গ্রামের মানুষের প্রধান অর্থনৈতিক কাজ হল কৃষিকাজ ও সংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিক কাজ। এখানে কাজের পরিধি এবং বিভিন্নতা যেমন কম তেমনি অতিরিক্ত আয়ের সুযােগও কম। অন্যদিকে শহরে কাজের সুযােগ ও বিভিন্নতা অনেক বেশি এবং তার সাথে অতিরিক্ত আয়ের সুযােগও অনেক বেশি। চিকিৎসা ব্যবস্থা, শিক্ষা, বিনােদন এবং আধুনিক পরিসেবাও অনেক উন্নত। ফলে কর্মসংস্থানের আশায় এবং উন্নত জীবনযাত্রার উদ্দেশ্যে গ্রামের জনগণ শহরমুখী হয়। একে গ্রামীণ জনসংখ্যার উৎক্ষেপ বলে।
ভারতবর্ষ কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির দেশ। এই দেশের মােট জনবসতির বেশিরভাগই গ্রামে বসবাস করেন। 2011 সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ৪3.3 কোটি লোেক গ্রামে (68.84%) বাস করে এবং 37.7 কোটি লােক (31.16%) শহরে বাস করে। প্রাকৃতিক এবং আর্থসামাজিক নিয়ন্ত্রকের পার্থক্যের ওপর ভিত্তি করে কোথাও গােষ্ঠীবদ্ধ কোথাও রৈখিক আবার কোথাও বিক্ষিপ্ত ধরনের গ্রামীণ জনবসতি গড়ে উঠতে দেখা যায়। সাধারণভাবে সমতল ভূপ্রকৃতি ও অনুকূল জলবায়ুযুক্ত অঞ্চলে গােষ্ঠীবদ্ধ জনবসতি গড়ে ওঠে, যেমন-ভারতের সিন্ধুগঙ্গা ব্ৰহ্মপুত্র অঞ্চলের বেশিরভাগই গ্রাম্য জনবসতি। পাহাড়ি ও প্রতিকূল জলবায়ুযুক্ত অঞ্চলের জনবসতি বিক্ষিপ্ত প্রকৃতির হয়, যেমন—হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল এবং মরু অঞ্চলের বেশিরভাগ গ্রাম্য জনবসতি। যেখানে সড়কপথ ও রেলপথ গড়ে উঠেছে নদী ও সমুদ্রের উপকূল বরাবর রৈখিক ধরনের গ্রাম্য জনবসতি গড়ে উঠতে দেখা যায়।
গ্রাম ও গ্রামীণ বসতির পরিবর্তনের ধারা : আদমশুমারি 2011 অনুযায়ী বিগত এক দশকে ভারতে গ্রামের সংখ্যার বৃদ্ধি ঘটেছে। 2001 সালে যেখানে গ্রামের সংখ্যা ছিল 6,38,588 টি, সেখানে 2011 তে তা বেড়ে হয় 6,40,867 টি। 2001 সালে গ্রামীণ জনবসতি ছিল 62.19%, 2011 সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয় 68.84% 2001 থেকে 2011 সাল পর্যন্ত সময়ে গ্রামীণ জনবসতির অধিক বৃদ্ধি লক্ষ করা যায় মেঘালয়, বিহার ইত্যাদি রাজ্যগুলিতে। অন্যদিকে কেরল, গােয়া, নাগাল্যান্ড এবং সিকিম ইত্যাদি রাজ্যগুলিতে গ্রামীণ জনবসতি উল্লেখযােগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
রাজ্যভিত্তিক গ্রামীণ জনবসতির বণ্টনগত তারতম্য : ভারতবর্ষের প্রত্যেকটি রাজ্যে গ্রামীণ জনবসতির সংখ্যা ও ঘনত্ব সমান নয়। গ্রামীণ জনবসতির সংখ্যার দিক থেকে এগিয়ে থাকা রাজ্যগুলি হল যথাক্রমে উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ। সারাদেশের নিরিখে যথাক্রমে 18.6%, 11.1% এবং 7.5%। গ্রামীণ জনবসতির সংখ্যার দিক থেকে যে সমস্ত রাজ্যগুলি পিছনের সারিতে সেগুলি হল সিকিম, মিজোরাম এবং গােয়া। সারা দেশের নিরিখে যথাক্রমে 0.1%, 0.12% এবং 0.13% । মহারাষ্ট্র, গুজরাত, তামিলনাড়ু প্রভৃতি রাজ্যগুলিতে নগরায়ণ দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্রামীণ জনবসতির ঘনত্ব ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। অন্যদিকে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যসমুহে নগরায়ণের হার কম বলে গ্রামীণ জনবসতির ঘনত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে।