শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হল জাতীয় বিকাশ বা জাতীয় উন্নয়ন। জাতীয় উন্নয়ন বলতে বােঝায় কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, যােগাযােগ, অর্থনীতি প্রভৃতি দিক থেকে জাতির সুষম বিকাশ জাতীয় উন্নয়ন মূলত দেশের মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর নির্ভরশীল। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে জাতীয় উন্নয়ন বিশেষ জরুরি। আর এই প্রয়ােজন। মেটানাের জন্য চাই প্রকৃত শিক্ষা।
[1] জাতীয় উন্নয়নের বিষয়ে কোঠারি কমিশনের মতামত : ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে গঠিত কোঠারি কমিশন বা ভারতীয় শিক্ষা কমিশনের রিপাের্টে শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলােচনা করতে গিয়ে জাতীয় বিকাশ বা জাতীয় উন্নয়নকে শিক্ষার মূললক্ষ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই লক্ষ্য পূরণের জন্য শিক্ষার মাধ্যমে চারটি গুরুত্বপূর্ণ দিককে সমৃদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে। এই দিকগুলি হল一
-
জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি করা,
-
সামাজিক ও জাতীয় সংহতি স্থাপন করা,
-
আধুনিক ভাবধারার দ্রুত পরিবর্তন করা এবং
-
সামাজিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক মূল্যবােধ জাগ্রত করা।
[2] জাতীয় বিকাশের তাৎপর্য বা গুরুত্ব : প্রকৃত অর্থে জাতীয় বিকাশ বলতে বােঝায় ব্যক্তি ও সমাজের সমন্বিত বিকাশ। শিক্ষার চূড়ান্ত লক্ষ্য হল ব্যক্তি ও সমাজের বিকাশের মধ্য দিয়ে জাতির উন্নয়ন। জাতীয় উন্নয়ন বলতে সমাজের বিশেষ কোনাে শ্রেণির উন্নয়ন বােঝায় না। সমাজের সকল স্তরের উন্নয়ন ঘটলেই তাকে জাতীয় উন্নয়ন বলে। জাতীয় উন্নয়ন ব্যক্তি ও সমাজের উন্নয়নকে নিশ্চিত করে, ব্যক্তির চাহিদা ও সমাজের প্রত্যাশাকে পূরণ করে এবং বহির্জগতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে সুবিধা-অসুবিধায় পরস্পরকে সাহায্য করে।
[3] জাতীয় বিকাশের ক্ষেত্রে শিক্ষার ভূমিকা : জাতীয় বিকাশের ক্ষেত্রে শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জাতীয় বিকাশ ও উন্নয়নের জন্য সবার আগে প্রয়ােজন শিক্ষার বিকাশ, উন্নত পাঠক্রম, উৎপাদনমুখী শিক্ষা, নৈতিক শিক্ষা, ধর্মনিরপেক্ষতার শিক্ষা প্রভৃতি। জাতীয় বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল মানবসম্পদের উন্নয়ন। প্রকৃতপক্ষে মানবসম্পদের উন্নয়ন ও জাতীয় বিকাশ পরস্পর নির্ভরশীল। এই উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষা বিশেষভাবে সাহায্য করে। এইভাবে শিক্ষা জাতীয় লক্ষ্যপূর্তির সহায়ক ও সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মােকাবিলার অন্যতম অস্ত্র হয়ে ওঠে।
ওপরের আলােচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, ব্যক্তি ও সমাজের বিকাশের মধ্য দিয়েই জাতির বিকাশ তথা উন্নয়ন ঘটে যা শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য।