যে-কোনাে বিপর্যয় রােধে ধারাবাহিক কর্মসূচি গ্রহণ করাকে বিপর্যয় প্রশমন বলে। গৃহনির্মাণ, ভূমিব্যবহার, পরিবহণ ব্যবস্থা বিষয়ক নিয়মাবলি প্রভৃতি এইসব কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। প্রশমন প্রক্রিয়ার মূল উদ্দেশ্য হল বিপর্যয়ের প্রভাব হ্রাস বা নিয়ন্ত্রণ করা।
বিপর্যয় প্রশমনের জন্য যে সমস্ত কৌশল বা ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত সেগুলি সম্পর্কে আলােচনা করা হল一
(১) প্রস্তুতি বা প্রতিক্রিয়া : সরকার, সমাজ ও ব্যক্তিকে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যে-কোনাে অবস্থায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করাই হল প্রস্তুতির মূল কথা। বিপর্যয় প্রশমনে এই স্তরটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এটিকে অ্যাকশন প্ল্যান (Action Plan) বলা যেতে পারে। সঠিক প্রস্তুতি বিপর্যয় প্রশমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
(২) পূরণ : বিপর্যয় প্রশমনে এবং বিপর্যয়ের পরবর্তী সময়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার প্রক্রিয়ায় দুটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। প্রথমটি হল বিপর্যয় প্রশমন বিষয়ক পরিকল্পনা এবং বিপর্যয় পরবর্তী পুনর্গঠন বিষয়ক পরিকল্পনা। এই প্রক্রিয়ায় জনসাধারণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে যাতে জনসমর্থনের বিষয়টি প্রাধান্য পায়।
(৩) ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থার ভূমিকা (GIS) : প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাষ দেওয়া থেকে শুরু করে তার মােকাবিলা ও প্রশমন এবং পরবর্তী স্তরের সব কাজে Geographic Information System বা GIS গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে বিপর্যয় সম্পর্কে উপযুক্ত তথ্য পাওয়া যায়।
(৪) সেনাবাহিনীর ভূমিকা : ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড়, ধসসহ যে-কোনাে ধরনের বিপর্যয়ে দুর্গম জায়গায় সেনাবাহিনীর ভূমিকা অত্যন্ত জরুরি। কারণ তারা বিপর্যয় মােকাবিলায় ব্যবহৃত সবরকমের সরঞ্জামের সাথে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত থাকেন এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে কাজে নেমে পড়তে পারেন। উদ্ধার ও অত্যাবশ্যক সামগ্রীর সরবরাহ অব্যাহত রাখা, ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছানাের মত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে বিপর্যয়কে প্রশমন করতে সাহায্য করেন।
(৫) সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকা : বিপর্যয় মােকাবিলা, ত্রাণ, পুনর্বাসন এসব কাজে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে চাই সঠিক প্রচার। তাই এই জন্য সংবাদ মাধ্যম, বেতার, টেলিভিশন প্রভৃতির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এইসব মাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ জনমানসে খুবই প্রভাব বিস্তার করে। সংবাদ মাধ্যম মানুষকে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেয়। এ ছাড়া টেলিভিশনের মাধ্যমে বিনােদনের সঙ্গে বিপর্যয় প্রশমনের নানা কৌশল মানুষকে দেখানাে যায়। এর দ্বারা বিপর্যয় প্রশমন অনেকাংশে সফল হতে পারে।
(৬) গণসংগঠন : বিপর্যয় প্রশমনের ক্ষেত্রে গণসংগঠন দরকার। তবে এই গণসংগঠনের জন্য একাত্মবােধ ও নীতি নির্ধারণ খুবই প্রয়ােজন। বিপর্যয় প্রশমনের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত গণসংগঠন তৈরি করতে পারে।
(৭) নিবারণ : বিপর্যয় প্রশমনের জন্য বিপর্যস্ত মানুষের সমস্যার নিবারণ করা অত্যন্ত জরুরি, নাহলে বিপর্যস্ত মানুষের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকবে।
উপরােক্ত আলােচনা থেকে সহজেই অনুমান করা যায় যে বিপর্যয় হলে তার প্রশমন এবং পরবর্তী অবস্থায় তার মােকাবিলায় এইসব কর্মসূচি গ্রহণ করা অত্যন্ত প্রয়ােজন।