চা মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলের পার্বত্য ও উচ্চভূমির ফসল। চা চাষের অনুকূল অবস্থাগুলি হল一
(ক) চা উৎপাদনের ভৌগোলিক অবস্থা
(১) জলবায়ু :
-
বৃষ্টিপাত : চা চাষের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাতের প্রয়ােজন। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বছরে 150 থেকে 250 সেমি হলে চা চাষ ভালাে হয়।
-
উষ্ণতা : গ্রীষ্মকালে 27°সে.-এর বেশি উষ্ণতা হওয়া বাঞ্ছনীয়। মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলে উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় এই অঞ্চল চা উৎপাদনে খ্যাতিলাভ করেছে।
(২) মৃত্তিকা : উর্বর লােহাযুক্ত দোআশ মাটিই চা উৎপাদনে বিশেষ উপযােগী। চা গাছ মৃত্তিকার উর্বরাশক্তিকে সহজেই স্পষ্ট করে দেয় বলে জমিতে সার প্রয়ােগের প্রয়ােজন হয়।
(৩) ভূপ্রকৃতি : চাবাগিচায় জলনিকাশের সুবন্দোবস্ত থাকা একান্ত প্রয়ােজন, তা না হলে গাছের গােড়ায় জল জমে গাছ নষ্ট হয়ে যায়। এজন্য পাহাড়ের ঢালে ধাপ কেটে চায়ের চাষ করা হয়, যাতে জল সহজেই ঢাল বেয়ে নেমে যেতে পারে। নদী-উপত্যকা বা সমতলভূমিতেও চায়ের চাষ হয়, যদি সেখানে জলনিকাশের সুবন্দোবস্ত থাকে।
(খ) চা উৎপাদনের অর্থনৈতিক অবস্থা
(১) শ্রমিক : হাত দিয়ে বেছে বেছে চা-পাতা তুলতে হয় বলে চা চাষে প্রচুর সুলভ ও নিপুণ শ্রমিকের প্রয়ােজন। শ্রমিকের নৈপুণ্যের ওপর চায়ের গুণাগুণ অনেকটা নির্ভর করে। কারণ, দুটি পাতা ও একটি কুঁড়ি (Two Leaves and a Bud) ঠিকমতাে চয়ন করতে না পারলে চায়ের উৎকর্ষতা কমে যায়। এসব কাজের জন্য সরু আঙুল বিশেষ সুবিধাজনক বলে চা বাগানে শিশু এবং নারী শ্রমিক নিয়ােগ। করা হয়। স্বাভাবিকভাবে বাড়তে দিলে চা গাছ 6-7 মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। কিন্তু পাতা তােলার সুবিধার জন্য একে ছেঁটে সব সময় 1 মিটারের মধ্যে রাখা হয়, যাতে হাতের নাগালের মধ্যে পাতাগুলি থাকে। এভাবে গাছ ছাঁটার ফলে নতুন পাতা বের হয় এবং এই নতুন পাতাই পানীয় চায়ের উৎকর্ষতা বৃদ্ধি করে।
(২) মূলধন : প্রতিযােগিতামূলক বাজারে উৎপাদনের গুণমান ও উৎকর্ষ বজায় রাখার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হয়। এই কারণে সার, কীটনাশক, বাগিচা রক্ষণাবেক্ষণ, শ্রমিকের মজুরি ইত্যাদি বাবদ প্রচুর মূলধন বিনিয়ােগের প্রয়ােজন হয়।
(৩) পরিবহণ : চা বাগান থেকে উৎপাদন কেন্দ্রে এবং উৎপাদন কেন্দ্র থেকে বাজারে বা রপ্তানির উদ্দেশ্যে বিক্রয়কেন্দ্র থেকে বন্দরে পাঠানাের জন্য উপযুক্ত পরিবহণ ব্যবস্থা থাকা দরকার।
(৪) বাজার বা চাহিদা : চা উৎপাদক অঞ্চল থেকে ভােগকেন্দ্রগুলি নিকটে অবস্থিত হলে উৎপাদিত দ্রব্য অতি সহজেই ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়। দেশে এবং বিদেশে চায়ের চাহিদা বৃদ্ধি, পরিবর্ত পানীয়ের (কফি) বাজার সংকোচন এবং প্রতিযােগিতামূলক বাজারে রপ্তানি বৃদ্ধি চায়ের উৎপাদন বৃদ্ধির পক্ষে সহায়ক।
সাধারণত বাগিচা-ফসলের ক্ষেত্রে বাগানের ভেতরেই পণ্য বাজারজাত করার সব ধরনের বন্দোবস্ত করা হয়। বড়াে বড়াে। চা বাগানে এই কারণেই চায়ের পাতা শুকোনাে, সেঁকা, গুণানুসারে পাতা বাছাই, বাক্সবন্দি করে বাজারে পাঠানাে প্রভৃতি কাজ বাগানের ভেতরেই করা হয়ে থাকে।