বিশ্বের সর্বত্র জনসংখ্যা সমহারে বন্টিত নয়, কোথাও খুব বেশি আবার কোথাও খুব কম জনসংখ্যা পরিলক্ষিত হয়। বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণ, জন্মহার ও মৃত্যুহার ছাড়াও জনসংখ্যার এই অসম বণ্টনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে পরিব্রাজন। পরিব্রাজনের জন্যেই বর্তমানে শহরগুলির জনসংখ্যা অত্যধিক বৃদ্ধি পেয়েছে এবং গ্রামগুলিতে জনসংখ্যার হ্রাস ঘটেছে। অতীতে বিভিন্ন সময়ে মানুষ এক দেশ থেকে অন্য দেশে বিভিন্ন কারণে পরিব্রাজন করেছে। এই পরিব্রাজনের ফলে বিভিন্ন দেশের জনসংখ্যার বণ্টনের ওপর যে প্রভাব তা আলােচিত হল一
[1] ইউরোপ থেকে অন্যান্য দেশে পরিব্রাজন : অতীতকালে ইউরােপ থেকে অসংখ্য মানুষ উত্তর আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকায় পাড়ি দিয়েছিল, যার ফলে এই দুই মহাদেশের জনসংখ্যা বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। 1819 সালে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা ছিল মাত্র 58 লক্ষ। কিন্তু এরপর পরিব্রাজনের ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে 1975 সালে হয় 26 কোটি এবং বর্তমানে তা প্রায় 31 কোটি। এইভাবে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও ইউরােপের জনসংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পেয়েছে।
[2] পাকিস্তান থেকে ভারতে পরিব্রাজন : 1947 সালে দেশ ভাগের সময় অগণিত মানুষ পাকিস্তান থেকে ভারতে এসে বসবাস শুরু করে। এরফলে পশ্চিমবঙ্গ, অসম, ত্রিপুরা ইত্যাদি রাজ্যে জনসংখ্যা বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পায়।
[3] বাংলাদেশ থেকে ভারতে পরিব্রাজন : 1970 সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বিপুল পরিমাণে মানুষ বাংলাদেশ ছেড়ে ত্রিপুরা, অসম, পশ্চিমবঙ্গ ইত্যাদি সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলিতে এসে বসবাস শুরু করে। এরফলে এইসব রাজ্যের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
[4] শ্রীলঙ্কা থেকে ভারতে পরিব্রাজন : শ্রীলঙ্কা সরকারের বিভিন্ন কঠোর নীতির ফলে শ্রীলঙ্কার বহু মানুষ ভারতে এসে বসবাস শুরু করে।
[5] আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিবেশী দেশে পরিব্রাজন : প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতা, দূর্ভিক্ষ, রাজনৈতিক অস্থিরতা ইত্যাদি কারণে সােমালিয়া, দক্ষিণ সুদান, ইথিওপিয়া ইত্যাদি দেশ থেকে বহু মানুষ প্রতিবেশী দেশগুলিতে পরিব্রাজন করে।
[6] তিব্বত থেকে ভারতে পরিব্রাজন : চিন যখন তিব্বত দখল করে তখন বহু তিবৃতীয় ভারতের বিভিন্ন স্থানে পরিব্রাজিত হয়। এরফলে, ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়।