শিক্ষার ইতিহাস পর্যালােচনা করে দেখা যায় দেশ, কাল, দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং সমাজের চাহিদার ভিত্তিতে শিক্ষার লক্ষ্যের পরিবর্তন ঘটেছে। শিক্ষার সর্বজনীন লক্ষ্য নির্দিষ্ট করা সম্ভব নয়। তবে বিভিন্ন সময়ের দার্শনিক এবং শিক্ষাবিদগণের বক্তব্য থেকে শিক্ষার কয়েকটি লক্ষ্য নীচের নক্সার মাধ্যমে উল্লেখ করা হল এবং সংক্ষিপ্ত আলােচনা করা হল।
[1] জ্ঞানার্জন : শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হল জ্ঞানার্জনের শিক্ষা, যা সর্বকালেই স্বীকৃত।
[2] বৃদ্ধি ও বিকাশ : শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হল সুষ্ঠু ও বাশ্ছিতি পথে শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশকে নিয়ন্ত্রণ করা।বর্তমানে বহু শিক্ষাবিদ শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে তিনটি বিষয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরােপ করে থাকেন। এগুলি হল, ব্যক্তিগত বিকাশ, সামাজিক বিকাশ ও জাতীয় বিকাশ।
[3] অভিযোজন : অনেক শিক্ষাবিদ মনে করেন শিক্ষার লক্ষ্য হল শিশুকে সার্থকভাবে তার পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে চলার সামর্থ্যের বিকাশসাধন।
[4] বৃত্তিমূলক লক্ষ্য : সভ্যতার উপলগ্ন থেকেই দেখা যায় পিতামাতা তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ জীবনের উপযােগী করে গড়ে তােলার জন্য সক্রিয় হন। পরবর্তী সময়ে সামাজিক উপব্যবস্থা হিসেবে শিক্ষা এই দায়িত্ব গ্রহণ করে আসছে। একেই আমরা শিক্ষার বৃত্তিমূলক লক্ষ্য বলি।
[5] কৃষ্টিমূলক লক্ষ্য : প্রতিটি শিশু সমাজের সদস্য সমাজের রীতিনীতি, প্রথা, আচার-আচরণ তাকে মেনে চলতে হয়, সংরক্ষণ করতে হয় এবং পরবর্তী প্রজন্মের হাতে হস্তান্তর করতে হয়। শিক্ষাব্যবস্থা অন্যতম হাতিয়ার, যার দ্বারা এটি বাস্তবায়িত হয়। একেই শিক্ষার কৃষ্টিমূলক লক্ষ্য বলা হয়।
[6] নৈতিক লক্ষ্য : অনেক শিক্ষাবিদ মনে করেন, শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হল শিশুর নৈতিক মান উন্নত করা। প্রাচীন ভারতের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীর নৈতিক মানের ওপরে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হত। বর্তমানের শিক্ষাও এর ওপর, বিশেষ গুরুত্ব আরােপ করছে।
[7] আধ্যাত্মিক লক্ষ্য : ব্যক্তি জীবনের উদ্দেশ্য হল বিশ্বজগতের সঙ্গে একাত্ম হওয়া। প্রতিটি ব্যক্তিই বিশ্বজগতের অংশ—এটা তাকে উপলব্ধি করতে হবে। শিক্ষাই ব্যক্তিকে এই উপলব্ধিতে সাহায্য করে। একেই শিক্ষার আধ্যাত্মিক লক্ষ্য বলে।