মানুষ-জমি অনুপাত ধারণাটি ব্যাখ্যা করাে।
মানুষ-জমি অনুপাত বলতে কোনাে দেশ বা অঞ্চলের মােট জনসংখ্যার সঙ্গে কার্যকরী জমির অনুপাতকে বােঝায়। মানুষ বলতে এখানে মানুষের কর্মদক্ষতা, জ্ঞান, বুদ্ধি, কৌশল ও সংগঠন প্রভৃতি সাংস্কৃতিক গুণাবলির সমন্বয়কে বােঝায়। আবার, কার্যকরী জমি বলতে সেইসব জমিকে বােঝায় যা মানুষের কাজে লাগে এবং যা থেকে মানুষ সম্পদ সৃষ্টি করতে পারে। জমি থেকে মানুষ কেবল কৃষিজ দ্রব্য উৎপাদন বা সম্পদ আহরণ করে না, ভূগর্ভ থেকে খনিজ সম্পদও উত্তোলন করে। জমি বলতে এখানে জমির আয়তন, ক্ষেত্রফল, ভূগর্ভের খনিজ সম্পদ, জমির উপরিভাগের বাতাস, সূর্যকিরণ, ভূগর্ভের ও ভূপৃষ্ঠের জল প্রভৃতিসহ ত্রিমাত্রিক অবস্থানকে বােঝায়।
প্রাচীনকালে মানুষ সম্পদ সংগ্রহ করত ভূমির উপরিভাগ থেকে। বর্তমানে মানুষ ভূমির অভ্যন্তরভাগ থেকে খনিজ দ্রব্য উত্তোলন করে জমির কার্যকরী শক্তি বহুগুণ বাড়িয়ে তুলেছে। ফলে মানুষ-জমি অনুপাত নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ভূমির অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বহনক্ষমতা এবং মানুষের সাংস্কৃতিক উন্নয়ন—এই তিনটি বিষয়ের ওপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
মানুষ-জমি অনুপাতের বৈশিষ্ট্য :
-
মানুষ-জমি অনুপাত একটি গুণগত পরিমাপ কারণ, জনসংখ্যা ও জমির কার্যকরী ক্ষমতার সম্পর্ক এই অনুপাত বিচার করে।
-
মানুষ-জমি অনুপাত থেকে কোনাে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার একটা নিখুঁত চিত্র পাওয়া না গেলেও দেশটির অতি-জনাকীর্ণতা (Over Population) কিংবা জনবিরলতা (Under Population) এবং দেশের জনসাধারণের জীবনযাত্রার মান সম্পর্কে মােটামুটি একটা ধারণা পাওয়া যায়।
-
মানুষ-জমি অনুপাত নির্ণয় করা খুবই অসুবিধাজনক। কারণ জমির কার্যকারিতা শক্তি সব সময় পরিবর্তিত হয়। কেবলমাত্র কৃষিপ্রধান দেশের ক্ষেত্রে এই অনুপাতটি নির্ণয় করা কিছুটা সুবিধাজনকহলেও শিল্পোন্নত ও খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ দেশের ক্ষেত্রে এই অনুপাত নির্ণয় করা অসম্ভব বললেও ভুল হয় না। ফলে মানুষ-জমি অনুপাতের ব্যাবহারিক গুরুত্ব কম।
কৃষি পদ্ধতি, জনবসতির স্থায়িত্ব ও অর্থনৈতিক কাজকর্মের গতিপ্রকৃতি অনেকাংশে মানুষ-জমি অনুপাতের তারতম্য দ্বারা প্রভাবিত হয়।
ব্যাপক কৃষি পদ্ধতিতে প্রভাব : কোনাে দেশের মানুষ-জমির অনুপাত কম হলে অর্থাৎ মােট জনসংখ্যার তুলনায় জমির পরিমাণ বেশি হলে, সেই দেশের মানুষ ব্যাপক কৃষিপদ্ধতিতে চাষ-আবাদ করে। এই কৃষিব্যবস্থায় উন্নত যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রভৃতি দ্রব্যের ব্যবহার এবং উন্নত জলসেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে চাষবাস করা হয় বলে মাথাপিছু কৃষিজ উৎপাদন বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, আর্জেন্টিনা প্রভৃতি দেশে মানুষ-জমি অনুপাত কম বলে, ব্যাপক কৃষি পদ্ধতিতে কৃষিজ ফসল উৎপাদন করা হয়।
প্রগাঢ় কৃষি পদ্ধতিতে প্রভাব : পৃথিবীর যেসমস্ত অঞ্চলে মানুষ-জমি অনুপাত বেশি অর্থাৎ মােট জনসংখ্যার তুলনায় জমির পরিমাণ কম, সেই সমস্ত অঞ্চলে অল্প পরিমাণ জমিতে প্রচুর পরিমাণ অর্থ ও শ্রম বিনিয়ােগ করে প্রগাঢ় পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন করা হয়। পতিত জমি ও চাষযােগ্য অনাবাদি জমি পুনরুদ্ধার করে বহুফসলি জমির পরিমাণ ও কৃষি ফসলের উৎপাদন বাড়ানাের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু উৎপাদনের উপকরণগুলির মাত্রা বহুগুণে বাড়ালেও সমহারে উৎপাদন বাড়ে। তাই ফসলের চাহিদা ও জোগানের মধ্যে পার্থক্য বাড়তে থাকে। কৃষিব্যবস্থা ভেঙে পড়ে ও ছদ্ম বেকারত্ব বাড়তে থাকে। ফলে, রপ্তানিযােগ্য কৃষি আমদানি নির্ভর কৃষিতে পরিণত হয়।