[1] অত্যধিক জনঘনত্ব অঞ্চল
-
আঞ্চলিক বিস্তৃতি : পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, কেরল উত্তরপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মধ্যে দিল্লি, চণ্ডীগড়, পুদুচেরি, দমন-দিউ ও লাক্ষা দ্বীপপুঞ্জ এই জনঘনত্ব অঞ্চলের অন্তর্গত। এই অঞ্চলের জনঘনত্ব প্রতি বর্গকিমিতে 800 জনের বেশি।
-
অত্যধিক জনঘনত্বের কারণ : (i) গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের মাটি খুব উর্বর। গঙ্গা নদীর উভয় তীরে ভারতের প্রাচীনতম ও গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চল অবস্থিত হওয়ায় শিল্পের প্রয়ােজনে পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে প্রচুর লােকের আগমন ঘটেছে। এ ছাড়া, বাংলাদেশ থেকে দলে দলে শরণার্থী এদেশে আসায় পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে জনঘনত্ব বহুগুণ বেড়েছে। (ii) কেরলের উপকূলবর্তী পলিমাটি অঞ্চল উর্বর হওয়ায় কৃষিকাজে বেশ উন্নত। এরই পার্বত্য অংশে প্রচুর বাগিচা ফসল উৎপন্ন হয় এবং সমুদ্র থেকে প্রচুর মাছ। ধরার সুবিধা থাকায় এই অঞ্চলের জনঘনত্ব বেশি। (iii) উত্তরপ্রদেশ ও বিহার উর্বর পলিসমৃদ্ধ মধ্যগাঙ্গেয় সমভূমিতে অবস্থিত হওয়ায় কৃষিজ ফসল উৎপাদনে যথেষ্ট উন্নত এবং এই রাজ্যে জন্মহার খুব বেশি। তাই, এই রাজ্যের জনঘনত্বও বেশি। (iv) দিল্লি, চণ্ডীগড়, পুদুচেরি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হওয়ায় শাসনতন্ত্র পরিচালনা, শিল্প ও বাণিজ্যের কারণে শহরে পরিণত হয়েছে। তাই, স্বাভাবিকভাবেই এই সমস্ত অঞ্চলের জনঘনত্ব বেশি।
[2] অধিক জনঘনত্ব অঞ্চল
-
আঞ্চলিক বিস্তৃতি : ঝাড়খণ্ড, পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও তামিলনাড়ু রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত দাদরা ও নগর হাভেলি অধিক জনঘনত্বযুক্ত অঞ্চলের অন্তর্গত। এই অঞ্চলের জনঘনত্ব প্রতি বর্গকিমিতে 401 থেকে 800 জন।
-
অধিক জনঘনত্বের কারণ : (i) উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব ও হরিয়ানা উর্বর পলিসমৃদ্ধ গাঙ্গেয় সমভূমিতে অবস্থিত। জলসেচ ব্যবস্থাও বেশ উন্নত। তাই, এই অঞ্চল কৃষিতে বেশ উন্নত। কৃষিভিত্তিক শিল্পেও এই অঞ্চল বেশ উন্নত। এ ছাড়াও কৃষি জমিতে কজের জন্য ভারতরে অন্যান্য রাজ্য থেকে প্রচুর শ্রমিক এখানে আসে। (ii) তামিলনাড়ুর কাবেরী অববাহিকা ও উপকূলীয় সমভূমি কৃষিতে বেশ উন্নত। মালভূমি অঞ্চল খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ হওয়ায় এই রাজ্যের জনঘনত্ব বেশ বেশি।
2011 সালের আদমশুমারি অনুসারে পশ্চিমবঙ্গা চতুর্থ জনবহুল (91,347,736 জন) এবং দ্বিতীয় জনঘনত্বপূর্ণ রাজ্য। এই রাজ্যে প্রতি বর্গকিলােমিটারে 1,029 জন লােক বসবাস করে। পশ্চিমবঙ্গে জনঘনত্ব বেশি হওয়ার প্রধান কারণগুলি হল一
[1] বিস্তৃত উর্বর সমর্ভুমি : দার্জিলিং-এর পার্বত্য অঞ্চল ও পশ্চিমের মালভূমির অংশ বাদে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ নিম্ন গাঙ্গেয় সমভূমির অন্তর্গত। এই গাঙ্গেয় সমভূমিতে মােট জনসংখ্যার প্রায় 95 শতাংশ মানুষ বসবাস করে। এই সমভূমির মাটি অত্যন্ত উর্বর এবং জলসেচ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় নিবিড়ভাবে জমিতে বছরে একাধিকবার বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপন্ন হয়। খাদ্যশস্যের সঙ্গে সঙ্গে অর্থকরী ফসল উৎপন্ন হওয়ায় বিপুল সংখ্যক গ্রাম্য মানুষের কৃষিনির্ভরতা সুনিশ্চিত হয়। তাই উর্বর কৃষিজমিকে কেন্দ্র করে 70 শতাংশেরও বেশি মানুষ এই সমভূমিতে বসবাস করার ফলে জনঘনত্ব অত্যন্ত বেশি।
[2] শিল্পায়ন ও নগরায়ণ : বিস্তৃত সমভূমির সুবিধা থাকায় এখানে সমস্তরকম পরিবহণ ও যােগাযােগ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি ঘটেছে। এর ফলে গড়ে উঠেছে বহু শিল্পাঞল, যার মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন ও বৃহৎ হল হুগলি শিল্পাঞ্চল। এ ছাড়াও দুর্গাপুর-আসানসােল শিল্পাঞ্চল, খড়গপুর শিল্পাঞ্চল ও হলদিয়া শিল্পাঞ্চল উল্লেখযােগ্য। এসব শিল্পাঞ্চলকে ঘিরে গড়ে উঠেছে নগর ও মহানগর। এ ছাড়া, শিল্পাঞ্চলগুলিকে কেন্দ্র করে বর্তমানে দ্রুতহারে নগরায়ণ ঘটছে। এভাবে প্রতিটি শিল্পকেন্দ্র উন্নয়নের মেরুরূপে (Growth Pole) কাজ করে। ফলে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের অর্থনৈতিক কাজকর্মের ক্ষেত্র সুপ্রশস্ত হয়েছে। কাজের টানে পার্শ্ববর্তী ভিন রাজ্যগুলি থেকে প্রচুর মানুষ এই রাজ্যের বিভিন্ন শহর ও নগরমুখী হওয়ার ফলে জনসংখ্যার পরিমাণ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
[3] পরিব্রাজন : রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণে বৈধ ও অবৈধভাবে পাশের রাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে এ রাজ্যে হাজার হাজার মানুষের অনুপ্রবেশ ঘটেছে ও ঘটে চলেছে। স্বাভাবিকভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
[4] জনসংখ্যাগত বিষয় : জন্মহার, মৃত্যুহার, নারী-পুরুষ অনুপাতের পরিবর্তন (পরিব্রাজনের কারণও এর সঙ্গে যুক্ত) প্রভৃতির জন্য স্বাভাবিক নিয়মে পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা 2001 থেকে 2011 পর্যন্ত বেড়েছে 1 কোটি 11 লক্ষেরও বেশি।