পঞ্চম স্তরের ক্রিয়াকলাপ
তৃতীয় ও চতুর্থ স্তরের ক্রিয়াকলাপের ওপর নির্ভর করে যে অত্যাধুনিক ক্রিয়াকলাপের উৎপত্তি ঘটে, তাকে পঞ্চম স্তরের ক্রিয়াকলাপ বা কুইনারি ক্রিয়াকলাপ বা অত্যাধুনিক ক্রিয়াকলাপ বলে। এই শ্রেণির কার্যাবলির উদাহরণ হল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, প্রশাসক, কর্মাধ্যক্ষ, নির্বাহী অধিকর্তা, নিরাপত্তা অধিকর্তা, পেশাদার উপদেষ্টা, কর্মপন্থা নির্ধারক ইত্যাদি।
[1] সর্বোচ্চ স্তর : অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের যে শ্রেণিবিভাগ করা হয় তার সর্বোচ্চ বা সর্বশেষ স্তর হল পঞ্চম স্তরের ক্রিয়াকলাপ। এই স্তরের কর্মীরা প্রধানত বিভিন্ন কাজের পরিচালনা পদ্ধতির রূপরেখা বা পরিকল্পনা তৈরি করে।
[2] অতি নব্য ক্রিয়াকলাপ : এই ধরনের কাজ অন্যান্য অর্থনৈতিক কাজের তুলনায় বয়সে নবীন। বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে এই ধরনের কার্যাবলি বিস্তারলাভ করতে থাকে।
[3] অত্যাধুনিক পরিসেবা : পঞ্চম স্তরের ক্রিয়াকলাপ থেকে যে ধরনের পরিসেবা পাওয়া যায় তা অতি উন্নতমানের ও আধুনিক। মূলত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা, শাসন প্রণালীর নীতি নির্ধারণ, পেশাদারি উপদেশ প্রদান, চুড়ান্ত সিদ্প্রান্ত গ্রহণ ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে এই ধরনের কর্মকাণ্ড গড়ে ওঠে।
[4] অতি উন্নত মেধা ও দক্ষ কর্মী নির্ভর : অতি উন্নত মেধা ও দক্ষ কর্মীর ওপর নির্ভর করেই এই ধরনের ক্রিয়াকলাপ গড়ে ওঠে। তাই এই ধরনের কাজের সাথে যুক্ত শ্রমিকদের বুদ্ধি ভাণ্ডার (Think-tank) বলা হয়।
[5] দৈহিক শ্রমের স্বল্প ব্যবহার : প্রধানত বুদ্ধির ওপর নির্ভর করেই পঞ্চম স্তরের ক্রিয়াকলাপ সম্পাদন করা হয়। সেক্ষেত্রে দৈহিক শ্রমের বিশেষ প্রয়ােজন হয় না। তাই বুদ্ধিমান, জ্ঞানী ও অভিজ্ঞ কর্মীরা পঞ্চম স্তরের ক্রিয়াকলাপের সাথে যুক্ত থাকে।
[6] স্বল্প কর্মসংস্থান : কম ও সাধারণ মেধাসম্পন্ন মানুষেরা এই ধরনের কাজের সাথে সরাসরি যুক্ত হতে পারেন না। অতি উন্নত মেধা ও বুদ্ধির মানুষদের দ্বারাই কেবলমাত্র এই ধরনের ক্রিয়াকলাপ পরিচালিত হয়। সেক্ষেত্রে অন্যান্য অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের তুলনায় এই ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযােগ অনেক কম থাকে।
[7] অধিক আয়ের সুযােগ : এই ধরনের ক্রিয়াকলাপের সাথে যুক্ত কর্মীদের আয়ের সুযােগ অনেক বেশি। সরকারি এবং বেসরকারি ক্ষেত্রগুলি এই প্রকার ক্রিয়াকলাপে যুক্ত কর্মীদের জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করে। পঞ্চম স্তরের ক্রিয়াকলাপে যুক্ত কর্মীদের আয় করার সুযােগ বেশি থাকায় এদেরকে ‘সােনালি কলার কর্মী’ বা ‘Golden-collar Workers’ বলা হয়।
[8] উন্নত দেশগুলির অগ্রসরতা : ব্যাপ্তির দিক থেকে এই ধরনের ক্রিয়াকলাপে উন্নত দেশগুলিই সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে। তবে চিন ও ভারতের মতাে উন্নয়নশীল দেশগুলি আগামী দিনে এই কাজে উন্নত দেশগুলিকে কঠিন প্রতিযােগিতায় ফেলবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
[9] অত্যধিক প্রযুক্তি নির্ভরতা : এই ধরনের ক্রিয়াকলাপ সম্পাদন করতে গেলে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে অধিক জ্ঞান থাকা একান্ত প্রয়ােজন। অর্থাৎ এই ধরনের ক্রিয়াকলাপটি প্রযুক্তি নির্ভর।
[10] নতুন ধারণার সৃষ্টি : কুইনারি ক্রিয়াকলাপ নতুন নতুন ধারণার উদ্ভব ঘটায়। বর্তমান চিন্তাধারার ওপর নির্ভর করে ও প্রযুক্তিকৌশলের সাহায্যে নতুন উপাদান সৃষ্টি, পুনর্গঠন ও নতুন বিশ্লেষণ পদ্ধতির উদ্ভব হয়।