বাজারভিত্তিক উদ্যান কৃষির অগ্রগতি সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনা হলেও শহুরে নাগরিকদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে এর ভূমিকা অপরিসীম। বাজারভিত্তিক উদ্যান কৃষির প্রধান গুরুত্ব গুলি হল—
(১) যে-কোনো ভূপ্রকৃতিক অঞ্চলের উপযোগী : ভূমিরূপের বৈচিত্র্য এই কৃষি পদ্ধতিতে খুব বেশি প্রভাব ফেলে না। পর্বত, মালভূমি ও সমভূমি এই তিন ধরনের ভূমিকেই এই কৃষিকাজের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
(২) জনবহুল ও জনবিরল স্থান উপযোগী : ছােটো ও মাঝারি-সহ সবধরনের জমিতে এই কৃষিকাজ করা যায় বলে জনবহুল ও জনবিরল উভয় জায়গাতেই এই কৃষিব্যবস্থা গড়ে তােলা যায়।
(৩) কর্মসংস্থানের সুযোগ : বাজারভিত্তিক উদ্যান কৃষি শ্রমনিবিড়। তাই এই ধরনের কৃষিব্যবস্থা গড়ে তুলতে বহু মানুষের প্রয়ােজন হয়। ফলে এই ধরনের কৃষিকে কেন্দ্র করে বহু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযােগ সৃষ্টি হয়।
(৪) যেকোনাে জলবায়ু অঞ্চলের উপযােগী : নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু অঞ্চলে এই কৃষির প্রাধান্য লক্ষ করা গেলেও ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলেও এই কৃষিব্যবস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন ফসল ফলানাে যায়।
(৫) অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি : সারাবছর ধরেই ফল, ফুল ও সবজির চাষ করা হয় বলে এই কৃষি লাভজনক। তা ছাড়া বাণিজ্যনির্ভর হওয়ায় এই কৃষির সাথে যুক্ত মানুষদের অর্থনৈতিক অবস্থার যথেষ্ট উন্নতি ঘটে।
(৬) লাভবান ক্রেতা ও বিক্রেতা : শহরাঞ্চলের ক্রেতারা একেবারে টাটকা কৃষিজ ফসল পাওয়ায় লাভবান হয়। অন্যদিকে কৃষকেরা ফসলের ন্যায্য মূল্য পাওয়ায় লাভবান হয়।
(৭) পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতি : বাজারভিত্তিক উদ্যান কৃষির প্রায় সব ফসলই পচনশীল। দ্রুত পরিবহণ ব্যবস্থা না থাকলে এই প্রকার কৃষি লাভজনক হয় না। তাই এই প্রকার কৃষিকে কেন্দ্র করে উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে।
(১) উন্নত বীজ ও সারের ব্যবহার : বাজারভিত্তিক উদ্যান কৃষিতে উৎপাদন বাড়ানাের জন্য উন্নত বীজ ও সারের ব্যবহার বাড়ানাে হচ্ছে।
(২) জৈব সার ও জৈব কীটনাশকের ব্যবহার : রাসায়নিক সার ও রাসায়নিক কীটনাশক স্বাথের পক্ষে ক্ষতিকর। তা ছাড়া এই ধরনের রাসায়নিক উপাদানের ব্যবহার পরিবেশ দূষণ ঘটায়। সেকারণে বাজারভিত্তিক উদ্যান কৃষিতে জৈব সার ও জৈব কীটনাশকের ব্যবহার বাড়ানাের দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।
(৩) জলসেচ ও উন্নত পরিবহণের প্রসার : বেশি করে ফসল উৎপাদনের জন্য জলসেচ ব্যবস্থার প্রসার ঘটানাে হচ্ছে। তা ছাড়া উৎপাদিত ফসলকে যাতে তাড়াতাড়ি বাজারে পাঠানাে যায় তার জন্য কৃষিক্ষেত্র থেকে বাজারের মধ্যে পরিবহণ ব্যবস্থা আরও উন্নত করা হচ্ছে।
(৪) উৎপাদিত ফসলের সংরক্ষণ : উৎপাদিত ফসল যাতে সহজে না পচে যায় তার জন্য ফসলের সংরক্ষণ ব্যবস্থা আরও ভালাে করে গড়ে তােলা হচ্ছে।
(৫) শীতপ্রধান অঞ্চলে কাচের ঘর নির্মাণ : শীতপ্রধান অঞ্চলে বাজারভিত্তিক কৃষির প্রসারের জন্য কাচের ঘর বা গ্রিন হাউস তৈরি করে তার মধ্যে উয়তা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে।
(৬) সহায়ক শিল্প স্থাপন : বাজারভিত্তিতে উদ্যান কৃষিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সহায়ক শিল্পসমূহের (যেমন খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ, জৈব রং, সুগন্ধী দ্রব্য) বিস্তার ঘটানাে হচ্ছে।
বাজারভিত্তিক উদ্যান কৃষিতে উৎপাদিত বিভিন্ন শাকসবজি ও উৎপাদক দেশসমূহ
2011 খ্রিস্টাব্দে FAO-এর প্রদত্ত তথ্য অনুসারে বাজারভিত্তিক কৃষির উৎপাদিত বিভিন্ন শাকসবজি ও উল্লেখযােগ্য দেশসমূহ নিম্নরূপ—
আদা : ভারত (প্রথম), চিন, নেপাল।
আলু : চিন (প্রথম), ভারত ও রাশিয়া।
টম্যাটো : চিন (প্রথম), ভারত ও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র।
বিন : চিন (প্রথম), ইন্দোনেশিয়া ও ভারত।
বাঁধাকপি : চিন (প্রথম), ইন্দোনেশিয়া ও ভারত।
ফুলকপি : চিন (প্রথম), ভারত ও স্পেন।