বর্তমানে বিশ্বের কোনাে দেশই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রাকৃতিক উপকরণের প্রাপ্যতার বিভিন্নতা এবং মানবিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কের তারতম্য হেতু আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের উদ্ভব হয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য যেসব বিষয়গুলি দ্বারা প্রভাবিত সেগুলি নিম্নরূপ一
প্রকৃতিক সম্পদের জসন বন্টন : পৃথিবীর সর্বত্র প্রকৃতিক সম্পদগুলি অসমভাবে বন্টিত। পৃথিবীর সব জায়গায় সম্পদগুলি সমানভাবে পাওয়া যায় না বলে অপ্রতুলতাযুক্ত অঞ্চলে সম্পদের চাহিদা সৃষ্টি হয়। তখন সম্পদ সমৃদ্ধ অঞ্চল থেকে সম্পদহীন অঞ্চলে সম্পদের জোগান দেওয়া হয়। এইভাবে বাণিজ্য গড়ে ওঠে এবং এই বাণিজ্য দেশের সীমা অতিক্রম করলে আর্ন্তজাতিক বাণিজ্য ঘটে।
ভৌগােলিক অবস্থান : ভৌগােলিক অবস্থানও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। অক্ষাংশগত অবস্থানের পার্থক্যের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জলবায়ুর পার্থক্য ঘটে। যারফলে কৃষি ও শিল্পজাত দ্রব্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে উন্নতি ও অবনতি লক্ষ করা যায়, যেমন-নিরক্ষীয় অঞ্চলে অবস্থিত থাইল্যান্ড রবার উৎপাদন ও রপ্তানিতে প্রথম। সমুদ্রবেষ্টিত ও উপকূলীয় অবস্থান আবার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রসার ঘটতে সাহায্য করে। যেমন—ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য একসময় তার দীপিয় অবস্থানের কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে পৃথিবীবিখ্যাত ছিল।
অর্থনৈতিক কারণ : যেসমস্ত অর্থনৈতিক কারণগুলি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে প্রভাবিত করে সেগুলি হল-
-
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বৈষম্য।
-
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মানের বৈষম্য।
-
মুদ্রা বিনিময়ের হারের হ্রাসবৃদ্ধি।
-
পণ্যদ্রব্যের আপেক্ষিক উৎপাদন ব্যয়।
সরকারি নীতি : আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে সরকারি নীতি বিশেষভাবে প্রভাব বিস্তার করে। কোনাে দেশের সরকার বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রসারে যত বেশি উদার নীতি গ্রহণ করবে সেই দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য তত বেশি প্রসারিত হবে। সরকার আমদানি ও রপ্তানি দ্রব্যের ওপর চড়া শুল্ক আরােপ করলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পরিমাণ হ্রাস পায়।
অন্যান্য কারণ : এ ছাড়া বিভিন্ন কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রভাবিত হয় যেমন一
-
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি।
-
একটি দেশের মানুষের রুচি, ধর্ম, প্রথা ইত্যাদির বিভিন্নতা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রভাব বিস্তার করে।
গ্যাট-এর (GATT) উত্তরসুরি হিসেবে 1995 খ্রিস্টাব্দের 1 জানুয়ারি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা বা World Trade Organisation (WTO) আত্মপ্রকাশ করে। এর সদর দপ্তর সুইটজারল্যান্ডের জেনিভা শহরে অবস্থিত। এর সদস্য সংখ্যা হল 159। এই সংস্থার উল্লেখযােগ্য কার্যাবলিগুলি হল一
-
একাধিক দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক চুক্তি রূপায়ণ।
-
বাণিজ্য-সংক্রান্ত বিবাদের মিমাংসা।
-
বাণিজ্য, অর্থনীতি প্রভৃতি বিষয়ে পরামর্শ দান করা।
-
আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে সংহতি স্থাপন করা।
-
উন্নয়নশীল দেশগুলিকে প্রযুক্তি-সংক্রান্ত সাহায্য প্রদান ও হাতে কলমে শিক্ষা দান।