জীবনযাত্রার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ভারতে রেডিমেড পােশাকের ব্যবহার ও চাহিদা বৃদ্ধি পেলেও এই শিল্পের কিছু সমস্যা আছে। যেমন一
[1] শিল্পের বিভক্তিকরণ : ভারতে রেডিমেড পােশাক শিল্পকেন্দ্রগুলি অধিকাংশই আকারে ছােটো এবং একাধিক ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত। ফলে দ্রব্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে যৌথভাবে কাজ করার সমস্যা দেখা দেয়। এ ছাড়া অধিকাংশ কেন্দ্রই অসংগঠিত- ভাবে গড়ে ওঠায় কর্মকাণ্ডে সামগ্রিকতার অভাব দেখা দেয়।
[2] কাঁচামাল নির্ভরশীলতা : রেডিমেড পােশাকের উৎপাদন অধিকমাত্রার কাঁচামাল বা তুলাের প্রাপ্তির ওপর নির্ভর করে। ফলে তুলাের উৎপাদনের হ্রাসবৃদ্ধি পােশাকের উৎপাদনের ওপর সামগ্রিকভাবে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।
[3] সরকারি নীতি-সংক্রান্ত : সরকারের কিছু অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত এই শিল্পে বিশেষ সমস্যা সৃষ্টি করে। এ ছাড়া সরকারি নীতির অস্পষ্টতার ফলেও শিল্প-সংক্রান্ত নীতিতে বহু জটিলতা তৈরি হয়েছে।
[4] শ্রমিকের স্বল্প উৎপাদন ক্ষমতা : ভারতে এই শিল্পে নিযুক্ত শ্রমিক প্রধানত অশিক্ষিত ও অদক্ষ হওয়ায় এবং তাদের মধ্যে প্রায় 35% মহিলা শ্রমিক হওয়ায় এই শিল্পে শ্রমিকদের উৎপাদন ক্ষমতা অত্যন্ত কম। ফলে শিল্পের মােট উৎপাদনও কম হয়।
[5] আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযােগিতা : বিশ্বের অন্যান্য রেডিমেড পােশাক উৎপাদক দেশ বিশেষত, চিনের তুলনায় ভারতের পােশাকের গুণগত মান কম। তা ছাড়াও ভারতে তৈরি পােশাকের দাম অন্যান্য দেশগুলির তুলনায় অনেকটাই বেশি হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে এই শিল্পকে তীব্র প্রতিযােগিতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
[6] পুরানাে ও হস্তচালিত যন্ত্রপাতি : রেডিমেড পােশাক শিল্প অতিমাত্রায় আধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রনির্ভর শিল্প। কিন্তু ভারতে অধিকাংশ কারখানা মূলত অসংগঠিত হওয়ায় এখানে আধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের থেকে বেশি পুরানাে যন্ত্রপাতি ও কৌশল ব্যবহার করা হয়।
[7] বিশ্ব বাজারে চাহিদার হ্রাস : ভারতে উৎপাদিত রেডিমেড পােশাকের বৈচিত্র্য ও আধুনিকতার অভাব থাকায় বিশ্বের দেশগুলিতে এইসব পােশাকের চাহিদা হ্রাস পাচ্ছে।
[8] অন্যান্য সমস্যা : এই সমস্যা ছাড়াও এই শিল্পের আরও যে সমস্যা দেখা যায়, যেমন-বিদ্যুতের অভাব, রেডিমেড পােশাক তৈরি-সংক্রান্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাব, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের ক্রেতা সম্পর্কিত সঠিক তথ্যের অভাব প্রভৃতি।
ভারতে রেডিমেড পােশাক শিল্প বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হলেও বর্তমানে ভারতীয় ফ্যাশন বা ভারতীয় পােশাকের ধরন নতুন করে পুনরায় স্বীকৃতি লাভ করেছে। তাই ধরা হয় ভারতের রেডিমেড পােশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল।
-
বিগত দুই দশকে বিশ্বের বাজারে ভারতীয় রেডিমেড পােশাক শিল্পের চাহিদা ও বিক্রয় দুই প্রভূত পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই আশা করা হচ্ছে পরবর্তী দশকে এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে।
-
ভারতের প্রায় সবকটি পােশাক উৎপাদক শিল্পক্ষেত্রগুলি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রকৃতির। অর্থাৎ সুতাে ও বস্ত্র উৎপাদন, বস্ত্র রং ও নকশা তৈরি এবং তা থেকে রেডিমেড পােশাক তৈরি সব কাজই একটি উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে হয়। ফলে অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতের পােশাক উৎপাদনের ক্ষেত্রে সময়, অর্থ ও শ্রমিক এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় তুলনামূলক কম হয়।
-
অর্থনৈতিক দিক থেকে ভারত উদারনীতি গ্রহণ করায় আন্তর্জাতিক বা বৈদেশিক ব্র্যান্ড ও সংস্থাগুলি ভারতীয় ব্র্যান্ড ও প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতীয় শিল্পের অগ্রগতির পথ ক্রমশ সুপ্রশস্ত হয়ে উঠছে।
-
এক দশক আগে রেডিমেড পােশাক শিল্পে মূলত ফ্যাশন জগত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির লােকেদের আধিপত্যই বেশি ছিল। কিন্তু বর্তমানে, সাধারণ মধ্যবিত্ত শ্রেণির মাথাপিছু আয় ও জীবন যাত্রার মান বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের সুবাদে ভারতের রেডিমেড পােশাক ক্রেতাদের এক বড়াে অংশ দখল করে নিয়েছে সাধারণ মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষরা। ভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে মনে করা হচ্ছে।
-
ভারতে নারী শিক্ষার প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে নারীদের কর্মসংস্থানও বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে নারীদের মাথাপিছু আয়ও অনেক বেড়েছে এবং দেখা যাচ্ছে, ভারতীয় রেডিমেড পােশাকের অন্যতম ব্রেতা হল ভারতের নারীরা। তাই আগে যেখানে উৎপাদিত রেডিমেড পােশাকের 42% অংশ পুরুষদের পােশাক ছিল, সেখানে এখন প্রতিষ্ঠানগুলি নারীদের বা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ব্যবহার করতে পারে এমন পােশাক তৈরির ওপর বেশি জোর দিচ্ছে।
-
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতীয় পােশাকের চাহিদা ও বিক্রয় বৃদ্ধি করার জন্য ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে রেডিমেড পােশাক পার্ক গঠন করা হয়েছে। যেখানে একসঙ্গেই পােশাকের প্রদর্শনী ও বিক্রয় দুটোই করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া দেশে ও বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় পােশাকের ফ্যাশন শাে করা হচ্ছে এবং সেগুলি টিভি, ম্যাগাজিনের মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।