শিক্ষাবিজ্ঞানীরা সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি রূপায়ণের ক্ষেত্রে কয়েকটি উদ্দেশ্যের কথা বলেছেন। নীচে সেসব উদ্দেশ্য সম্পর্কে সংক্ষেপে আলােচনা করা হল一
(১) দৈহিক বিকাশ : শরীরচর্চা, বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলাে, বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজ, ব্রতচারী, NCC প্রশিক্ষণ, NSS-এর বিভিন্ন কর্মসূচি, স্কাউটিং ইত্যাদি সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির অন্তর্ভুক্ত। এগুলি নিয়মিত চর্চার ফলে শিক্ষার্থীর শারীরিক বিকাশ ঘটে, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পুষ্ট হয়, দেহের প্রতিটি অংশে রক্ত সঞ্চালিত হয়, দেহের বৃদ্ধি ও ঘুম ভালাে হয়। ফলে শিক্ষার্থী সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়, যা যে-কোনাে মানুষের কাছেই অতি মূল্যবান সম্পদ।
(২) মানসিক বিকাশ : সুস্থ দেহেই থাকে সুস্থ মন। দৈহিক বিকাশ যথাযথ হলে তার প্রভাব মনের ওপর পড়ে। মনও পরিণত হয়। বিভিন্ন প্রকার সহপাঠক্রমিক কাজ, যেমন খেলাধুলাে, গানবাজনা, আবৃত্তি, অভিনয়, বিতর্ক, আলােচনা, সেমিনার, পত্রিকা প্রকাশনা, আলপনা দেওয়া, চিত্রাঙ্কন প্রভৃতি শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর যথাযথ মানসিক বিকাশ শিক্ষাপ্রহণকেও ত্বরান্বিত করে।
(৩) সামাজিক বিকাশ : শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসে শিক্ষালাভের জন্য। বিদ্যালয়ে বিভিন্ন সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির মাধ্যমে। (যেমন-অভিনয়, যৌথ প্রােজেক্ট, সমাজসেবামূলক কাজ, NCC, NSS প্রভৃতি) শিক্ষার্থীকে সমাজজীবনের উপযােগী করে তােলা হয়। এইভাবে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মধ্যে সামাজিক বিকাশ ঘটে।
(৪) সহযােগিতার মনােভাব গঠন : বিদ্যালয় দ্বারা সংগঠিত বিভিন্ন সহপাঠক্রমিক কাজে অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে সহপাঠীদের মধ্যে পারস্পরিক বােঝাপড়া গড়ে ওঠে, যা শিক্ষার্থীর সমাজজীবনের পক্ষে অপরিহার্য।
(৫) আত্মবিশ্বাস গঠন : সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে, তথা শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস গড়ে তােলা।
(৬) চাহিদাভিত্তিক বিকাশ : বিভিন্ন ধরনের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির মধ্যে দিয়ে শিশুর অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ হওয়ার সুযােগ পায়।
(৭) শৃঙ্খলা গঠন : সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির মধ্যে দিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত শৃঙ্খলাবােধ গড়ে ওঠার সুযােগ ঘটে।
(৮) শিক্ষামূলক নির্দেশনা : শিক্ষামূলক নির্দেশনায় সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির মধ্য দিয়ে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পছন্দ, আগ্রহ, দক্ষতা প্রভৃতি দিককে নির্দিষ্ট করতে পারেন এবং সেই অনুযায়ী শিক্ষার্থীর উপযােগী শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ বৃত্তির পরিকল্পনা করা হয়ে থাকে।
(৯) সেবামূলক মনােভাব গঠন: সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি শিক্ষার্থীর মধ্যে সেবামূলক মনােভাব গড়ে তােলে। স্কাউট, ব্রতচারী, সেন্ট জনস্ অ্যাম্বুলেন্স কোর্স প্রভৃতি সহপাঠক্রমিক কাজে অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে সেবামূলক মনােভাব অর্জন করে।
(১০) বিদ্যালয়ের প্রতি আকর্ষণ : শিক্ষার্থীরা প্রায়শই বিদ্যালয়ের চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ শ্রেণিশিক্ষায় ক্লান্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু বৈচিত্র্যময় সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি সেই একঘেয়েমি কাটিয়ে তাদের মধ্যে বিদ্যালয় তথা বিদ্যালয়ের কর্মসূচির প্রতি প্রবল আগ্রহ সৃষ্টি করে।
(১১) অবসরযাপনের শিক্ষা : ছেলেবেলা থেকে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সহপাঠক্রমিক কাজে অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে যেসব বিষয়ে পারদর্শী হয়ে ওঠে, সেই বিষয়গুলি ভবিষ্যৎ জীবনেও তাদের অবসর সময় গঠনমূলকভাবে কাটাতে সাহায্য করে।
(১২) গণতান্ত্রিক চেতনার বিকাশ : বিভিন্ন ধরনের সহপাঠক্রমিক কাজের মধ্যে দিয়ে শিক্ষার্থীরা সকলের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে ও অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে শেখে। এই গুণগুলি তাদের মধ্যে গণতান্ত্রিক চেতনার বিকাশে সাহায্য করে।
(১৩) উদ্দীপনামূলক ক্রিয়াশীলতা: সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে উদ্দীপনামূলক ক্রিয়াশীলতাও আনে।
(১৪) সুস্থ অনুভূতির বিকাশ : বিভিন্ন প্রকার সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি, যেমন—সাহিত্য, শিল্প, গানবাজনা ও অন্যান্য নান্দনিক ক্রিয়াকলাপ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুস্থ অনুভূতির বিকাশ ঘটায়।
(১৫) চরিত্র গঠন : শিক্ষার্থীরা নিয়মিত সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিলে তাদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের বাঞ্ছিত মূল্যবােধ গড়ে ওঠে, যা তাদের চারিত্রিক বিকাশের পক্ষে সহায়ক।