রের ক্রিয়াশীলতাকে বজায় রাখতে : ভৌমজলের স্থিতিশীলতা ও মৃত্তিকাস্থ জলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে উদ্ভিদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তা ছাড়া জলের পৃষ্ঠ প্রবাহের অন্যতম নিয়ন্ত্রক হল উদ্ভিদ। ফলে জলচক্রের ক্রিয়াশীলতা বজায় থাকা বহুলাংশে উদ্ভিদের সংখ্যার ওপর নির্ভরশীল।
(৩) মৃত্তিকার ক্ষয়রোধে ও গুণগত মান বজায় রাখতে : জীববৈচিত্র্য মৃত্তিকার ক্ষয়কে রােধ করে। মৃত্তিকায় বসবাসকারী বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদ মৃত্তিকার গঠন, জলধারণ ক্ষমতা এবং পুষ্টিমৌল প্রভৃতির জোগান বজায় রাখে।
(৪) পুষ্টিমৌলগুলি চক্রায়মন বজায় রাখতে : বিভিন্ন পুষ্টিমৌলগুলি চক্রাকার পথে প্রকৃতি থেকে জীবদেহে এবং জীবদেহ থেকে পুনরায় প্রকৃতিতে আবর্তিত হয়। পুষ্টিমৌলের এই চক্রাকার আবর্তন যাতে বজায় থাকে সেক্ষেত্রে জীববৈচিত্র্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
(৫) দুষণ কমাতে : জীববৈচিত্র্যের স্থিতিশীল পরিবেশের দূষণ কমাতে সাহায্য করে।
(৬) জলবায়ুর স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে : স্থানীয় বা আঞ্চলিকভাবে জলবায়ুর স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে জীববৈচিত্র্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন—অরণ্যের পরিবেশ শীতল রাখতে ও বৃষ্টিপাত ঘটাতে উদ্ভিদ সাহায্য করে।
পৃথিবীর মধ্যে সর্বাধিক জীববৈচিত্র্য লক্ষ করা যায় ক্রান্তীয় অঞ্চলে। এই অঞ্চলের অনেক প্রজাতিই এখনও মানুষের অজানা। এই অঞ্চলে জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধির প্রধান কারণগুলি হল一
(১) স্থিতিশীল জলবায়ু : পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় এই অঞ্চলের জলবায়ু স্থিতিশীল। বিভিন্ন ভূতাত্ত্বিক যুগেও এখানকার জলবায়ুর তেমন কোনও পরিবর্তন হয়নি। এর ফলে এখানে বিভিন্ন প্রজাতিগুলি দীর্ঘকাল ধরে তাদের অস্তিত্ব বজায় রেখেছে।
(২) উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু : এখানকার উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ জন্মানাের জন্য অনুকূল।
(৩) পর্যাপ্ত সূর্যালোক : সারাবছরই এখানে পর্যাপ্ত সূর্যালোেক পাওয়া যায়। তাই এখানে উদ্ভিদের সালােকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া খুব ভালাে হয় এবং অঙ্কুরােদগমও সহজ হয়। সেই কারণে এখানে বহুপ্রজাতি এবং বহুসংখ্যার উদ্ভিদ সমাবেশ দেখা যায়।
(৪) প্রজননের উচ্চ হার : এখানে বহু প্রজাতির জীবের একত্র সহবস্থান লক্ষ করা যায়। তা ছাড়া এক একটি প্রজাতির জীবের সংখ্যাও অনেক বেশি। সেই সমস্ত প্রজাতির মধ্যে মিলনের মাত্রাও বেশি হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই জীববৈচিত্র্য অনেক বেশি।