(১) দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি : শ্বেত বিপ্লবের ফলে ভারতে দুধ উৎপাদন উল্লেখযােগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে দুধ উৎপাদনে ভারত পৃথিবীতে প্রথম স্থানাধিকারী। বিগত 40 বছরে দুধের উৎপাদন 2 কোটি টন থেকে প্রায় 13 কোটি টনে পৌঁছেছে। আগে যেখানে মাথাপিছু দৈনিক দুধের জোগান ছিল মাত্র 100 গ্রামের কাছাকাছি 2011-12 খ্রিস্টাব্দে তা হয় 290 গ্রাম।
(২) কর্মসংস্থান বৃদ্ধি : শ্বেত বিপ্লবের প্রসারের ফলে গ্রামীণ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোেগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
(৩) আর্থিক সচ্ছলতা বৃদ্ধি : উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে পশুপালনের কাজে নিযুক্ত মানুষদের আর্থিক সচ্ছলতা অনেক বেড়েছে। তা ছাড়া গ্রামের বহু পুরুষ ও মহিলা নিজেদেরকে দুধ উৎপাদনের সাথে যুক্ত করে জীবিকা অর্জন করছে।
(৪) দোহ শিল্পের উন্নতি : দোহ শিল্প বা ডেয়ারি শিল্প পুরােপুরি দুধের জোগানের ওপর নির্ভরশীল। শ্বেত বিপ্লবের ফলে দুধের উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় দোহ শিল্পেরও উন্নতি দ্রুত ঘটে এবং এর সাথে দোহ শিল্পভিত্তিক গবেষণা কাজ, সহযােগী শিল্পের বিকাশ ও ত্বরান্বিত হয়েছে।
(৫) পরিকাঠামোর উন্নতি : দুধের উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিভিন্ন পরিকাঠামাের (যেমন কৃত্তিম প্রজনন কেন্দ্র স্থাপন ও গবাদি পশু বিমা প্রকল্প) উন্নতি ঘটে।
(৬) বাণিজ্য বৃদ্ধি : শ্বেত বিপ্লবের ফলে দোহ শিল্পজাত উপাদানগুলির বাণিজ্যে অংশগ্রহণ অনেক বেড়ে গেছে।
(১) উন্নত প্রজাতির পশুর অভাব : ভারতে দুগ্ধ উৎপাদনে পালিত পশুগুলি নিম্নমানের। অধিকাংশ ক্ষেত্রে উন্নতমানের গবাদি পশুর জন্য বিদেশের ওপর নির্ভর করতে হয়।
(২) রোগসংক্রমিত গবাদি পশু : গবাদি পশুগুলিকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রতিপালন করার জন্য বেশিরভাগ গবাদি পশু নানারকম রােগের শিকার হয়। রােগগ্রস্থ পশুদের দুধ উৎপাদন ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবেই হ্রাস পায়।
(৩) অনুন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা : ভারতে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলিতে পরিবহণ ব্যবস্থা তেমন উন্নত নয় তা ছাড়া পরিবহণ মাধ্যমগুলিও দ্রুতগতিসম্পন্ন নয়। দুধ পচনশীল বস্তু হওয়ায় তা দ্রুত পরিবহণ করতে না পারলে নানা সমস্যা দেখা দেয়। কৃষকরা সঠিক সময় দুধ বিক্রি করতে না পারায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
(৪) সঠিক বিপণনের অভাব : সারা দেশে এখন এখনও উপযুক্ত বিপণন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। যার ফলে সব স্থানে দুধের সরবরাহ করা যায়নি।
আমুল
গুজরাতের আনন্দ-এ সমবায়ভিত্তিক দোহ শিল্পকেন্দ্রটি ‘আমুল’ (Amul) নামে পরিচিত। 1946 খ্রিস্টাব্দে এই শিল্পকেন্দ্রটি গঠিত হয়। বর্তমানে গুজরাত তথা সারা ভারতের প্রায় 28 লক্ষ দুধ উৎপাদনকারী শ্রমিক আমুল-এর সাথে যুক্ত। দুধ উৎপাদনে আমুল মডেলই সারা ভারতে শ্বেত বিপ্লব ঘটাতে সাহায্য করেছে। বর্তমানে ভারতের প্রায় বেশিরভাগ এলাকাকে আমুল মডেলের অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা চলছে।