“শিক্ষার লক্ষ্য ব্যক্তিগত বিকাশ”—এই বক্তব্যে ব্যক্তিকেই শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। ব্যক্তির বিকাশকে কেন্দ্র করেই শিক্ষার কর্মসূচি পরিকল্পিত এবং বাস্তবায়িত হয়। এই মতবাদ অনুযায়ী আগে ব্যক্তি, পরে সমাজ। ব্যক্তির বিকাশ ঘটলেই সমাজের বিকাশ ঘটবে।
নান, রুশাে, বাট্রান্ড রাসেল, বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ প্রমুখ শিক্ষাবিদ শিক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তির পূর্ণ বিকাশের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।
[1] ব্যক্তিগত বিকাশের গুরুত্ব : শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে ব্যক্তিগত বিকাশ খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। বর্তমান শিক্ষা পরিকল্পনায় ব্যক্তির দৈহিক বিকাশের জন্য পাঠক্রমে শরীরচর্চা, ব্যায়াম প্রভৃতি সহপাঠক্রমিক কাজকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। শিক্ষার্থীর মানসিক, বৌদ্ধিক, প্রাক্ষোভিক, সামাজিক, নৈতিক প্রভৃতি দিকের বিকাশের জন্য বিভিন্ন ধরনের বিষয়কে পাঠক্রমে স্থান দেওয়া হয়।
[2] ব্যক্তিগত বিকাশে শিক্ষার ভূমিকা : ব্যক্তিগত বিকাশের ক্ষেত্রে শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে শিক্ষার ভূমিকা হল—
-
ব্যক্তির সুপ্ত সম্ভাবনাগুলিকে শনাক্ত করা এবং তার যথাযথ বিকাশে সহায়তা করা।
-
পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে ব্যক্তির সংযােগসাধন ও সামঞ্জস্যবিধান করা।
-
ব্যক্তিকে বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জনে সাহায্য করা।
-
ব্যক্তির চিন্তাশক্তি ও সৃজনশীলতা বিকাশে এবং প্রকাশে সাহায্য করা।
-
বিভিন্ন সামাজিক কাজের সঙ্গে ব্যক্তিকে যুক্ত করা।
-
ব্যক্তিকে সমাজের উপযুক্ত সদস্যে পরিণত করা।
-
ব্যক্তিকে দেশের উৎপাদনশীলতার সঙ্গে যুক্ত করা।
-
সর্বোপরি, ব্যক্তিকে প্রকৃত মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে সাহায্য করা।
শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য অবশ্যই ব্যক্তিগত বিকাশ। তবে এর ওপর অত্যধিক গুরুত্ব দিলে ব্যক্তি স্বার্থপর ও আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠবে, সামাজিক প্রত্যাশাগুলি পূরণ হবে না, সমাজ পিছিয়ে পড়বে, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হবে। ব্যক্তির ওপরেও তার অবাঞ্ছিত প্রভাব পড়বে। তাই কোনাে একটি বিশেষ দিককে প্রাধান্য না দিয়ে ব্যক্তির সমন্বিত এবং সুসংহত বিকাশসাধনই হবে শিক্ষার চূড়ান্ত লক্ষ্য।