[1] জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত শিক্ষার ব্যাপ্তি : শিক্ষা কোনাে বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি একটি ধারাবাহিক বা নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া শিশুর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকে।
[2] বিকাশের মতাে শিক্ষাও ধারাবাহিক : আধুনিককালের শিক্ষাবিদদের মতে, শিক্ষা হল শিক্ষাথীর সুপ্ত সন্তাবনাগুলির যথাযথ বিকাশের প্রক্রিয়া| বিকাশ যেমন থেমে থাকে না, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত চলতে থাকে, শিক্ষাও তেমনি কোনাে সময় থেমে থাকে না। প্রতিনিয়তই কিছু না কিছু জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা অর্জনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার প্রক্রিয়াটি আজীবন চলতে থাকে।
[3] শিক্ষা অভিজ্ঞতার নিরবচ্ছিন্ন পুনর্গঠন : প্রতিনিয়ত অভিজ্ঞতা অর্জন এবং অতীত অভিজ্ঞতার পুনর্গঠনই হল শিক্ষা। নিয়ত পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে চলার প্রক্রিয়াই হল শিক্ষা। আর এই প্রক্রিয়াটি ধারাবাহিক। এতে কোনাে ছেদ নেই।
সকলকেই জীবনের কতকগুলি নির্দিষ্ট স্তরের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। বিভিন্ন স্তরের ক্ষমতা, চাহিদা, আশা-আকাঙ্ক্ষার মধ্যে পার্থক্য আছে। এই পার্থক্যকে ভিত্তি করেই ব্যক্তিকে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে এগিয়ে যেতে হবে, তা না হলে শিক্ষা অর্থহীন। তাই বলা হয়, শিক্ষা হল একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।
নিম্নলিখিত যুক্তির ভিত্তিতে শিক্ষাকে একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়ারূপে অভিহিত করা যায়।
[1] ব্যাপক অর্থে শিক্ষা : সংকীপ অর্থে শিক্ষা হল চার দেয়ালে আবদ্ধ প্রথাগত শিক্ষা। অন্যদিকে, বৃহত্তর অর্থে শিক্ষা হল জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া এই শিক্ষা আমৃত্যু চলতে থাকে।
[2] শিক্ষা হল অভিযোজন : বেঁচে থাকার জন্য সারাজীবন বিভিন্ন পরিবেশের সঙ্গে আমাদের অভিযােজন করে বা খাপ খাইয়ে নিয়ে চলতে হয়। এই অভিযােজনের ফলে আমাদের আচরণের পরিবর্তন ঘটে। আর আচরণগত পরিবর্তনকেই শিক্ষা বলে। তাই শিক্ষা একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া।
[3] শিক্ষা হল বিকাশ : শিক্ষা একটি বিকাশমূলক প্রক্রিয়া। বিকাশ বা গুণগত পরিবর্তন যেমন ব্যক্তির আমৃত্যু চলতে থাকে, তেমনই শিক্ষা প্রক্রিয়াও জীবনব্যাপী চলতে থাকে।
[4] অভিজ্ঞতা অর্জন হল শিক্ষা : প্রতি মুহূর্তে পরিবেশের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমরা জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করি, দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়। এইগুলিই হল শিক্ষা। তাই শিক্ষা হল জীবনব্যাপী একটি প্রক্রিয়া।
আধুনিক অর্থে শিক্ষাকেও সামাজিক প্রক্রিয়ারূপে বিবেচনা করা হয়েছে। শিক্ষা-প্রক্রিয়ায় সামাজিক প্রক্রিয়ার মতাে সমস্ত বৈশিষ্ট্যই বর্তমান। এই বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
[1] সামাজিক সম্পর্ক : সমাজজীবনে একজন মানুষের সঙ্গে অপর মানুষের মিথস্ক্রিয়ার ফলে সম্পর্ক তৈরি হয়। শিক্ষাক্ষেত্রেও ছাত্রদের মধ্যে, শিক্ষকদের মধ্যে এবং ছাত্র ও শিক্ষকের মধ্যে পারস্পরিক প্রতিক্রিয়ার ফলে সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
[2] সামাজিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া : সমাজজীবনের মতাে শিক্ষাজীবনেও শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়াগুলি পর্যায়ক্রমে সম্পন্ন হয়। একের পর এক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে।
[3] সামঞ্জস্যপূর্ণতা এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্য : সামাজিক প্রতিক্রিয়াগুলির মতাে শিক্ষার্থীর শিক্ষা-প্রতিক্রিয়াগুলিও সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং লক্ষ্য-অভিমুখী।
[4] সামাজিক অগ্রগতি : সামাজিক প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে যেমন সমাজের অগ্রগতি হয়, শিক্ষার মাধ্যমেও তেমনি সমাজের অগ্রগতি ঘটে।
[5] অভিন্ন প্রক্রিয়া : সমাজের মধ্যে যেসব আন্তঃক্রিয়া-মূলক প্রক্রিয়া দেখা যায়, শিক্ষার মধ্যেও সেইসব প্রক্রিয়া লক্ষ করা যায়। যেমন—সহযােগিতা, বিরােধিতা, প্রতিযােগিতা, সহাবস্থান, সমন্বয় এবং আত্মীকরণ।
[6] সামাজিকীকরণ : শিক্ষা শিশুর সামাজিকৌকরণে সাহায্য করে। শিক্ষার মাধ্যমে শিশুর মধ্যে সামাজিক রীতিনীতি, আদবকায়দা, প্রথা, ঐতিহ্য, মূল্যবােধ, বংশপরম্পরায় সঞ্চালিত হয়। এই ভাবেই শিশু সমাজের একজন সভ্য হয়ে ওঠে।
সুতরাং, ওপরের আলােচনা থেকে এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, শিক্ষা একটি সামাজিক প্রক্রিয়া। বস্তুতপক্ষে সমাজের প্রয়ােজনেই শিক্ষাব্যবস্থা চালু হয়।