শিক্ষার প্রসারে দূরদর্শনের একটি ইতিবাচক ভূমিকা লক্ষ করা যায়। নীচে এই ভূমিকার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে সংক্ষেপে আলােচনা করা হল一
(১) বাস্তবধর্মী শিক্ষাদান: দূরদর্শন হল এমন একটি গণমাধ্যম যেখানে বাস্তবের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়।
(২) সর্বজনীন গণমাধ্যম: দূরদর্শন অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার এমন একটি মাধ্যম যা সমাজের সব স্তরের শিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত মানুষের কাছে গ্রহণযােগ্য। নিরক্ষর জনগণ (যা আমাদের দেশে বহু আছে) দূরদর্শনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ছবি দেখে এবং কথাবার্তা বা আলাপ-আলােচনা শুনে বিভিন্ন বিষয়ে অবহিত এবং আকৃষ্ট হতে পারে।
(৩) দর্শন ও শ্রবণ-নির্ভর মাধ্যম: দূরদর্শন হল দর্শন এবং শ্রবণ-নির্ভর মাধ্যম। এই মাধ্যম অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করেছে, কারণ এটি একই সঙ্গে মানুষের সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী দুটি ইন্দ্রিয়কে কার্যকরী করে তােলে। তাই শিক্ষাক্ষেত্রে এই মাধ্যমের গুরুত্ব অনেক বেশি।
(৪) দ্বিমুখী শিক্ষমাধ্যম: বর্তমানে দূরদর্শনকে শিক্ষার একটি দ্বিমুখী মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। শ্রেণিকক্ষে যেমন ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন বিষয় না বুঝলে শিক্ষকশিক্ষিকার কাছে জিজ্ঞাসা করে সেই বিষয় জেনে নেয়, তেমনি বিভিন্ন শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান সম্প্রচারকালে শিক্ষার্থীরা টেলিফোনের মাধ্যমে তাদের প্রশ্ন জানাতে পারে।
(৫) নান্দনিক রুচি বিকাশে সহায়তা: দূরদর্শন জনগণের মধ্যে নান্দনিক রুচির বিকাশ ঘটায়। দূরদর্শনের বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান দেখতে দেখতে মানুষের মধ্যে সুন্দর রুচি গড়ে ওঠে।
(৬) সংস্কৃতির ধারক ও বাহক: কোনাে দেশের সংস্কৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করা ও বাঁচিয়ে রাখায় দূরদর্শনের উল্লেখযােগ্য ভূমিকা রয়েছে। অতীত দিনের বহু সিনেমা, নাটক, গানকে দূরদর্শনে বিশেষ উপায়ে সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা আছে।
(৭) জনমত গঠন: বর্তমানে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এস এম এস-এ দর্শকের মতামত চায় দূরদর্শন| তাই জনমত গঠনের ক্ষেত্রে দূরদর্শনের অত্যন্ত শক্তিশালী ও কার্যকরী ভূমিকাকে অস্বীকার করা যায় না।
(৮) বৈচিত্র্যপূর্ণ অনুষ্ঠান প্রচার: কেবল নাটক, গান, সিনেমা বা সংবাদ নয়—এখন দূরদর্শন শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সের উপযােগী ভিন্ন ভিন্ন অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে।
(৯) কেবল লাইন-এর সংযােগ: বর্তমানে দূরদর্শন যন্ত্রের সঙ্গে কেবল লাইন-এর সংযােগ ঘটানাের ফলে বিভিন্ন বেসরকারি চ্যানেলের অনুষ্ঠান দেখার সুযােগ ঘটেছে। সারা বিশ্বের খবরাখবর, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযােগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
(১০) দূরশিক্ষা: বর্তমানে দূরশিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। এই শিক্ষায় দূরদর্শনের ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য।
(১১) বৃত্তিকালীন শিক্ষা: বৃত্তিকালীন শিক্ষার প্রসারে দূরদর্শনের ব্যবহার বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
(১২) মানসিক বিকাশে সহায়তা: দূরদর্শন জনগণের মানসিক বিকাশে সহায়তা করে যা তাদের বিচার-বিশ্লেষণের ক্ষমতা বাড়ায়। ফলে আমরা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারি।
(১৩) সুষ্ঠু অবকাশ সময় যাপনের মাধ্যম: দূরদর্শন সুষ্ঠু এবং স্বাস্থ্যসম্মতভাবে অবকাশ সময় যাপনের একটি উপায়। দূরদর্শন আবালবৃদ্ধবনিতার কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃত।