ক্ষুদ্র, মাঝারি অথবা বৃহৎ আকারে স্থানীয়, দেশীয় ও বৈদেশিক বাজারে যে-কোনাে পণ্যদ্রব্যের বিনিময়, লেনদেন ও আমদানি-রপ্তানি এবং এই-সংক্রান্ত সেবাক্ষেত্রের আনুষঙ্গিক কাজকর্মকে বাণিজ্য বলে। বাণিজ্যের ফলে উৎপাদক ও ভােগকারীর মধ্যে তথ্যগত ও বিনিময়-সংক্রান্ত কোনাে বাধা থাকে না এবং পণ্যসামগ্রী ও সেবাকার্যের আদান প্রদান ঘটে।
বাজারের অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্যকে দুভাগে ভাগ করা যায়- [1] অভ্যন্তরীণ বা অন্তর্দেশীয় বাণিজ্য এবং [2] আন্তর্জাতিক বা বৈদেশিক বাণিজ্য। এই দুই প্রকার বাণিজ্যকে আবার নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা যায়一
[1] অভ্যন্তরীণ বা অন্তর্দেশীয় বাণিজ্য
-
পাইকারি বাণিজ্য (উদা: কাশ্মীরি শালকে কলকাতায় আমদানি করা)
-
খুচরাে বাণিজ্য (উদা: বাজার থেকে তরিতরকারি ক্রয়)
[2] আন্তর্জাতিক বা বৈদেশিক বাণিজ্য
-
আমদানি বাণিজ্য (উদা: কানাডা থেকে ভারতের নিউজপ্রিন্ট ক্রয় করা)
-
রপ্তানি বাণিজ্য (উদা: নেপালকে ভারতের খাদ্যশস্য বিক্রয় করা)
-
পুনঃরপ্তানি বা আড়তদারি বাণিজ্য (উদা: ভারতের বাসমতি চালকে ইংল্যান্ড কর্তৃক ইউরােপে বিক্রয়)
অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য
-
পণ্যদ্রব্যের বাজার দেশের মধ্যে বা দেশের সীমার মধ্যে গড়ে ওঠে। ফলে, এই বাণিজ্যে বাজারের বিস্তৃতি কম।
-
একটি দেশে বা দেশের অভ্যন্তরের কোনাে অঞ্চলের মানুষের রুচিপছন্দ, রীতিনীতি, প্রথা ইত্যাদি একই প্রকার হয়, তাই অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের পণ্যের প্রকৃতি প্রায় সমধর্মী হয়।
-
এই বাণিজ্য একটি মাত্র দেশের অভ্যন্তরে সম্পন্ন হওয়ায়, এতে একই ধরনের মুদ্রা ব্যবহৃত হয়।
-
অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে মুদ্রার বিনিময়মূল্য একই প্রকার থাকে। ফলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই মুদ্রা মূল্যের ওঠানামার ফলে সমানভাবে প্রভাবিত হয়।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য
-
পণ্যদ্রব্যের আদানপ্রদান এক দেশের সীমানা পেরিয়ে অন্য বা বিভিন্ন দেশের সাথে চলে, ফলে এই বাণিজ্যে বাজারের ব্যাপ্তি অনেক বেশি।
-
দেশভেদে মানুষের রুচি পছন্দ, প্রথা পরিবর্তিত হয় এবং এই বাণিজ্যে বিভিন্ন ধরনের পণ্যের চাহিদা সৃষ্টি হয়, ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বিভিন্ন বৈচিত্র্যপূর্ণ পণ্যের আদানপ্রদান ঘটে থাকে।
-
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভিন্ন দেশের মধ্যে সংঘটিত হয় বলে সাধারণত একাধিক মুদ্রা ব্যবহৃত হয়। তবে কখনাে কখনাে একই অর্থনৈতিক অঞ্চলের অন্তর্গত দেশগুলি নিজেদের সুবিধার্থে একই ধরনের মুদ্রা (যেমন ইউরাে) ব্যবহার করে।
-
বৈদেশিক বাণিজ্যে মুদ্রার বিনিময় মূল্যের ওঠানামার প্রভাব বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম হয়। মুদ্রার মূল্যহারের পরিবর্তনে এক দেশ যেমন লাভবান হতে পারে, তেমনি অন্য দেশ ক্ষতিগ্রস্তও হতে পারে।
-
এই বাণিজ্যে বিভিন্ন দেশের আমদানি ও রপ্তানি শুল্ক পৃথক হয়। ফলে এর প্রত্যক্ষ প্রভাব সংশ্লিষ্ট দেশগুলির ওপর বর্তায়।