দূরদর্শন যতই জনপ্রিয় হােক না কেন, এর কয়েকটি সীমাবদ্ধতাও লক্ষ করা যায়। নীচে সে বিষয়ে আলােচনা করা হল一
(১) বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের প্রাধান্য: বর্তমানে দূরদর্শনে শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের চেয়ে বিনােদনমূলক অনুষ্ঠান অনেক বেশি সংখ্যায় সম্প্রচারিত হয়ে থাকে। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ওইসব চিত্তাকর্ষক অনুষ্ঠানের প্রতি এক ধরনের নেশার সৃষ্টি হয়, ফলে তাদের লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ ও মনােযােগ বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
(২) ব্যয়বহুল্য: দূরদর্শন যন্ত্র বা টিভির দাম এখনও বহু মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। আমাদের দেশের ৪০ শতাংশ মানুষ গ্রামাঞ্চলে বসবাস করে এবং এদের একটা বড়াে। অংশ দারিদ্র্যসীমার নীচে অবস্থিত, তাদের পক্ষে অর্থ ব্যয় করে এই যন্ত্র কেনা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
(৩) বিদ্যুতের অভাব: গ্রামেগঞ্জে অনেক জায়গাতেই এখনও বিদ্যুৎ পৌঁছােয়নি। ফলে সেখানে দূরদর্শনের অনুষ্ঠান দেখা যায় না।
(৪) দ্বিমুখী অনুষ্ঠানের অভাব: দূরদর্শনের অধিকাংশ অনুষ্ঠানে দ্বিমুখিতা বজায় থাকে না।
(৫) কেবল অপারেটরদের স্বেচ্ছাচারিতা: কেবল অপারেটররা বাণিজ্যিক স্বার্থে গ্রাহকদের অসুবিধার সৃষ্টি করছে। ফলে বছু গ্রাহকের মধ্যে দূরদর্শন সম্পর্কে অনীহা দেখা দিচ্ছে।
(৬) শিশুদের ওপর বিরূপ প্রভাব: শিশুরা অনুকরণপ্রিয় হওয়ায় তারা দূরদর্শনে প্রচারিত বিভিন্ন দুঃসাহসিক কাজের অনুসরণ করতে যায়। বস্তুক্ষেত্রেই তাদের প্রাণসংশয়, এমনকি প্রাণহানি পর্যন্ত ঘটে থাকে।
(৭) কর্মনাশা ভূমিকা: দূরদর্শন যেহেতু দৃশ্যাব্য মাধ্যম, তাই দূরদর্শনের অনুষ্ঠান উপভােগ করার সময় অন্য কোনাে কাজ করা সম্ভব নয়। এতে কাজের সময় কমে যায়।
(১) UNICEF-এর রিপোর্ট: এই রিপাের্টে বলা হয়েছে-
-
দূরদর্শনে অনুষ্ঠান দেখার জন্য 57 শতাংশ অভিভাবক বাড়ির ছেলেমেয়েদের হােমওয়ার্কে সাহায্য করতে পারছেন না।
-
দূরদর্শনের প্রতি আকর্ষণ বা ঝোঁক বাড়ায় 33 থেকে 55 শতাংশ ছাত্রছাত্রীর পড়াশােনার প্রতি অনীহা এসে গেছে।
-
45 শতাংশ কিশােরকিশােরীর সৃজনশীল ক্ষমতা কমে গেছে। তাদের মানসিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে।
(১) আর. জি. মার্গের রিপাের্ট: এই রিপাের্টে বলা হয়েছে ৯৮ শতাংশ ছেলেমেয়ে দূরদর্শনের অনুষ্ঠান দেখার জন্য খেলাধুলাের প্রতি অনাসক্ত হয়েছে।
ওপরের আলােচনা থেকে বলা যায় যে, দূরদর্শন গণশিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলেও এটি সম্পূর্ণভাবে ত্রুটিমুক্ত নয়। শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান কমিয়ে বিনােদন এবং বিজ্ঞাপনমূলক অনুষ্ঠানের প্রচার ছাত্রসমাজে কুপ্রভাব ফেলছে। দূরদর্শন শিক্ষার্থী ও জনগণের জন্য শিক্ষা প্রসারের ওপর জোর দিলে তা সমাজের পক্ষে মঙ্গলজনক হবে।