তৃতীয় স্তরের কাজ যখন উন্নত বুদ্ধি ও মেধাশক্তির ওপর নির্ভর করে আরও প্রসারিত হয়, তখন তাকে চতুর্থ স্তরের ক্রিয়াকলাপ বা কোয়াটারনারি ক্রিয়াকলাপ বলে। এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত কাজ হল তথ্যপ্রযুক্তি (Information Technology), গবেষণামূলক (Research) ইত্যাদি। এই স্তরের কাজের সাথে যুক্ত কর্মীরা অফিস ঘরের মধ্যে থেকে বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপ সম্পাদন করে মানুষকে বিশেষ ধরনের পরিসেবা দেয় বলে এদের সাদা কলার শ্রমিক (White-collar Workers) বলে।
[1] এই স্তরের ক্রিয়াকলাপের ক্ষেত্র সাম্প্রতিক সময়ের : কোয়াটারনারি ক্রিয়াকলাপের উৎপত্তি সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনা। এজন্য একে নব্য কার্যাবলি নামেও অভিহিত করা হয়। বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে ইউরােপ ও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমে এই স্তরের ক্রিয়াকলাপের বিকাশ ঘটে। পরে এই ক্রিয়াকলাপের বিস্তার সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে।
[2] কাজের মান অত্যন্ত উন্নত : এই স্তরের বিভিন্ন কাজ যেমন- তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক, গবেষণাভিত্তিক কার্যাবলি ইত্যাদি অতি উন্নত মানের।
[3] উন্নত মেধা ও দক্ষকর্মী নির্ভর : উন্নত মেধা ও দক্ষ কর্মীদের ওপর নির্ভর করেই এই ধরনের ক্রিয়াকলাপ সংঘটিত হয়। অনুন্নত মেধা ও অদক্ষ কর্মীদের দ্বারা এই ধরনের ক্রিয়াকলাপ সম্পাদন করা যায় না।
[4] আধুনিক পরিসেবার প্রাপ্তি : চতুর্থ স্তরের ক্রিয়াকলাপ থেকে যে পরিসেবা পাওয়া যায় তা অতি উন্নত মানের এবং আধুনিক প্রকৃতির হয়।
[5] অধিক আয় : কোয়াটারনারি ক্রিয়াকলাপের সাথে যেসব কর্মী যুক্ত যাকে তাদের আয় অনেক বেশি। তা ছাড়া যেসব দেশগুলিতে এই স্তরের ক্রিয়াকলাপ বেশি প্রসারিত সেইসব দেশগুলিও অর্থনৈতিক দিক থেকে অনেক উন্নত হয়।
[6] উন্নত দেশে কেন্দ্রীভূত : এই স্তরের ক্রিয়াকলাপের প্রসারের জন্য উন্নত পরিকাঠামাের প্রয়ােজন। অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলিতে পরিকাঠামাে উন্নত ও আধুনিক না হওয়ায় এই ক্রিয়াকলাপের কেন্দ্রিভবনের প্রাধান্য উন্নত দেশগুলিতেই লক্ষ করা যায়।
[7] অত্যধিক প্রযুক্তিনির্ভরতা : এই ধরনের ক্রিয়াকলাপ অতিমাত্রায় প্রযুক্তিনির্ভর। আধুনিক ও উন্নতমানের প্রযুক্তি ছাড়া এই ধরনের অর্থনৈতিক কাজের সম্প্রসারণ করা যায় না।
[8] নতুন বাজার সৃষ্টি : চতুর্থ স্তরের ক্রিয়াকলাপ সারা পৃথিবীতে নতুন নতুন বাজার সৃষ্টিতে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করে।
[9] বহির্বিশ্বের সাথে সম্পর্কযুক্ত : কোয়াটারনারি ক্রিয়া কলাপে বহির্বিশ্বের স্পষ্ট প্রভাব লক্ষ করা যায়। স্থানীয় সম্পদ, স্থানীয় প্রযুক্তি ও স্থানীয় বাজার ছাড়াও অন্যান্য দেশের সম্পদ, প্রযুক্তি ও বাজার এই প্রকার ক্রিয়াকলাপে প্রভাব বিস্তার করে। যেমন—আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ভারত থেকে আউটসাের্সিং-এর মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপ সম্পাদন করে।
[10] পঞ্চম স্তরের ক্রিয়াকলাপের ভিত্তি : পঞ্চম স্তরের ক্রিয়াকলাপ গড়ে ওঠার ভিত্তি হল চতুর্থ স্তরের ক্রিয়াকলাপ। চতুর্থ স্তরের ক্রিয়াকলাপের সূত্র ধরেই পঞ্চম স্তরের ক্রিয়াকলাপের উৎপত্তি ঘটে।