সামাজিক বিকাশ বলতে বােঝায় শিশুকে সামাজিক করে তােলা—শিশুর মধ্যে সামাজিক গুপগুলির বিকাশসাধন, সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে শিশুকে অবহিত করা ইত্যাদি। এই সমস্ত ব্যবস্থাকে বাস্তবায়িত করতে শিক্ষা অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করে। এটাই সামাজিক বিকাশে শিক্ষার ভূমিকা। নীচে এ সম্পর্কে আলােচনা করা হল一
[1] সামাজিক প্রক্রিয়াগুলি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে সাহায্য করা : বৃহত্তর সমাজে বাস করতে গিয়ে যেমন ব্যক্তি সামাজিক প্রক্রিয়াগুলি আয়ত্ত করে, বিদ্যালয়ের মধ্যে পঠনপাঠন ও অন্যান্য কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীও সামাজিক প্রক্রিয়া আয়ত্ত করে। এই সামাজিক প্রক্রিয়া আয়ত্তীকরণ সামাজিক বিকাশের অন্যতম লক্ষ্য।
[2] সামাজিক সমস্যা চিহ্নিত করা ও তার সমাধান : সামাজিক সমস্যা প্রতিরােধে ও প্রতিকারে শিশুকে দক্ষ করে তােলা শিক্ষার অন্যতম সামাজিক লক্ষ্য।
[3] সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রসার ঘটানাে : শিক্ষার কাজ হল শিক্ষার্থীর মধ্যে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রসার ঘটানাে। এই দৃষ্টিভঙ্গি ব্যক্তিকে একদিকে যেমন সামাজিক কাজে দক্ষ করে তােলে, অন্যদিকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকতা বােধের বিকাশে সাহায্য করে।
[4] সামাজিক চেতনা বৃদ্ধি করা : শিশু বিদ্যালয়ে আসার পর সে বিভিন্ন সামাজিক পটভূমি থেকে আসা সহপাঠীদের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার সুযােগ পায়। তার সামাজিক চেতনা বৃদ্ধি পায়।
[5] সামাজিক দায়িত্বপালনে সহায়তা করা : বিদ্যালয়ে পড়াশােনার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করে, এর পাশাপাশি তার চিন্তাশক্তি, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা এবং অন্য মানসিক সামর্থ্যগুলি অনুশীলনের মধ্য দিয়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এসবই শিক্ষার্থীকে সামাজিক দায়িত্বপালনে সহায়তা করে।
[6] সামাজিকীকরণ : সমাজের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে শিক্ষার্থী সামাজিক আদবকায়দা, সামাজিক রীতিনীতি, নিয়মশৃঙ্খলা, দায়দায়িত্ব সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করে এবং ব্যক্তিজীবনের আচার-আচরণে তা প্রতিফলিত হয়। একেই সামাজিকীকরণ বলে। এই সামাজিকীকরণ শিক্ষার সামাজিক বিকাশের মধ্যে গণ্য হয় যা শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য।
ওপরের আলােচনা থেকে বলা যায়, সমাজের প্রচলিত রীতিনীতি, আচার-অনুষ্ঠান প্রভৃতি ব্যক্তির সামাজিক চেতনা ও উন্নত মূল্যবােধ গঠনে এবং সামাজিক দায়িত্বপালনে বিশেষভাবে সাহায্য করে। এই কাজগুলি মূলত শিক্ষার মাধ্যমেই ঘটে।