একটি পরিকল্পনা অঞ্চল গড়ে তােলা হয় একটি বা কয়েকটি উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্যে। সাধারণভাবে যেসমস্ত উদ্দেশ্য পূরণে পরিকল্পনা অঞ্চল গড়ে তােলা হয় সেগুলি হল一
[1] দারিদ্রতা দূরীকরণ : দারিদ্রতা যে-কোনাে দেশ বা অঞ্চলের উন্নতির পথে প্রধান অন্তরায়। পরিকল্পনা অঞ্চল গঠনের মাধ্যমে দারিদ্রতা দূরীকরণের চেষ্টা করা হয়।
[2] বেকারত্ব দূরীকরণ : বেকার জনগণ কোনাে দেশ বা অঞ্চলের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ওপর বােঝা স্বরূপ। তাই বেকারত্ব দূরীকরণ পরিকল্পনা অঞ্চল গঠনের অন্যতম উদ্দেশ্য।
[3] প্রাকৃতিক বিপর্যয় মােকাবিলা : খরা, বন্যা, ভূমিকম্প, ঝড় ও সুনামি ইত্যাদি প্রাকৃতিক বিপর্যয় কোনাে দেশের ব্যাপক ক্ষতি করে। এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়গুলিকে মােকাবিলা করার জন্য পরিকল্পনা অঞ্চল গড়ে তােলা হয়।
[4] জাতীয় ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি : জাতীয় ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি করে কোনাে দেশ বা অঞ্চলের অর্থনীতির উন্নতি ঘটাতে পরিকল্পনা অঞ্চল গড়ে তােলা হয়। এক্ষেত্রে অনুন্নত ও পিছিয়ে পড়া অঞ্চলগুলিকে চিহ্নিত করে ঐ সমস্ত অঞ্চলের উন্নতির চেষ্টা করা হয়।
[5] আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করা : উন্নয়নগত দিক থেকে একটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে বৈষম্য লক্ষ করা যায়। পিছিয়ে পড়া অঞ্চলগুলিকে পরিকল্পনা অঞ্চলের অধীনে এনে উন্নয়ন ঘটানাের চেষ্টা করা হয়।
[6] শিক্ষা ও সংস্কৃতির উন্নতিকল্পে : শিক্ষা ও সংস্কৃতি উন্নতি দেশের উন্নয়নের অন্যতম নিয়ন্ত্রক। তাই শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রসার ঘটাতে পরিকল্পনা অঞ্চল গঠন করা হয়।
[7] শিল্পের উন্নতি ঘটানো : শিল্পের উন্নতি বা প্রসার ঘটানাের জন্যও পরিকল্পনা অঞ্চল গঠন করা হয়।
[8] কৃষির উন্নতি ঘটানাে : কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি, কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনা এবং কৃষি পরিকাঠামাের উন্নতি ঘটাতে পরিকল্পনা অঞ্চল গঠন করা হয়।
[9] জনসংখ্যার বৃদ্ধি রােধ : জনসংখ্যার অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি দারিদ্র্য ও বেকারত্ব বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। পরিকল্পনা অঞ্চল গঠন করে জনসংখ্যার অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি রােধ করা হয়।
[10] পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ : বর্তমান দিনে পরিবেশ দূষণ একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা। তা ছাড়া নগরায়ণ, শিল্পায়ন এবং বসতি বিস্তার প্রভৃতি কারণে বন্যপ্রাণীর সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। পরিবেশ দূষণ রােধ এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য পরিকল্পনা অঞ্চল গঠন করা হয়।
পূর্বে আলােচিত উদ্দেশ্যগুলি ছাড়াও আরও কতকগুলি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে পরিকল্পনা অঞ্চল গড়ে তােলা হয়। যেমন—[11] জীবনযাত্রার মানােন্নয়ন, [12] আয় ও সম্পদ বন্টনে ভারসাম্য রক্ষা, [13] পরিবহণ ও যােগাযােগ ব্যবস্থার উন্নতি, [14] চাহিদা ও জোগানের ভারসাম্য রক্ষা, [15] নগরায়ণ ও নাগরিক পরিসেবার উন্নতি ঘটানাে ইত্যাদি।
বৃহৎ পরিকল্পনা অঞ্চল
-
বৃহৎ স্কেলে বা বৃহৎ অঞ্চলজুড়ে এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
-
ক্রমবিন্যাসের সর্বোচ্চ স্তরে অবস্থান করে।
-
কেন্দ্রীয় সরকার এবং জাতীয় পরিকল্পনা কমিশন দ্বারা পরিচালিত হয়।
-
জাতীয় বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
-
বৃহৎ পরিকল্পনার মধ্যে ক্ষুদ্র পরিকল্পনা অবস্থান করে।
ক্ষুদ্র পরিকল্পনা অঞ্চল
-
ক্ষুদ্র স্কেলে ক্ষুদ্র অঞ্চলজুড়ে এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
-
ক্রমবিন্যাসের সর্বনিম্ন স্তরে অবস্থান করে।
-
জেলা প্রশাসন, ব্লক প্রশাসন এবং গ্রাম পঞ্চায়েত দ্বারা পরিচালিত হয়।
-
স্থানীয় বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
-
ক্ষুদ্র পরিকল্পনা অঞ্চলের মধ্যে বৃহৎ পরিকল্পনা থাকতে পারে না।