পাঠক্রমের গতানুগতিক ধারণা
-
লক্ষ্য হল সংকীর্ণ। শিক্ষার্থীর বৌদ্ধিক বা মানসিক বিকাশের ওপর নজর দেওয়া হয়।
-
এই ধারণা অনুযায়ী পাঠক্রমের মূলভিত্তি হল মানসিক শৃঙ্খলাবাদ। মনে করা হয়, মানসিক বিকাশই জীবনের সমস্ত সমস্যার সমাধান করবে। তাই মানসিক বিকাশে সহায়ক বিষয়বস্তু নির্বাচন করা হয়।
-
এই ধারণা অনুযায়ী পাঠক্রমের বিষয়বস্তু কেবল শ্রেণিকক্ষের মধ্যেই অনুশীলনযােগ্য।
-
এই ধারণা অনুযায়ী পাঠক্রম অপরিবর্তনীয়।
-
গতানুগতিক পাঠক্রমে বিষয় এবং শিক্ষকের ওপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। শিক্ষার্থী অবহেলিত হয়।
পাঠক্রমের আধুনিক ধারণা
-
লক্ষ্য হল বিস্তৃত। শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশের দিকে নজর দেওয়া হয়।
-
পাঠক্রমের ভিত্তি হল বিজ্ঞানসম্মত তথ্য। তাই শিক্ষাথীর শারীরিক, প্রাক্ষোভিক, সামাজিক, নৈতিক ইত্যাদি সব ধরনের বিকাশের উপযােগী বিষয়বস্তু নির্বাচন করা হয়।
-
এই ধারণা অনুযায়ী পাঠক্রমের বিষয়বস্তু শ্রেণিকক্ষের মধ্যে এবং বাইরে অর্থাৎ সর্বত্রই অনুশীলনযােগ্য।
-
এই ধারণা অনুযায়ী পাঠক্রম পরিবর্তনশীল।
-
আধুনিক পাঠক্রমে শিক্ষার্থী, বিষয়, শিক্ষক ও কমিউনিটির ওপর সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীর বিকাশের স্তর, তার চাহিদা ও আগ্রহ এখানে যথেষ্ট গুরুত্ব পায়।
পাঠক্রম প্রণয়নের সময় যেসব সুযােগসুবিধার কথা বিবেচনা করা হয় তা নীচে আলােচনা করা হল一
(১) প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা : পাঠক্রম প্রণয়নের সময় যে বিষয়গুলির প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়ােজন তার মধ্যে অন্যতম হল প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা। প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা বলতে এখানে। বােঝানাে হয়েছে, যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পাঠক্রমটি সঞ্চালন করা হবে, সেই প্রতিষ্ঠানে উপযুক্ত সুযােগসুবিধা আছে কি না। প্রতিষ্ঠানের পরিকাঠামাে এবং শিক্ষার্থীদের আর্থসামাজিক পরিবেশ বিবেচনা না করে পাঠক্রম চালু করা উচিত নয়।
(২) প্রয়োজনীয় সময়তালিকা : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট সময়সূচির কথা মনে রেখে পাঠক্রম প্রণয়ন করতে হবে। প্রয়ােজনীয় সময় যদি রাখা না হয়, তাহলে সময়ের অভাবে পাঠক্রম সমাপ্ত করা যাবে না। ফলে শিক্ষার উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হবে না। শিক্ষার্থীরাও ওই পাঠক্রম থেকে প্রত্যাশিতভাবে উপকৃত হবে না।
(৩) শিক্ষার উপকরণ : পাঠক্রম প্রণয়নের সময় শিক্ষা-উপকরণ ব্যবহারের সুযােগসুবিধার প্রতি নজর দিতে হবে। তাই বিভিন্ন শ্রেণির বিভিন্ন বিষয়ের পাঠক্রমে এমন সব বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যাতে পাঠদানের জন্য প্রয়ােজনীয় শিক্ষাসহায়ক উপকরণ সহজেই পাওয়া যায় বা শিক্ষকগণ নিজেরাই সেগুলি প্রস্তুত করতে পারেন।
(৪) তথ্য সংগ্রহের মাধ্যম : পাঠক্রম প্রণয়নের সময় সম্ভাব্য সুযােগসুবিধা হিসেবে তথ্য সংগ্রহের বিষয়টিকেও প্রাধান্য দিতে হবে। পাঠক্রমে যদি এমন বিষয় থাকে যা বর্তমানে প্রচলিত পাঠ্যপুস্তকে বা অন্যান্য বৈদ্যুতিন মাধ্যমে উপস্থাপনের সুযােগ কম, সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অসুবিধা হয়। ফলে পাঠক্রম বাস্তবায়িত হওয়ার পথে বাধা পড়ে।
(৫) শিক্ষকের যোগ্যতা : যে-কোনাে পাঠক্রমের সাফল্য নির্ভর করে উপযুক্ত শিক্ষাদানের ওপর। শিক্ষাদানের কাজ করেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। উপযুক্ত যােগ্যতাসম্পন্ন এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের অভাব থাকলে শিক্ষাদানের কাজটি ব্যাহত হয়। পাঠক্রম প্রণয়নকালে সম্ভাব্য শিক্ষকের যােগ্যতাও বিচার করা উচিত।
(৬) ব্যাবহারিক উপযোগিতা : সুযােগসুবিধার সহজলভ্যতার দিকে দৃষ্টি রেখে পাঠক্রম প্রণয়ন করার সময় অন্য যে বিষয়টির ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া উচিত তা হল ব্যাবহারিক উপযােগিতা’। পাঠক্রমে সেই সব বিষয়গুলিকে স্থান দিতে হবে যেগুলির বর্তমান সমাজে ব্যাবহারিক উপযােগিতা রয়েছে। ব্যাবহারিক উপযােগিতা না থাকলে, কেউই সেই পাঠক্রম গ্রহণে আগ্রহী হবে না। ফলে পাঠক্রমটি ব্যর্থ হবে।
ওপরের আলােচনা থেকে দেখা যাচ্ছে, পাঠক্রম প্রণয়ন- কালে প্রাতিষ্ঠানিক সুযােগ, সময়তালিকা, শিক্ষার উপকরণ, শিক্ষকের যােগ্যতা, ব্যাবহারিক সুযােগসুবিধা প্রভৃতি বিবেচনা করা প্রয়ােজন, না হলে পাঠক্রম প্রণয়নের উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হবে।