অরণ্যাবৃত বন্ধুর ভূপ্রাকৃতিক অঞ্চলে, অনুর্বর কৃষিক্ষেত্রে এবং প্রতিকূল জলবায়ু অঞ্চলে সাধারণত জনবসতি বিক্ষিপ্তভাবে গড়ে ওঠে। বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশের পরিবর্তন ঘটলে বিক্ষিপ্ত জনবসতি গােষ্ঠীবদ্ধ জনবসতিতে পরিণত হতে পারে। যে সমস্ত কারণে বিক্ষিপ্ত জনবসতি গােষ্ঠীবদ্ধ জনবসতিতে পরিণত হয়, সেগুলি হল一
[1] কৃষিজমির উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি : কৃষিক্ষেত্রে উন্নত বীজ, সার, কীটনাশক প্রভৃতির প্রয়ােগ, উন্নত যন্ত্রপাতির ব্যবহার এবং জলসেচ ব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে কৃষিজমির উৎপাদন ক্ষমতা বহুগুণ বেড়ে যায়। ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং জনবসতি গােষ্ঠীবদ্ধ হয়ে ওঠে। রাজস্থানে গঙ্গানগর প্রকল্পের জন্য কৃষিজমির উৎপাদন ক্ষমতা বেড়েছে। ফলে বসতির আকারেরও পরিবর্তন ঘটেছে।
[2] নতুন সম্পদের সন্ধান : মালভূমি অঞ্চলে কয়লা ও ধাতব খনিজ এবং মরুভূমি ও উপকূল অঞ্চলে খনিজ তেলের অনুসন্ধানের ফলে প্রতিকূল পরিবেশেও জনবসতির ঘনত্ব বেড়েছে। ফলে এই অঞ্চলের সীমিত সম্পদের ওপর নির্ভর করে যে বিক্ষিপ্ত জনবসতি গড়ে উঠেছিল, তা আজ গােষ্ঠীবদ্ধ বসতিতে পরিণত হয়েছে।
[3] যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি : মাটির রাস্তা পাকা পথে পরিণত হয়ে প্রধান সড়কপথ বা রেল লাইনের সাথে যুক্ত হলে রাস্তার গুরুত্ব বাড়ে এবং ব্যাবসাবাণিজ্যের উন্নতি ঘটে। ফলে বিক্ষিপ্ত বসতিগুলি গােষ্ঠীবদ্ধ বসতিতে পরিণত হয়।
[4] নিরাপত্তার অভাব : মানুষ নিরাপত্তার অভাব বােধ করলেও একত্রে বসতি স্থাপনে উৎসাহী হয়। জাতিদাঙ্গা, শত্রুর আক্রমণ, বন্য জন্তুর আক্রমণ এবং রাজনৈতিক দাঙ্গা প্রভৃতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিক্ষিপ্ত জনবসতি গােষ্ঠীবদ্ধ বসতিতে রূপান্তরিত হয়।
[5] সামাজিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য : উৎসব, মেলা প্রভৃতিতে মানুষ মিলিত হলে ভাবের আদানপ্রদান ঘটে। ফলে, মানুষের মধ্যেকার সামাজিক দূরত্ব বিলুপ্ত হলে জাতিধর্মনির্বিশেষে সকলে একত্রে বসবাস শুরু করে। বিক্ষিপ্ত বসতি গােষ্ঠীবদ্ধ বসতিতে উন্নীত হয়।
[6] আত্মীয়পরিজনের কাছে থাকার আখাংকা : আত্মীয়পরিজনের সঙ্গে মিলেমিশে বা কাছাকাছি বাস করার ইচ্ছা থেকেও বিক্ষিপ্ত জনবসতি গােষ্ঠীবদ্ধ বসতিতে পরিণত হয়।