কোনাে দেশের এক বছরে জন্ম ও অভিবাসনের (Immigration) মােট সংখ্যা, মৃত্যু ও প্রবাসনের (Emigration) মােট সংখ্যার সমান হলে সেই দেশের জনসংখ্যার কোনাে বৃদ্ধি ঘটে না। জনসংখ্যা বৃদ্ধির এরূপ অবস্থাকে স্থিতিশীল জনসংখ্যা বা শূন্য জনসংখ্যা বৃদ্ধি বলে। সুতরাং, (জন্ম + অভিবাসন) – (মৃত্যু + প্রবাসন) = 0 জনসংখ্যা বৃদ্ধি। এই অবস্থা আসে জনসংখ্যা বিবর্তনের চতুর্থ পর্যায়ে। উদাহরণ–পশ্চিম ইউরােপের দেশ যেমন নরওয়ে, সুইডেন ইত্যাদি। কিন্তু এইরূপ অবস্থা বাস্তবে প্রায় অসম্ভব।
বৈশিষ্ট :
-
জনসংখ্যা বিবর্তনের সর্বশেষ অবস্থা বা পর্যায়কে নির্দেশ করে।
-
নিয়ন্ত্রিত জন্মহারকে সূচিত করে।
-
দেশের জনংখ্যা স্থির থাকে।
-
অভিবাসন ও প্রবাসনের প্রকৃতি সম্বন্ধে জানা যায়।
-
অত্যধিক শিল্পায়ন ও নগরায়ণকে অর্থাৎ সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নকে সূচিত করে।
-
জীবনযাত্রার উন্নতমানকে নির্দেশ করে।
কানাডা, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিম ইউরােপের শিল্পোন্নত দেশসমূহ, জাপান, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি উন্নত দেশগুলিতে জন্মহার ও মৃত্যুহার খুব কম হওয়ায় জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধি খুবই কম। উন্নত দেশগুলিতে জনসংখ্যার এরূপ স্বল্প বৃদ্ধির কারণগুলি হল一
-
শিল্পোন্নত দেশগুলিতে শিক্ষার হার বেশি, গড়ে 95-100 শতাংশ।
-
শিল্পোন্নত অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সম্পদ উৎপাদনের পরিমাণ খুব বেশি।
-
জাতীয় আয় ও মাথাপিছু গড় আয় অনেক বেশি।
-
জীবনযাত্রার মান উন্নত হওয়ায় মানুষের গড় আয়ু বেশি।
-
উন্নত অর্থনৈতিক সমাজব্যবস্থায় মহিলাদের সামাজিক মর্যাদা ও চাকরির সুযোেগ উন্নয়নশীল দেশের মহিলাদের তুলনায় বেশি থাকায় সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে মহিলাদের মতামতের গুরুত্ব অনেক বেশি। তাই উন্নত দেশগুলিতে জন্মহার নিয়ন্ত্রিত।
-
শিক্ষার প্রসারের ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কুফল সম্পর্কে জনগণ সচেতন। ফলে, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে ধর্মীয় মতামত বিশেষ কার্যকর হয় না।
-
উন্নত দেশগুলিতে মানবসম্পদ উন্নয়নের প্রতি বেশি গুরুত্ব আরােপ করায় জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রিত হয়েছে।
-
চিকিৎসাশাস্ত্রের অকল্পনীয় উন্নতি ও প্রয়ােগ এবং স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সম্পর্কে সচেতনতা, মৃত্যুহার হ্রাসের অন্যতম কারণ।
উল্লিখিত কারণে উন্নত দেশ’লর জনসংখ্যা প্রায় স্থিতিশীল। আবার কোনাে কোনাে দেশের জন্মহার মৃত্যুহার অপেক্ষা কম হওয়ায় জনসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঋণাত্মক প্রকৃতির। উন্নত দেশগুলির জনসংখ্যা পিরামিড লক্ষ করলে দেখা যায় যে 15 বছরের কম বয়সি জনসংখ্যা কম। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ঋণাত্মক চলতে থাকলে ভবিষ্যতে দেশগুলিকে নানা সামাজিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।